কাশ্মীর ইস্যুতে ফের যুদ্ধে জড়াচ্ছে ভারত-পাকিস্তান?
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:১৪ পিএম, ৮ আগস্ট ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৮:১৫ পিএম, ৮ আগস্ট ২০১৯ বৃহস্পতিবার
সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলুপ্তের মাধ্যমে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নিয়েছে মোদির সরকার। ভারতের এ সিদ্ধান্তের পর পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশীর মাঝে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। বৃহস্পতিবার এরইমধ্যে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ নজরদারি এবং প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
অবশ্য এর আগেই ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য সম্পর্ক স্থগিত, রেলযোগাযোগ বন্ধ ও ইসলাবাদ থেকে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান।
মূলত এরপরই নিজেদের আকাশসীমার কিছু অংশ বন্ধও করে দিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির নতুন এই পদক্ষেপে এখন বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন- ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মীর সঙ্কট নিয়ে আবারও কি সামরিক সংঘাতের দিকে এগোচ্ছে পারমাণবিক অস্ত্রধারী পাক-ভারত? দীর্ঘদিনের বিতর্কিত অঞ্চলটি ঘিরে অতীতে দু'বার সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে এ দুই প্রতিদ্বন্দ্বী।
বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে সংবাদ সম্মেলন করেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি। কাশ্মীর ঘিরে নতুন উত্তেজনা দেখা দেয়ায় ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা নিয়ে কথা বলেন তিনি। তবে পাকিস্তান এখনই সামরিক উপায় অবলম্বনের কথা ভাবছে না বলেই জানিয়েছেন কুরেশি।
পাক এই মন্ত্রী বলেন, কাশ্মীরের দীর্ঘদিনের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের জবাব রাজনৈতিক ও আইনি উপায়ে দিতে চায় ইসলামাবাদ। তবে যে কোনও ধরনের আগ্রাসনের জবাব দেয়ার অধিকার রয়েছে পাকিস্তানের। তবে আমরা এখনই সামরিক উপায়ের কথা ভাবছি না। অবশ্যই আগ্রাসনের জবাব দেয়ার অধিকার আমাদের আছে।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রতি শুরু থেকেই সমর্থন দিয়ে আসছে পাকিস্তান। তারই প্রেক্ষিতে কাশ্মীরের মর্যাদা বাতিলের নিন্দা জানিয়ে ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে বুধবার বহিষ্কার করে পাকিস্তান। একইসঙ্গে ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত করা হয়।
এদিকে পাকিস্তানের এ সিদ্ধান্তকে ‘দুঃখজনক’ মন্তব্য করে তা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে নয়াদিল্লি।
এর আগে গত সোমবার ভারত অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা-সংক্রান্ত সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের একটি প্রস্তাব পাস হয় রাজ্যসভায়। ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নির্বাহী আদেশে পার্লামেন্টে এটি পাস হয়।
১৯৫৪ সাল থেকে ভারতীয় সংবিধানে কাশ্মীর বিশেষ মর্যাদা পেয়ে আসছিল। পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং যোগাযোগ ছাড়া কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মীরের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারতো না। কিন্তু এ বিশেষ মর্যাদা বাতিল হওয়ায় কাশ্মীর এখনও আলাদা একটি অঞ্চলে পরিণত হবে। একই সঙ্গে কাশ্মীর ভেঙে লাদাখ নামে কেন্দ্রশাসিত অপর একটি অঞ্চল গঠন করা হবে; যার নিয়ন্ত্রণ থাকবে ফেডারেল সরকারের হাতে।
কেন্দ্রীয় শাসনের আওতায় আসার ফলে এখন ভারতীয়রা কাশ্মীরে জমি কিনতে ও সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে, এমনকি কাশ্মীরি সুন্দরীদের বিয়েও করতে পারবেন।
এদিকে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিলের আগেই কার্যত কাশ্মীরকে পুরো বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন, মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধের পাশাপাশি বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গৃহবন্দি করে রাখে স্থানীয় প্রশাসন। এছাড়া নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয় এই উপত্যকায়।
গত সপ্তাহে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় ৩০ হাজার অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয় সেখানে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অমরনাথ তীর্থযাত্রা বাতিল করে সকল পর্যটকদের কাশ্মীর ছাড়ার নির্দেশ দেয় সরকার। সূত্র: স্পুটনিক।
এনএস/আরকে