মিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন ১৭ লাখ মুসলিম
মোহাম্মদ ফিরোজ, সোদি আরব
প্রকাশিত : ১১:৪৮ পিএম, ৮ আগস্ট ২০১৯ বৃহস্পতিবার
আগামী শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে মূল হজের কার্যক্রম শুরু হলেও আজ থেকে আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেছে হাজিরা। আর এই উদ্দেশ্যে আজকে থেকে মিনায় জড়ো হতে শুরু করেছে হাজিরা।
বিকেল থেকে আগামীকাল ভোর পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপন এক লাখ সাতাশ হাজারও বেশি বাংলাদেশি হজযাত্রী বিশ্বের ১৭ লক্ষ্য অন্য হাজিদের মতো মিনায় যাবেন।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর নির্দেশনায় মিনার মাঠে অসুস্থ বাংলাদেশি হাজিদের চিকিৎসা দিতে সদস্যের মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৯ জন ডাক্তার, ৩ জন নার্স, ৩ জন ব্রাদার, ৩ জন ফার্মাসিস্ট ওটি সহকারী ও ১ জন হজ সহায়ক রয়েছেন। তারা ৮ ঘণ্টা করে তিন শিফটে দায়িত্ব পালন করবেন। বাংলাদেশ হজ মেডিকেল সেন্টারের টিম প্রধান ডা. মো. জাজাহাঙ্গীর এ তথ্য জানিয়েছেন।
মিনায় ও আরাফাতে মাত্র ৯ জন ডাক্তার আর ৩ জন নাচ দিয়ে এক লক্ষ্য সাতাশ হাজার হাজী তাদের স্বাস্থ্য সেবা দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে আসা হজ্ব মেডিকেল টিম।
এছাড়া আরাফাত ও মিনার আশপাশে সৌদি সরকারের কয়েকটি স্থায়ী হাসপাতালে দুজন করে ডাক্তার থাকবেন। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ ও ধর্ম মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব মো. জহিরুল ইসলাম মক্কায় বাংলাদেশ হজ মিশনে থেকে পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন।
সৌদিআরবের সরকারি প্রেস এজেন্সির তথ্য মতে চলতি বছরের বিশ্বের ১২০ টি দেশের প্রায় ১৭ লক্ষ্য ধর্মপ্রাণ মুসলির অংশগ্রহণ করছেন।
মক্কা থেকে প্রায় নয় কিলোমিটার দূরে মিনা। নিজ নিজ মোয়াল্লেমের মাধ্যমে হাজীগন মিনার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। কখন কিভাবে মিনা- আরাফাত-মুজদেলিফায় যাবেন প্রত্যেক মোয়াল্লেম হাজিদের দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন এবং প্রত্যেক হাজিদের আইডি কার্ড গলায় ঝুলিয়ে রাখার জন্যও বলা হয়েছে। মক্কা থেকে বাসে করে হাজিদের মিনায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আবার কেউ কেউ হেঁটে মিনায় চলে যাচ্ছেন।
মক্কা আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, হজের সময় মক্কায় তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে । আদ্রর্তা থাকবে ৮৫ শতাংশ । আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন।
হজ্বের সময় মিনা, সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় জামারত থেকে দূরে তাঁবু পর্যন্ত, বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শারীরিক দুর্বল হাজিদের জন্য তাঁবু খোঁজে পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়ে । কারণ দীর্ঘ পথ হাঁটতে হয় হজযাত্রীদের। এই ছাড়াও তাঁবু গুলো দেখতে এক রকম ও আরবিতে নাম্বার যুক্ত থাকায় অনেকে নিজ নিজ তাঁবুতে ফিরতে সমস্যা পড়েন। তবে হাজিদের সঙ্গে মিনার মানচিত্র সাথে থাকলে হারানোর ভয় নেই।
হাজীরা ৮ই জিলহজ ( শুক্রবার) মিনায় অবস্থান করবেন এবং ৯ই জিলহজ ( শনিবার) ফজরের নামাজ পড়ে আরাফাতের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন এবং সারা দিন আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করে মুজদেলিফার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন । মুজদেলিফায় রাত্রি যাপন করবেন। পথিমধ্যে হাজীগন পাথর সংগ্রহ করবেন এবং ১০ই জিলহজ ( রবিবার) ফজরের নামাজ পড়ে মিনার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। মিনায় এসে প্রথম দিন বড় জামারাকে পাথর নিক্ষেপ করে কোরবানি দিয়ে মাথা মুন্ডন করে হেরাম খুলে স্বাভাবিক কাপড় পড়ে মক্কায় কাবা তাওয়াফ করে আবার মিনায় ফিরে আসবেন। মিনায় ১১ই জিলহজ ও ১২ই জিলহজ অবস্থান করে বড় , মেজ ও ছোট শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করে হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে মক্কায় হোটেলে ফিরে আসবেন।।
৯ জন ডাক্তার ও ৩ জন নার্স দিয়ে মেডিকেল টিম ঘোষনা:
আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র হজ্বের আনুষ্ঠানিকতা, আজ রাত থেকে মিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছেন হাজীরা। প্রতি বছরের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে এই বছরের হজ্ব করতে এসেছে ১,২৭,১৫২ জন হাজি।
বাংলাদেশ থেকে সবসময় বৃদ্ধ হাজি হজ্ব করতে আসেন এই বছরেও তার ব্যতিক্রম নয়। মিনা, আরাফাত ও মুজদেলিফায় হজ্ব করতে গিয়ে অনেক বৃদ্ধ হাজি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে মিনা, আরাফাত ও মুজদেলিফায় অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এছাড়া বিভিন্ন জটিল রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হজযাত্রী (বক্ষব্যাধি, ডেন্টাল, নাক-কান-গলা, ইউরোলজিস্ট, এন্ড্রোক্রাইনোলজিস্ট ও অর্থোপেডিকস) রোগীর সংখ্যা প্রচুর থাকে।
এই সমস্ত হাজি মক্কার রাস্তায় উদভ্রান্তের মতো আচরণ করেন। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে হোটেলকক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে এর আগে।
আর এই সমস্ত হাজিদের সহযোগিতা ও চিকিৎসা সেবা দিতে মিনায় ও আরাফাতে মাত্র ৯ জন ডাক্তার আর ৩ জন নার্স দিয়ে এক লক্ষ্য সাতাশ হাজার হাজীর স্বাস্থ্য সেবা দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে আসা হজ্ব মেডিকেল টিম।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর নির্দেশনায় মিনার মাঠে অসুস্থ বাংলাদেশি হাজিদের চিকিৎসা দিতে ২২ সদস্যের মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৯ জন ডাক্তার, ৩ জন নার্স, ৩ জন ব্রাদার, ৩ জন ফার্মাসিস্ট ওটি সহকারী ও ১ জন হজ সহায়ক রয়েছেন। তারা ৮ ঘণ্টা করে তিন শিফটে দায়িত্ব পালন করবেন। বাংলাদেশ হজ মেডিকেল সেন্টারের টিম প্রধান ডা. মো. জাহাঙ্গীর এ তথ্য জানিয়েছেন।
যেখানে বাংলাদেশ থেকে অসুস্থ হাজীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে ২০৭ সদস্যের মেডিকেল টিম-২০১৯ এসেছে। ৯০ জন চিকিৎসক, ৭৫ জন নার্স/ব্রাদার, ৩৪ জন ফার্মাসিস্ট ও আটজন ওটি অ্যাসিস্ট্যান্ট/ল্যাবরেটরি অ্যাসিস্ট্যান্ট রয়েছেন। আর সেখানে মাত্র ৯ জন ডাক্তার ৩ জন নার্স, ৩ জন ব্রাদার্স ও ৩ জন ফার্মাসিস্ট ও ১জন ওটি অ্যাসিস্ট্যান্ট/ল্যাবরেটরি দিয়ে মেডিকেল টিম ঘোষনা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেখানে ৯০ জন ডাক্তার, ৭৫ জন নার্স, ৩৪ জন ফার্মাসিট ঘোষিত হজ্ব চিকিৎসক দলের ও মেডিকেল টিম সহযোগি ২২৮ জনের মধ্যে মাত্র ২২ জন ঘোষিত টিম ছাড়া বাকীরা সবাই সেবার পরিবর্তে হজ্ব করতে ব্যাস্ত।
অভিযোগ আছে, ঘোষিত মেডিকেল টিমে বিগত বছরগুলোর মতোই নীতিমালার বদলে রাজনৈতিক বিবেচনা ও তদবিরেই অধিকাংশ চিকিৎসককে নির্বাচিত করা হয়েছিল। হজ্ব চিকিৎসক দলের সদস্য হিসেবে আসতে পারলে একেকজন চিকিৎসক হজ্ব করার পাশাপাশি নগদ ৮/১০ লাখ টাকা অতিরিক্ত আয় করেন। এ কারণে অনেকেই প্রভাবশালীদের মাধ্যমে তদবির করে এমনকি নগদ টাকা উৎকোচ দিয়েও দলে যোগ দেন!
গতকাল সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় , ঘোষিত চিকিৎসক দলে সহায়ক কর্মীদের কয়েকজন কাজ করছেন বাকিদের কথা জিজ্ঞাসা করলে কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আরকে//