স্বামীর কিডনি ‘বিক্রি’ করল স্ত্রী
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০২:৪৭ পিএম, ৯ আগস্ট ২০১৯ শুক্রবার
প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে স্বামীর কিডনি ‘বিক্রি’ করে দিয়েছে স্ত্রী। ভারতের দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এ ঘটনা ঘটে। দেশটির আলিপুর আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, দক্ষিণ ২৪ পরগনার গঙ্গাসাগরের বাসিন্দা উত্তম মাইতি এ প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন। তিনি একটি বেসরকারি সংস্থার পদস্থ আধিকারিক।
এ ব্যাপারে উত্তম মাইতি জানান, ২০১১ সালে বাগুইআটির বাসিন্দা জুঁই সাহা নামে এক নারীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তারপর বিয়ে হয়। পরে ২০১৪ সালে তাদের যমজ সন্তান জন্ম গ্রহণ করে।
কিন্তু ২০১৬ সালে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে উত্তমের কিডনি অন্য জায়গায় বিক্রি করে দেয় তারই স্ত্রী জুঁই সাহা।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে উত্তম জানান, জুঁইয়ের মা গীতাবানু অসুস্থার ভান করে ই এম বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন আমাকে জানানো হয় যে তার শাশুড়িরর দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে।
শাশুড়ির আর আমার ব্লাড গ্রুপ এক। তাই মাকে বাঁচাতে জুঁই আমার কিডনি চেয়ে চাপ দিতে থাকে। পরে আমি স্ত্রীর চাপে শাশুড়িকে একটি কিডনি দান করে দেই। কিন্তু পুরো ঘটনা ছিল সাজানো। তারা প্রতারণা করে আমার কিডনি অন্য জায়গায় বিক্রি করে দেয়।
আদালতে উত্তম জানান, ‘‘২০১৬ সালের নভেম্বরে আমার কিডনি নেওয়া হয়। ওই সময়ে শাশুড়িও হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। কিডনি দান করার কয়েক সপ্তাহ পর থেকেই সাংসারিক নানা বিষয় নিয়ে আমার সঙ্গে ঝগড়া করে মাঝেমধ্যে বাপের বাড়িতে চলে যেত জুঁই। ২০১৮ সালের অগস্টে দুই মেয়েকে রেখে পাকাপাকি ভাবে সেখানে চলে যায় সে।
দুই মাস আগে জুঁইয়ের আলমারি থেকে একটি ফাইল খুঁজে পাই। তাতে তার ছবির নীচে লেখা রয়েছে সাবির আহমেদ। সেই সাবির এক মহিলাকে কিডনি দান করেছেন বলে নানা নথি রয়েছে।
তিনি সব নথি খতিয়ে দেখে দাবি করেন, তার শাশুড়ির কিডনি আদৌ নষ্ট হয়নি। মা ও মেয়ে মিলে ভুয়া নামে তার কিডনি সাড়ে তিন লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। ওই কিডনির গ্রহীতার খোঁজও পেয়েছেন তিনি।
ফোনে উত্তমবাবুর স্ত্রী জুঁইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘কোনও ভাবেই জোর করে কিডনি বিক্রি করা হয়নি। উত্তম নিজের ইচ্ছায় ওই কিডনি বিক্রি করেছে। আমার মা এ বিষয়ে সব কিছু জানেন। আমি ওই কিডনি বিক্রি করিনি। সংসারে আর্থিক অনটনের জন্যই আমি বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছি।’’
উত্তমবাবুর আইনজীবী অভিষেক হাজরা বলেন, ‘‘আমার মক্কেলের কাছে কিডনি দানের সব রকম নথিই রয়েছে। ওই ঘটনায় উত্তমবাবুর স্ত্রী, মা ও শ্যালিকার কী ভূমিকা ছিল, সেই সংক্রান্ত নথিও আমাদের হাতে এসেছে। সব কিছুই বিচারকের কাছে পেশ করা হয়েছে।’’
বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারক সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে উত্তম মাইতির আইনজীবী ওই অভিযোগ পেশ করেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, বিচারক অভিযোগ গ্রহণ করেছেন। আগামী সপ্তাহে মামলার শুনানি শুরু হবে।
উত্তম মাইতির আইনজীবীদের অভিযোগ, বাইপাসের ওই হাসপাতালে একাধিক বার উত্তমবাবুকে নিয়ে যাওয়া হয়। এবং তাকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখেই নানা ভাবে ভুয়া নথি তৈরি করে ওই কিডনি বিক্রি করা হয়েছে।
তার শাশুড়িকে সামনে রেখে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় অন্য এক মহিলার দেহে। নথিপত্র যাচাই করা হলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলে তাদের দাবি। এক আইনজীবী বলেন, ‘‘উত্তম মাইতির স্ত্রী ও শাশুড়ি কিডনি পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত কি না, তা তদন্তসাপেক্ষ। আমরা বিচারকের কাছে পুরো বিষয়টির তদন্তের আর্জি জানিয়েছি।’’
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার
এমএইচ/