ঢাকা, শনিবার   ৩০ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৬ ১৪৩১

আসছে রুই-কাতলা, যাচ্ছে পাবদা-পাঙ্গাশ

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১১:২০ পিএম, ৪ আগস্ট ২০১৯ রবিবার

যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে রুই ও কাতলা মাছ। এর বিপরীতে ভারতে রফতানি হচ্ছে পাবদা, পাঙ্গাশসহ পাঁচ প্রজাতির মাছ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যশোরে স্থানীয় চাহিদার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি মাছ উৎপাদন হয়। এ কারণে চাহিদা থাকায় ভারতে মাছ রফতানি হচ্ছে। আর মূলত ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জেলার চাহিদা মেটানোর জন্য ভারত থেকে মাছ আমদানি হয়।

যশোর জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মাছ উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। দেশে বর্তমানে মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে যশোর। জেলার উৎপাদিত মাছের মধ্যে রয়েছে- রুই, কাতলা, মৃগেল, বাগদা, গলদা চিংড়ি, পাবদা, পাঙ্গাশ, শিং, মাগুর ও কৈ ইত্যাদি। 

যশোরে মাছের বার্ষিক চাহিদা ৬০ হাজার ৫৬১ টন। এর বিপরীতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৯৯৮ টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২ লাখ ৫ হাজার ৮১১ টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২ লাখ ২৪ হাজার ৭৬৭ টন ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৪২০ টন মাছ উৎপাদন হয়েছিল। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ জেলায় মাছ উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫৮৮ টন, যা স্থানীয় চাহিদার প্রায় চার গুণ।

যার ফলে এ অর্থবছরে যশোর থেকে ৩ হাজার ৪৮৩ দশমিক ৬৩ টন মাছ ভারতে রফতানি হয়েছে। যার মূল্যমান ৮ লাখ ৭০ হাজার ৯৭৫ ডলার (প্রায় ৭ কোটি টাকা)। এ থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ১০ লাখ ২৪ হাজার ৫০০ টাকা।

মৎস্যখাত সংশ্লিষ্টরা জানান, মাছ উৎপাদনে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে যশোর। স্থানীয় চাহিদার কয়েক গুণ বেশি উৎপাদন হওয়ায় অন্যান্য জেলাও এখন মাছের জন্য যশোরের ওপর নির্ভরশীল। এমনকি ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে পরিবহন খরচ কম হওয়ায় এ জেলায় উৎপাদিত পাবদা, পাঙ্গাশ, পারশে, গজার ও ভেটকি মাছ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রফতানি হচ্ছে। আর এ বন্দর দিয়ে যে মাছ আমদানি হয়, তা মূলত অন্য জেলার চাহিদা মেটানোর জন্য।

বেনাপোল স্থলবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ৪ হাজার ৭২৮ টন মাছ আমদানি হয়েছে। এর বড় অংশই ছিল রুই মাছ। এছাড়া দেশটি থেকে স্বল্প পরিমাণে কাতলা মাছও আমদানি হয়।

মাছ রফতানিকারক আফিল অ্যাকোয়া ফিশের পরিচালক মাহবুব আলম লাভলু বলেন, জেলায় মাছ উৎপাদন উদ্বৃত্ত হওয়ায় আমরা ভারতে পাবদা, পাঙ্গাশসহ পাঁচ ধরনের মাছ রফতানি করি। দেশটিতে এসব মাছের ভালো চাহিদা আছে।

শুধু মাছ নয়, যশোরে স্থানীয় চাহিদার কয়েক গুণ বেশি রেণু-পোনাও উৎপাদন হয়। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জেলায় ৬৯ টন রেণু পোনা উৎপাদন হয়েছিল। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৬৮ দশমিক ৭১ টন। আর যশোরে রেণু পোনার চাহিদা ১৫ দশমিক ২৩ টন।

যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিছুর রহমান জানান, যশোরে ৫১টি কার্প ও তেলাপিয়া হ্যাচারি এবং ৪ হাজার ১৭৫টি নার্সারি রয়েছে। এসব খামার জেলার আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আর্থসামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। সারা দেশে মাছ উৎপাদনে যশোরের অবস্থান বর্তমানে দ্বিতীয়। মাছ চাষ ও রেণু পোনা উৎপাদনে এ সাফল্য অব্যাহত থাকলে অচিরেই এ জেলা শীর্ষস্থানে উঠে আসবে।

বৃহত্তর যশোর মৎস্য প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক মাহবুবুর রহমান মিন্টু জানান, মাছ উৎপাদনে সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে যশোরে মাছের পোনার আধুনিক বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়া রুই মাছের জাত উন্নয়ন, বাঁওড়ের মাছের ব্র্যান্ডিং, গুণগত মানের রেণু উৎপাদন নিশ্চিত করা, দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি, ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমানোর জন্য মৎস্য হ্যাচারি পর্যায়ে পানির রিসাইক্লিং পদ্ধতি সম্প্রসারণ, নিরাপদ মৎস্য খাদ্য, রোগ শনাক্তকরণ এবং বিষাক্ততা পরীক্ষণ ল্যাব স্থাপন করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে জেলায় মাছ উৎপাদন আরও বাড়বে। তখন সমানতালে রফতানিও বাড়বে। 

এনএস/আরকে