ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

ডেঙ্গু থেকে মুক্তি কবে? (ভিডিও)

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:১৮ পিএম, ৫ আগস্ট ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০১:৪১ পিএম, ৫ আগস্ট ২০১৯ সোমবার

অপরিকল্পিত নগরায়ন, অবহেলা ও স্বদিচ্ছার কারণে ডেঙ্গু এখন বড় আকার ধারণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মেডিকেল এডুকেশনের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা মো. নাজমুল ইসলাম।

সোমবার রাতে একুশে টেলিভিশনে সরাসরি প্রচারিত বিশেষ অনুষ্ঠানে ‘একুশের রাত’ তিনি এ মন্তব্য করেন। 

দেবাশীষ রায়ের উপস্থাপনায় ‘ডেঙ্গু থেকে মুক্তি কবে’ শিরোনামের এ অনুষ্ঠানে আরও অতিথি ছিলেন এবি নিউজ২৪ ডট কমের প্রধান সম্পাদক সুভাষ সিংহ রায়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর দেওয়ান আব্দুল মান্নান। 

অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট সকলের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সেই সাথে এ বিভাগের সকলকে কাজ ভাগও করে দেওয়া হয়েছে। একটি মুহূর্তের জন্যও কাজ থেমে নেই। যারা হাসপাতালে কাজ করছে তারা কিন্তু রোগী ভর্তি থেকে শুরু করে হাসপাতালে যা যা প্রয়োজন সব কিছু করছেন।’

মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা ডেঙ্গুর বিষয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য কাজ করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন, বিভাগীয় কমিশনার সকলকে নিয়ে ডেঙ্গুর বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছেন। সেই সাথে যে সব স্থান থেকে এডিস ছড়ায় সে সব স্থানকে তারা চিহ্নিত করে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করছেন। এডিসের প্রজনন ক্ষেত্রকে পরিষ্কার করার জন্য যেভাবে মানুষকে সংগঠিত করা দরকার তারা কিন্তু সেভাবেই কাজ করছেন। বিভিন্ন হাসপাতালে যে সব ইন্টার্ন চিকিৎসক কাজ করছেন তারা কিন্তু তাদের পড়াশুনা এখন পাশে রেখে দিনরাত ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাজ করছেন।’

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন তাদের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ অনেক চেষ্টা করেছে উল্লেখ করে বলেন, ‘যারা মারা গেছেন তাদের জন্য আমরা ব্যাথিত তবে আমরা গৌরবান্বিতও বটে। কারণ এ বীরের জাতি বিপদে মাঠ ছেড়ে চলে যায়নি, তারা প্রাণপণ চেষ্টা করছে ডেঙ্গু মোকাবেলা করতে। স্বাস্থ্য সেবা সংশ্লিষ্টরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন তবে তারা কিন্তু বাড়তি কোন সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন না। যেন এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যায়, মৃত্যুর হারটা যেন কমিয়ে আনা যায়। এবং মানুষকে আশ্বস্থ করা যায় যে আমরা আপনাদের পাশে আছি। তবে এ কথাটাও মানতে হবে যত রোগীর জ্বর হচ্ছে তা কিন্তু ডেঙ্গুর কারণেই হচ্ছে না। অন্যান্য ভাইরাসের কারণেই হচ্ছে। অন্য ভাইরাসের কারণে জ্বর হচ্ছে, অন্যান্য রোগের কারণেও কিন্তু জ্বর হচ্ছে। এই যে তফাতটা তৈরি করা। কোনটা ডেঙ্গু জ্বর আর কোনটা অন্য জ্বর তা নির্ণয় করতে আমরা কিন্তু জাতির সহযোগীতা চাই। গায়ে জ্বর হয়েছে, গা ব্যাথা করছে তার মানেই কিন্তু ডেঙ্গু নয়।’

জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ডেঙ্গুর পরীক্ষা করে সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ডা. নাজমুল ইসলাম। 

তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া চট করে গিয়ে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করা এতে কিন্তু যার দরকার সে বঞ্চিত হচ্ছে। এমনিতেই আমাদের দক্ষ লোকবলের ঘাটতি রয়েছে। সংকটের সময় তো বিষয়টি আরও প্রকট হয়। দক্ষ জনশক্তি যদি উন্নয়ন করা না যায় তাহলে কিন্তু আগামী দিনগুলোতে বিপদের কারণও আছে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটা প্রতিবেদন উল্লেখ করে এ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘গত ৩০ বছরে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব কিন্তু ৩০ গুণ বেশি বেড়েছে। প্রতি বছর ৫০ থেকে ১০০ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। বিষয়টি কিন্তু সংখ্যার হিসেবে একেবারেই কম নয়। তার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া যেমন বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার। এখানে বাংলাদেশ কিন্তু ছোট্ট দেশ যেখানে জনসংখ্যার আধিক্যও আছে। জন ঘনত্ব অন্যদের তুলনায় আমাদের অনেক বেশি। তার মানে আমরা এখনই যদি কৌশল, জনকৌশল ঠিক করতে না পারি। দক্ষ জনগোষ্ঠি তৈরি করতে না পারি। এখানে রোগের আক্রান্ত হওয়ার পরই চিকিৎসক চিকিৎসা দিচ্ছেন কিন্তু তার আগে বহু মানুষের কাজ আছে। একে বারে কীটতত্ত্ববীদ থেকে লার্ভা পর্যন্ত যারা দেখছেন সকলকে নিয়ে একটি টিম ওয়ার্ক করতে হয়। নিড অ্যাসেসমেন্ট করতে হবে।’

আর দেরি করা যাবে না এমনটি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আর বসে থাকার সময় নেই। এখন যে সংকট আছে তা আমরা মোকাবেলা করছি। যারা বসে আছেন তাদেরকেও মূল স্রোতের সাথে চলে আসতে হবে কারণ বসে থেকে এডিস মশার হাত থেকে বাঁচতে পারবেন না। গুজব ছড়িয়ে, ভুল তথ্য দিয়ে কিন্তু নিজেকে রক্ষা করা যাবে না। এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে মানুষ সত্যটা শেষ পর্যন্ত জেনেই যায়।’ 

কাজেই সবাই মিলে মিশে এ কাজটা করলে সহজেই উত্তরণ হওয়া যাবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এখান থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখারও আছে। এখান থেকেই সামনের চিন্তা করতে হবে। সেভাবেই দক্ষ জনগোষ্ঠি, প্রতিটি ওয়ার্ডকে কেন্দ্র করে, প্রতিটি ইউনিয়নকে কেন্দ্র করে, প্রতিটি জেলাকে কেন্দ্র করে চাহিদাটা নিরূপণ করতে হবে এবং সেভাবেই তাদেরকে তৈরি করার জন্য প্রণোদনা দিতে হবে। তাহলে আজকে যে সংকট তৈরি হয়েছে সে রকম সংকটে আমরা কিন্তু ভালোভাবেই রেসপন্স করতে পারব।’

এমএস/