ইসলামে অসুস্থ ব্যক্তির সেবার গুরুত্ব
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:৩৮ এএম, ২ আগস্ট ২০১৯ শুক্রবার
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়াল ঘোষণা করেছেন,'নিশ্চয়ই আমি তোমাদের ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দিয়ে পরীক্ষা করব। হে রাসুল, আপনি ধৈর্যশীলদের শুভ সংবাদ প্রদান করুন' (সুরা বাকারা, আয়াত :১৫৫)। লক্ষণীয়, মহান রব এ আয়াতে চারটি জিনিস দিয়ে পরীক্ষার কথা বলেছেন- ভয়, ক্ষুধা, ধন-সম্পদ ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মহান রব শুভ সংবাদ প্রদান করেছেন।
কিসের শুভ সংবাদ? বড় শুভ সংবাদ হলো, অনাদি-অনন্তকালের জান্নাত। দুনিয়াতেও আল্লাহ তায়ালা ধৈর্য ও সবরের উত্তম বদলা দান করেন। এ জন্য বিপদগ্রস্ত সবাইকে ধৈর্য অবলম্বন করতে হবে। ইসলাম মানবতার কথা বলে। ইসলামের প্রতিটি পরতে পরতে জড়িয়ে আছে মানুষ ও মানবতার কথা।
বিপদগ্রস্থরা ধৈর্য অবলম্বন করবে ঠিক, তবে অন্যরা? আল্লাহ তায়ালা বলে দিলেন, 'নিশ্চয় দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী এবং যারা আল্লাহকে উত্তম কাজ (ঋণ) দেয়, তাদের জন্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হবে এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক প্রতিদান (সুরা :হাদিদ, আয়াত :১৮)। হাদিসে কুদসিতে বলা হয়েছে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, 'হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমাকে দেখতে যাওনি।' বান্দা বলবে, আপনি তো বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক, আমি আপনাকে কীভাবে দেখতে যেতে পারি? আল্লাহ বলবেন, 'আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল। তুমি তাকে দেখতে গেলে সেখানে আমাকে পেতে' (সহিহ মুসলিম, ২১৬২)।
এ মুহূর্তে ডেঙ্গু জ্বর গোটা জাতির ওপর ভয়াবহরূপে চেপে বসেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ আগে ঢাকা কেন্দ্রিক থাকলেও এবার ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। আমাদের করণীয় কী? ঘরে ঘরে প্রতিটি মানুষের সচেতনতা দরকার। যেসব জায়গায় এডিস মশা ডিম পাড়ে, সেসব জায়গা চিহ্নিত করে সেগুলো পরিচ্ছন্ন করা। যারা কাজ করছেন পারলে তাদের সহযোগিতা করা।
কেউ আক্রান্ত হলে তার পাশে দাঁড়ানো। সবকিছুর পর নিজেকে রবের দিকে সোপর্দ করা। আমরা চেষ্টা করেছি মালিক। সব অসুস্থতা ও সুস্থতা আপনারই হাতে। হজরত ইবরাহিমের (আ.) কথাটি আল্লাহপাক আমাদের শিক্ষার জন্য কোরআনে বলে দিলেন [ইবরাহিম (আ.) বললেন], যখন আমি অসুস্থ হই, তখন তিনিই আমাকে সুস্থতা দান করেন (সুরা শুয়ারা :৮০)।
হজরত মুহাম্মদ (সা.)বলেন, 'মুমিনের বিষয়টা বড়ই অদ্ভুত! তার সব অবস্থাতেই কল্যাণ থাকে। এটি শুধু মুমিনেরই বৈশিষ্ট্য যে, যখন সে আনন্দে থাকে, তখন আলল্গাহর শুকরিয়া আদায় করে এবং যখন সে কষ্টে থাকে, তখন সবর করে। আর এ উভয় অবস্থাই তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে' (সহিহ মুসলিম, ২৯৯৯)। এ জন্যই আমরা ভেঙে পড়ব না। সচেতনতা, প্রচেষ্টা ও সবরের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য চাইব। রাসুল (সা.) বলেন, কোনো রোগীর কাছে গিয়ে নিম্নের দোয়াটি সাতবার পাঠ করলে মৃত্যুরোগ ছাড়া সব রোগ থেকে সে সুস্থ হয়ে উঠবে ইনশালল্গাহ। দোয়াটি- আসআলুল্লাহাল আজিম, রাব্বাল আরশিল আজিম, আই ইয়াশফিয়াকা।
অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া, সান্ত্বনা দান করার ভেতরও সওয়াব রয়েছে। অসুস্থ ব্যক্তি কষ্টে সবর করে যে পরিমাণ সওয়াব পায়, সেই পরিমাণ। হজরত আবদুলল্গাহ বিন মাসউদ ( রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কোনো বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দান করে,তার জন্যও বিপদগ্রস্তের মতো সওয়াব রয়েছে (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মিশকাত, পৃষ্ঠা-১৫১)। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সুস্থ মানুষকে অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর, ধনীকে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তৌফিক দান করুন।
টিআর/