প্লেনের দরজা খুলে ক্যামব্রিজ ছাত্রীর ঝাঁপ, অতঃপর...
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:০৮ পিএম, ১ আগস্ট ২০১৯ বৃহস্পতিবার
গবেষণা প্রজেক্টে ব্যর্থ হয়ে প্লেনের দরজা খুলে ঝাঁপিয়ে পড়েন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। এতে মৃত্যু হয়েছে আলানা কাটল্যান্ড নামে ১৯ বছর বয়সী ওই ছাত্রীর। গত ২৫ জুলাই মাদাগাস্কার ভ্রমণের সময় ৩,৬০০ ফুট উপর থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি।
ব্রিটেনের নাগরিক আলানা একটি সেসনা প্লেনে (ছোট বিমান) করে বৃটেন থেকে মাদাগাস্কার ভ্রমণ করছিলেন সুন্দরী আলানা। তবে তাঁর মৃত দেহ এখনও উদ্ধার করা যায়নি বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, আলানা প্লেনটি থেকে লাফিয়ে পড়ার আগে সহযাত্রী ব্রিটিশ পর্যটক রুথ জনসনের সঙ্গে ধস্তাধস্তিও করেছিলেন। এসময় মিনিট পাঁচেকের জন্য আলানাকে প্লেনে আটকে রাখার চেষ্টাও করেছিলেন জনসন।
সে সময় ছোট্ট প্লেনটি বাতাসে কাঁপছিল। জনসন এবং পাইলট আলানার পা জড়িয়ে ধরে তাকে ঝাঁপিয়ে পড়া থেকে আটকাতে চেয়েছিলেন।
স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, মেয়েটি জনসনের হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করে প্লেন থেকে ভারত মহাসাগরের একটি দ্বীপের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়তে সমর্থ হয়। পুলিশ এবং স্থানীয়রা প্রত্যন্ত আনালালভা অঞ্চলে তার মৃতদেহের সন্ধানে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
তবে তারা আশঙ্কা করছেন, প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ার কারণে তাকে আর কখনও খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে না।
পুলিশ জানায়, সেসনা সি-১৬৮ প্লেনটি অঞ্জাজবি থেকে জনসন, আলানা এবং পাইলটসহ তিনজনকে নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। প্লেনটি উড্ডয়নের ১০ মিনিট পরে আলানা তার সিটবেল্ট সরিয়ে ফেলেন। এরপর তিনি প্লেনের ডান পাশের দরজাটি খুলে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
পুলিশ বলছে, জনসন তাকে ধরে রাখার চেষ্টা করে পাঁচ মিনিট ধরে লড়াই করেছিলেন। কিন্তু যখন ক্লান্ত হয়ে দম ফুরিয়ে গেল তখন আর তাকে ধরে রাখতে পারেন নি।
আলানা তখন ইচ্ছাকৃতভাবে প্লেনটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার ৬০০ ফুট ওপরে থাকা অবস্থায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি এমন এক জায়গায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন যা 'কার্নিভোরাস ফোস্সা' অঞ্চল হিসেবে পরিচিত।
এদিকে আলানার গবেষণা সংক্রান্ত ৬ সপ্তাহব্যাপী একটি প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই ঘটনার ৮ দিন পর তার বাবা আলিসন এবং মা নেইল কাটল্যান্ডের কথামতো তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বুধবার এক বিবৃতিতে আলানার বাবা-মা তাদের মেয়ের উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেছেন, আমাদের কন্যা আলানা একজন উজ্জ্বল ও স্বাধীনচেতা তরুণী ছিল। আলানাকে যারা চিনতো সবাই তাকে ভালোবাসে ও সম্মান করে।
ওই বিবৃতিতে তারা আরও জানান, আলানা সর্বদা তার পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি অত্যন্ত সদয় ও সহায়ক ছিল। যার ফলস্বরূপ তার জীবনে বিভিন্ন স্তরের মানুষের বিস্তৃত যোগাযোগ ছিল।
তারা বলেন, আলানা তার অ্যাডভেঞ্চারের অনুভূতি দিয়ে প্রতিটি সুযোগকে উপলব্ধি করেছিল। সর্বদা সর্বোত্তম উপায়ে তার জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা প্রসারিত করার চেষ্টা করেছিল সে। প্রতিভাবান নৃত্যশিল্পী ছিল সে। সে দারুণ প্রতিভাধর এবং সৃজনশীল ছিল। বিশ্বের বিভিন্নস্থানে অনুসন্ধানের জন্য তার প্রবল আকাংখা ছিল। জীবনের প্রতিটি সেকেন্ডের সর্বাধিক ব্যবহার করেছে সে।
আলানার বাবা-মা বলেছেন, আমাদের অপূর্ব সুন্দর মেয়েটিকে হারিয়ে আমাদের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, আলানা প্রাণী জীববিজ্ঞান প্রকল্পে উপকূলের কাঁকড়া সংক্রান্ত বিষয়ে গবেষণারত ছিলেন। এই গবেষণার খরচ নিজেই যুগিয়েছিলেন তিনি। তবে তার সে গবেষণাটি ব্যর্থ হয় এবং তিনি ৫ বার প্যারানোইয়া নামক রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
সূত্র: দ্য সান
এনএস/এসি