সকলের প্রচেষ্টায় রোধ হবে ডেঙ্গু
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:১৫ পিএম, ৮ আগস্ট ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১০:২৩ পিএম, ৮ আগস্ট ২০১৯ বৃহস্পতিবার
ডেঙ্গু প্রতি বছর বাংলাদেশে দেখা গেলেও চলতি বছর ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারণ করেছে। শুরুতে রাজধানীতে এ রোগের দেখা দিলেও এখন দেশ ব্যাপি ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এ রোগ নির্মূলে সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এ রোগের জন্য পরামর্শ ও সচেতনতা তৈরীতে হটলাইনও খোলা হয়েছে।
জানা যায়, প্রতি দুই মিনিটে তিনজনের বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে রেকর্ডসংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল। আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ১৪৮ জন। এ বছর আক্রান্ত হয়েছে ৩২ হাজার ৩৪০ জন। এর মধ্যে গত জুলাই মাসে রোগী ছিল ১৬ হাজার ২৫৩। আর আগস্টের প্রথম সাত দিনেই ভর্তি হয়েছে ১৫ হাজার ৮৭৯ জন। সরকারি হিসাবে গতকাল সারা দেশে ২ হাজার ৪২৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছিল। অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় ১০১ জন রোগী ভর্তি হয়েছিল। এই সংখ্যা ছিল ৬ আগস্টের চেয়ে বেশি।
গত এক সপ্তাহে প্রতিদিনই ঢাকার বাইরে হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে। ১ আগস্ট রোগী ছিল ৫৯০ জন। ৬ আগস্ট তা হাজার ছাড়িয়ে যায়। একটি জাতীয় দৈনিকের হিসাব মতে বুধবার রাত পর্যন্ত ১১৫ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তবে সরকারী হিসাব মতে এ সংখ্যা ২৩ জনে।
ডেঙ্গু রোগ নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হতে পরামর্শ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এডিস মশার প্রজনন স্থান ধ্বংসের জন্য সিটি কর্পোরেশনসমূহ, স্বাস্থ্য বিভাগ, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা দেশ জুড়ে কাজ করে যাচ্ছে। ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষার জন্য অনেকেই রেজিষ্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই সরকারী ও বেসরকারী হাপাতালে অনেকেই ভির করছেন। এতে একদিকে যেমন অর্থের অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে এই চাপ সামলাতে গিয়ে প্রকৃত ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ক্ষেত্রে আতঙ্কিত না হয়ে সতকর্তার সঙ্গে বিষয়টি প্রতিহত করার পরমার্শ দিচ্ছে মন্ত্রণালয়টি।
সারা দেশে সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে ডেঙ্গু চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। প্রয়োজেনে হটলাইন ১৬২৬৩ এ ফোন করতেও অনুরোধ করা হয়েছে। জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ তে যোগাযোগ করেও এর পরমর্শ ও জরুরীবস্থায় সেবা পাওয়া যাবে বলে সূত্র জানায়।
এ ছাড়াও বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থা জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ডেঙ্গুর বিষয়ে সচেতনতা ও প্রতিরোধে কাজ করছে। নেওয়া হচ্ছে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচিও। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের চিকিৎসকদের ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষার উপকরণসহ (কিট) অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার জন্য প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা হাসপাতালকে যথাক্রমে ১০ লাখ ও ২ লাখ করে টাকা দেওয়া হয়েছে।
এ দিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যাওয়ার সাথে সাথেই বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমগুলো বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে সংবাদ প্রচার করছে। সেই সাথে বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও প্রকাশ করে ডেঙ্গুর বিষয়ে সচেতনা তৈরীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে গণমাধ্যম। প্রতিদিনিই টেলিভিশনের অনুষ্ঠান সূচিতে ডেঙ্গুর বিষয়ে কোন না কোন অনুষ্ঠান থাকছেই।
এছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্সিটিউশনসহ বিভিন্ন শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সভা ও সেমিনার করছে। এসব সেমিনারে গবেষকরা ডেঙ্গুর বিষয়ে বিভিন্ন প্রবন্ধ ও গবেষণালব্দ ফলাফল তুলে ধরছেন। এতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরীর সাথে সাথে ডেঙ্গুর বিষয়েও আতঙ্ক রোধ হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আগামী ১২ আগস্ট পবিত্র ঈদ উল আজহা। এ ছুটিতে ইতোমধ্যেই রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছেন অনেক মানুষ। তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঈদের ছুটিতে ঢাকা ছেড়ে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এরপরও যারা বাড়িতে যাচ্ছেন তাদের নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে, অফিসে এডিস মশা বাড়তে পারে এমন আশঙ্কা আছে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এক সভায় ঈদের ছুটিতে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে নাগরিকদের জন্য কিছু পরামর্শ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মধ্যে আছে সব ধরনের টয়লেট ঢেকে রাখা,
রেফ্রিজারেটরের ট্রে শুকিয়ে রাখা, এসির পাইপের পানিসহ যে কোনো পানি পরিষ্কার করে রেখে যাওয়া, সব ধরনের পাত্র পরিষ্কার করে উল্টিয়ে রেখে যেতে হবে, ফুলের টব বা ট্রের পানি ফেলে যেতে হবে এবং পানির ট্যাংকের ঢাকনা বন্ধ রেখে যেতে হবে।
এমএস/আরকে