তালাকের প্রতিবাদ করায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে খুন!
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:২০ এএম, ২ আগস্ট ২০১৯ শুক্রবার
(ফাইল ফটো)
শ্বশুরবাড়ির কাছেই একটি আমবাগানে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধুর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে জানান।
তালাকের প্রতিবাদ করায় নুরবানু খাতুন (২৬) নামে ওই অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধুকে খুনের অভিযোগ উঠেছে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার ওই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়াল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ থানার গৌরি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিষ্ণুপুর এলাকায়।
ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গেছে, নিহতের গলায় শ্বাসরোধের চিহ্ন মিলেছে। পাশাপাশি, তার হাত-পা, পিঠ ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। ওই গৃহবধুর মৃতদেহটি উদ্ধার হতেই তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা উধাও হয়ে গেছেন।
উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার সুমিত কুমার জানান, নিহতের বাপের বাড়ির লোকেরা এখনও পর্যন্ত পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
পরিবার সূত্রে খবর, নুরবানু তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। নুরবানুর স্বামী সুন্দরলাল আলি পেশায় চাষী। চার বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। নুরবানুর বাপের বাড়ি ইটাহার থানার সুরুণ-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাজিতপুর এলাকায়।
নিহতের কাকা মোহাম্মদ সলিমুদ্দিনের অভিযোগ, বিয়ের এক বছর পর থেকে সুন্দরলাল ছাড়াও তার পরিবারের লোকেরা বাপের বাড়ি থেকে কখনও টাকা, আবার কখনও চাল-ডাল ও আনাজ চেয়ে নুরবানুর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। কিন্তু নুরবানু আনতে অস্বীকার করায় অভিযুক্তেরা তাকে মাঝেমধ্যেই মারধর করতেন।
সলিমুদ্দিনের আরও অভিযোগ, নুরবানুর উপর অত্যাচার রুখতে গত দু’বছরে তারা তার শ্বশুরবাড়িতে একাধিক বার কখনও পাঁচ হাজার, কখনও ১০ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন।
নুরবানুর বাবা মোহাম্মদ আবিরুদ্দিনের অভিযোগ, প্রায় দু’সপ্তাহ আগে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ফের টাকা চেয়ে নুরবানুকে মারধর করেন। কিন্তু তার মেয়ে টাকা আনতে অস্বীকার করায় সুন্দরলাল তাকে সর্বসমক্ষে এক তালাক দিয়ে সতর্ক করেন। নুরবানু ওই ঘটনার প্রতিবাদ করে সঙ্গে সঙ্গে নিজের বাড়িতে বিষয়টি জানান।
আবিরুদ্দিন জানান, তারা নুরবানুর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে সুন্দরলালকে তালাক না দেওয়ার অনুরোধ করেন। এলাকার বাসিন্দাদের উপস্থিতিতে এক সালিশি সভায় নুরবানুকে তালাক না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন সুন্দরলাল।
আবিরুদ্দিন আরও বলেন, আমার মেয়ে এক তালাকের প্রতিবাদ করেছিল। তাই সুন্দরলাল ও তার পরিবারের লোকেরা আমার মেয়েকে মারধর করে গলা টিপে খুন করেছে। পরে প্রমাণ লোপাট করতে দেহটি আমবাগানে ফেলে দেয়। তাই নুরবানুর স্বামী সুন্দরলাল, শ্বশুর সামাদ আলি, শাশুড়ি মতিলাল বিবি, জা আয়েশা বিবি, ভাসুর মোহাম্মদ হাসিবুর ও দেওর মোহাম্মদ সইফুদ্দিনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে খুনের অভিযোগ দায়ের করবেন বলে জানান আবিরুদ্দিন।
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার