সুষমার যে মানবিক পদক্ষেপ সাড়া ফেলেছিল আন্তর্জাতিক মহলে
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:০৭ এএম, ৭ আগস্ট ২০১৯ বুধবার
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আর নেই। মঙ্গলবার রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তার।
দেশটির বর্তমান শাসক বিজেপির সবচেয়ে শ্রদ্ধার ব্যক্তি ছিলেন সুষমা। সম্ভবত পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন কাজের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
২০১৬ উরি জঙ্গি হামলা। ভারতের জম্মু এবং কাশ্মীর রাজ্যের উরি এলাকায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি সেনা ঘাটিতে ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ঘটনাটি ঘটে। ভারতীয় সেনা জওয়ানদের মৃতদেহ দেখে স্তম্ভিত আন্তর্জাতিক মহল। চরম বিক্ষোভ। পাকিস্তানের নাম শুনলেই ভারতবাসী উগরে দিচ্ছেন ক্ষোভ।
ওই সময় আরও একটা ঘটনা ঘটেছিল! তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সুষমা স্বরাজের একটি মানবিক পদক্ষেপ সাড়া ফেলেছিল আন্তর্জাতিক মহলে।
উরি হামলার পর ৫ অক্টোবর পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা ১৯ জন পাক কন্যাকে নিয়ে শুরু হয়েছিল টানাপোড়েন। কারণ সেই জঙ্গি হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিপাকে পড়েছিলেন সেই পাক কন্যারা। একটি যুব অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এই পাকিস্তানি প্রতিনিধিরা এসেছিলেন চণ্ডীগড়ে। তারই মাঝে ঘটেছিল রক্তাক্ত পরিস্থিতি। ফলে ভারতে থাকা নিরাপত্তার অভাব হতে পারে, এই মনে করে তারা দেশে ফেরার জন্য উৎকণ্ঠিত ছিলেন।
অথচ প্রকাশ্যে বের হলেই উগ্রতার শিকার হতে পারেন। এই আশঙ্কা ক্রমে মনের উর চেপে বসেছিল। এমন অবস্থায় এগিয়ে এসেছিলেন সুষমা স্বরাজ।
পাক প্রতিনিধি দলের নেত্রী আলিয়া হারির নিজেদের অবস্থার কথা জানিয়েছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে। তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন সুষমা স্বরাজ। বাকিটা ইতিহাস হয়ে গেছে। একটি টুইট করেই মানবিকতার যে নিদর্শন রেখেছিলেন সুষমা।
নজিরবিহীন সেই টুইট- কন্যাদের জন্য চিন্তা হয় বইকি..! তিনি কন্যার জননী। তাই অপরের কন্যার জন্যও সমান চিন্তিত। হোক সে পাকিস্তানি। খোদ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তরফে আশ্বাস পেয়ে হাঁফ ছেড়েছিল সেই ১৯ পাক কন্যা। বিদেশমন্ত্রকের উদ্যোগে কড়া নিরাপত্তায় তাদের আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে ফেরত পাঠিয়ে দেয় ভারত সরকার। দেশে ফিরে পাক প্রতিনিধি নেত্রী আলিয়া রি টুইট করেন- তাতে তিনি লিখেছিলেন, আপনার কন্যা হওয়ার জন্য গর্বিত। আর কী চাই…!
সেদিন আলিয়ার টুইটে ঝরে পড়েছিল সুষমা স্বরাজের প্রতি অশেষ ভালবাসা-শ্রদ্ধা। সেই টুইটে ফুটে উঠেছিল বাকি ১৮ জন পাক কন্যার অনুচ্চারিত শ্রদ্ধা। পাকিস্তানে থাকা তাদের পরিবার ও আত্মীয়রা নীরবেই ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে। কারণ, তারাও তো কন্যাদের জন্য উদ্বেগে ছিলেন। যেমনটা উদ্বেগ ছিল সুষমা স্বরাজের।
আপাদমস্তক ভারতীয় বেশভুষায় আন্তর্জাতিক দুনিয়া তাকে চিনে নিয়েছিল বারে বারে। কখনও মিষ্ট ভাষণ, তো কখনও কড়া অবস্থান-দ্বৈত দৃঢ়চেতা অবস্থানে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সুষমা স্বরাজ। বিজেপির অটল বিহারী বাজজেপীয় যুগের নেত্রী তিনি। বার বার কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে উঠে এসেছিলেন। দল ক্ষমতায় কি বিরোধী আসনে, সুষমা স্বরাজ থাকতেন অন্যতম হয়েই।
বাজয়েপীয় জমানার অবসানের পরে কোথাও দলেরই অভ্যন্তরে ছিলেন একঘরে। আচমকা সব শেষ। হৃদরোগে চলে গেলেন সুষমা স্বরাজ। সীমান্তের ওপারে পাক ভূমিতে তার প্রয়াণ সংবাদটি পেয়ে সেই ১৯ জন পাকিস্তানি কন্যার চোখের কোনা ভিজে যাবে। সেদিন সেই উত্তাল পরিস্থিতিতে তিনিই তো আগলে ছিলেন মায়ের মতো।
(কলকাতা ২৪x৭ অবলম্বনে)