ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এক রোগীর অভিজ্ঞতা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:৪৩ পিএম, ১ আগস্ট ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৪:২৮ পিএম, ১ আগস্ট ২০১৯ বৃহস্পতিবার

ডেঙ্গু। এক আতঙ্কের নাম। তবে ঢাকাবাসীদের জন্য চরম আতঙ্কের হলেও ইতিমধ্যে ছড়িয়েছে দেশের সব জেলায়। ডেঙ্গুজ্বর একটি এডিস মশাবাহিত রোগ।

এটি গ্রীষ্মকালে বেশি ছড়ালেও বাংলাদেশে বর্ষার সাথে সাথে বাড়ে ডেঙ্গুর আশঙ্কা। সে আশঙ্কায় আমিও ছিলাম। কিন্তু এ বছর বর্ষা শুরু হওয়ার পূর্বেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে বহু মানুষ।

গত জুন মাসের শেষদিকে আমার রুমমেট ইজমু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার শরীরে জ্বর আর চরম ব্যাথা অনুভব হচ্ছিল। ব্যাথার যন্ত্রণায় সে ঘুমাতে পারত না। শরীরের বিভিন্নস্থানে লালছে বর্ণ ধারণ করে।

তখন গণমাধ্যমে মাঝে মাঝে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এমন খবর শুনতাম। ইজমুও যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে তা কোনোভাবেই বোঝার সুযোগ ছিল না। কেননা সে মানসিকভাবে বেশ দৃঢ় ছিল। তবে ক্রমশই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করেন হাসিব বিল্লাহ (তার চাচা)।

রক্ত পরীক্ষায় তার ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। ইতিমধ্যে তার প্লাটিলেট কাউন্ট আশঙ্কাজনক হারে কমে গিয়েছিল। এমনকি তার অণ্ডকোষ ফুলে গিয়েছিল। ডাক্তার তাকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছিলেন। 

কয়েকদিন পর পারিবারিক প্রয়োজনে দুইদিনের জন্য আমি গ্রামের বাড়িতে গেলাম। ঢাকায় আসতে আসতে রাত প্রায় ২টা অতিক্রম করেছে। ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরদিন সকালে (১৭ জুলাই) উঠে ইউনিভার্সিটিতে গেলাম। ক্লাস শেষে অফিসে গেলাম। অফিস থেকে বের হবার প্রায় ঘণ্টাখানেক পূর্বে  (সাড়ে আটটা) গোটা শরীরে ব্যাথা অনুভব করছিলাম। ক্রমশই ব্যাথা বাড়ছে।  চোখের  পিছনের অংশে আর মাথার চারপাশ চরম ব্যাথা।

কয়েক মিনিটের মধ্যেই শরীরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। দ্রুত অফিস থেকে বের হয়ে গেলাম। পথেই ভীষণ জ্বর। হাঁটতে পারছিলাম না। হাঁটু ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছিলাম। শরীরে ডেঙ্গুর লক্ষণ মনে হচ্ছে। বাসায় যাওয়ার সময় খাবার স্যালাইন নিয়ে গেলাম। প্রচুর পানি খাওয়া শুরু করলাম। ওই রাতে দ্রুত ঘুমানোর চেষ্টা করেও এক মিনিটও ঘুমোতে পারিনি। 

পরের দিন সকালে শাহবাগে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে গেলাম। সেখানে গিয়ে পড়লাম আরেক বিপত্তিতে। শরীরে ভীষণ ব্যাথা নিয়ে নিয়ম মানতেই টিকেট কাউন্টারের লাইনে দাঁড়ালাম। টিকেট নিলাম। এবার নতুন ভবনের ২য় তলায় ডাক্তার দেখাতে লাইনে দাঁড়ালাম। শুরু থেকে যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম, প্রায় ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও ঠিক ওই স্থানেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।

কেননা লাইনে পাশেই আরেকটা লাইন সৃষ্টি হয়েছে। ওই লাইনের সবাই নাকি হাসপাতাল স্টাফদের আত্বীয়-স্বজন। কিন্তু বাস্তবে টাকার বিনিময়ে লাইনের পাশে নতুন লাইন সৃষ্টি করে মূল লাইনের সবাইকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। এদিকে শরীরে অস্বস্তির মাত্রা চরম পর্যায়ে। দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। হাঁটু ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছিলাম।  

প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর ডাক্তার দেখাতে পেরেছিলাম। ওই সময় মনে হচ্ছিল হয়তো আমি বাঁচবো না। এখনই মারা যাব। শরীরের ব্যাথা আর সহ্য করতে পারছিলাম না। ডাক্তার দেখানোর পর আবার দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। এদিকে তখন প্রায় বেলা ১টা অতিক্রম করেছে। রিপোর্ট আজ আর পাওয়া যাবে না।

ডেঙ্গু হয়েছে কিনা তাও বুঝতে পারব না। তাই পরীক্ষা না করেই হাসপাতাল থেকে চলে আসি। একটি প্রাইভেট হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। প্রায় ২৪ ঘণ্টা হাসপাতাল ভর্তি থাকার পর থেকে বাড়ি চলে যাই। ওই থেকে পাঁচদিন আমি ঘুমাতে পারিনি। থেমে থেমেই শরীরে জ্বর উঠছিল।

তবে খুব সচেতনতার সাথে লেবু, ডাবের পানি ও খাবার স্যালাইন নিয়মিতই গ্রহণ করেছি। তরল জাতীয় খাবার বেশি গ্রহণ করেছি। বেশিরভাগ সময়ই মশারির ভেতরেই ছিলাম। খুব সচেতন ছিলাম কোনোভাবে যেন রক্তে প্লাটিলেট কাউন্ট না কমে। কয়েকবার প্লাটিলেট কাউন্ট পরীক্ষা করেছি। আটদিন পর জ্বর আর শরীর ব্যাথা কমে আসলো। তবে শারীরিক দুর্বলতা এখনো আছে। 

মহান আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া ভাইরাসজনিত ডেঙ্গুজ্বর থেকে আমাকে সুস্থতা দান করেছেন।  ডেঙ্গুজ্বর হলে যে কী কষ্ট তা একমাত্র সেই বোঝে যার হয়। আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন এই জ্বরে আর কেউ না পড়ে। এটাই আমার চাওয়া। ভালো থাকুক পৃথিবীর সব মানুষ।

লেখক
বেলাল হোসেন রাজু 
সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী