ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

বিচ্ছিন্ন কাশ্মীর

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৫৩ এএম, ৭ আগস্ট ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ১১:৫৫ এএম, ৭ আগস্ট ২০১৯ বুধবার

ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা দিয়ে সেখানে ছিল ৩৭০ ধারা। সোমবার তা প্রত্যাহার করে নরেন্দ্র মোদি সরকার। ওই অঞ্চলটির বাসিন্দাদের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পরেও এলাকাটি বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।

গত রোববার বিকালে ওই রাজ্যের টেলিফোন, মোবাইল এবং ইন্টারনেটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় এবং সেগুলো এখনও ঠিক করা হয়নি। কবে হতে পারে সে সম্পর্কে কোনও ইঙ্গিতও পাওয়া যায়নি।

তবে ভারত সরকার জানিয়েছে, উপত্যকা ‘শান্ত ও স্বাভাবিক’ রয়েছে। সম্প্রতি মোতায়েন ভারতের লক্ষাধিক সেনা উপত্যকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।

কাশ্মীরের রাস্তায় হাজার হাজার সেনা টহল দিচ্ছে। তবে ভারত সরকারের এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কঠোর বিক্ষোভ দেখিয়েছে কাশ্মীরের জনগণ। বিক্ষোভের ঘটনায় এ পর্যন্ত ছয়জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

সবখানেই উত্তেজনা। লোকজন ক্ষুব্ধ। তারা এখনও বুঝতে চাইছে কী ঘটছে, কী ঘটতে যাচ্ছে, তাদের ভাগ্যে কী আছে।

কাশ্মীরের যোগাযোগ এমনভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যে সেখানকার অনেক লোকই এখনো ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের খবর জানেন না।

তবে যারা জানতে পেরেছেন তাদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া কী হয়েছে? বিবিসি হিন্দির একজন সাংবাদিক আমীর পীরজাদা জানান, তারা মঙ্গলবার সকালে কাশ্মীরের উত্তরাঞ্চলে বারামুল্লা জেলায় গিয়েছিলেন, স্থানীয়দের কাছে জানতে চেয়েছিলেন এ খবর তারা জানেন কি না। অধিকাংশ লোকই বলেছেন, তারা আরো খবরের অপেক্ষায় আছেন, কারণ সবার কথা তারা বিশ্বাস করেন না।

আমীর পীরজাদা বলছিলেন, তবে একজন লোকের সঙ্গে তাদের কথা হয়, যার বয়স ৫০-এর কোঠায়। তিনি বলছিলেন, আগে তারা নিজেদের স্বাধীন ভাবতেন, কিন্তু এখন তার মনে হচ্ছে সেই স্বাধীনতা তারা হারিয়ে ফেলেছেন।

লোকটি বলছিলেন, তারা ভারতের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন এবং তারা ভারতের গোলামে পরিণত হয়েছেন।

স্থানীয় নেতাদের এরই মধ্যে আটক করা হয়েছে। ভারতের অন্যান্য স্থানে থাকা কাশ্মীরিরা তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে থাকা এক ছাত্র ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, তিনি স্থানীয় পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।

অনেক কাশ্মীরি মনে করেন, সংবিধানের যে ৩৭০ অনুচ্ছেদ কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দিত - সেটিই ছিল রাজ্যটির ভারতের অংশ থাকার পেছনে প্রধান যুক্তি। আর ওই অনুচ্ছেদ বিলোপের মাধ্যমে দিল্লির সঙ্গে কাশ্মীর অঞ্চলের সম্পর্কের যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপরিবর্তনীয়।

অনুচ্ছেদ ৩৭০ কাশ্মীর রাজ্যকে বিশেষ ধরণের স্বায়ত্তশাসন ভোগ করার সুযোগ দিত। এর ফলে তারা নিজস্ব সংবিধান, আলাদা পতাকা এবং আইন প্রণয়নের অধিকার রাখতো। যদিও পররাষ্ট্র বিষয়ক সিদ্ধান্ত, প্রতিরক্ষা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে।

ভারতের সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অনুচ্ছেদ ৩৭০ এর বিলোপের ঘোষণা দেয়ার কয়েকদিন আগে থেকেই কাশ্মীর উপত্যকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

সংসদে ঘোষণা দেয়ার কয়েকদিন আগে ওই অঞ্চলে অতিরিক্ত দশ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়। পর্যটকদের ওই এলাকা ছেড়ে যেতে বলা হয়, হিন্দু তীর্থযাত্রীদেরও নির্দেশ দেয়া হয় ঘরে ফিরে যেতে। স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং কোনও পরিকল্পনা সম্পর্কে কোনও ইঙ্গিতও দেয়া হয়নি।

তবে সব ধরণের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে ধারণা করে পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য স্যাটেলাইট ফোন বরাদ্দ করা হয়।

রোববার রাতে দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রীকে গৃহবন্দী করার সময়ই সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। সে সময় থেকে ওই অঞ্চল কার্যত পুরো বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সেখান থেকে কোনো কিছুরই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র ঘোষণার পর অতিরিক্ত সেনাও মোতায়েন করা হয়েছে।

তবে স্থানীয়ভাবে পাওয়া খবর থেকে জানা যাচ্ছে যে সাধারণ মানুষকে ওই অঞ্চলে প্রবেশ করতে বাধা দেয়া হচ্ছে না।