মেঘনার ভাঙ্গনে হুমকির মুখে হাজারও মানুষ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:০৭ পিএম, ৯ আগস্ট ২০১৯ শুক্রবার
প্রতিনিয়ত তীব্র হচ্ছে নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে মেঘনা নদীর ভাঙ্গন। ভাঙ্গছে নতুন নতুন এলাকা। এতে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, ফসলী জমি, হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা। এতে বাস্তুহারা হচ্ছেন উপকূলীয় অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, প্রস্তাবিত মেঘা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন রোধের পাশাপাশি আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে দক্ষিণাঞ্চলের এই জেলার।
জেলার কৃষি ও মৎস সম্পদের ভান্ডার দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া ও ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। ছোট ছোট চর ও দ্বীপের সমন্বয়ে এ উপজেলা পর্যটকদের নজর কাড়লেও তা ভাঙ্গনের কবলে হারাতে বসেছে। এর মধ্যে মেঘনার তীব্র ভাঙ্গন আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে চিরন্তন সংগ্রামের মধ্যে টিকে রয়েছেন স্থানীয়রা। তবে এখন ভাঙ্গনের তীব্রতায় সেই সংগ্রাম যেন মাত্রাতিক্তভাবে বাড়েছে। নদীর তীব্র স্রোত আর জোয়ারের পানিতে প্রতি বছর বিলীন হচ্ছে এখানকার গ্রাম, হাট-বাজার, পাকা ও কাঁচা সড়ক, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মন্দির, বেড়িবাঁধসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। স্থানে স্থানে বালু ভর্তি বস্তা ফেলেও ভাঙ্গন ঠেকানো যাচ্ছে না।
হাতিয়া চানন্দী ইউনিয়নের প্রশাসক মুশফিকুর রহমান জানান, যুগ যুগ ধরে হাতিয়া ভাঙ্গছে। কোনো কোনো এলাকার মানুষ একাধিকবার ভাঙনের শিকার হয়েছেন। ভাঙ্গনের ফলে বাস্তুহারা দ্বীপবাসী এখন বেড়িবাঁধসহ সরকারি খাস জমিতে বসবাস করছেন। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষের দারিদ্রতা চরম সীমায় পৌঁছেছে। ফলে স্থানীয়রা বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক অধিকার থেকে।
বয়ারচরের বাসিন্দা আবদুর রহিম জানান, এ পর্যন্ত তার পরিবার ৮ বারের মতো নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে। পরিবার নিয়ে তিনি এখন চতলার ঘাট থেকে এক কিলোমিটার উত্তরে বেড়িবাঁধ এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। যেখানেও নদীয়র ভাঙ্গন তেমন একটা দূরে নয়। এখন প্রতিনিয়ত এই আশ্রয়টুকুও হারানো ভয়ে থাকতে হয়ে রহিমের পরিবারকে।
তিনি জানান, শুধু হাতিয়া নয়। প্রতিনিয়ত ভাঙনের কবলে বিলিন হচ্ছে সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নও। এতে নদীগর্ভে বসতভিটে হারিয়ে সর্বহারা যাচ্ছে তিন উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। বাস্তুহারা এসব মানুষ বেড়ি বাঁধ, সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্প বা খোলা আকাশের নীচে কোনো রকম নতুন করে টিকে থাকার সংগ্রাম করছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহী ইউনিয়নের বকুল বেগম জানান, ১৯৮৫ সাল থেকে নদীর ভাঙ্গনের কারনে এ পর্যন্ত ১১ বার তিনি বসত ভিটা হারিয়েছেন। বসতভিটি ও সম্পদ রক্ষায় দ্রুত স্থায়ী নদী রক্ষা বাঁধ ও সবুজ বেস্টুনি গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, ভাঙ্গন বন্ধ করতে না পারলে অচিরেই নদী গর্ভে বিলিন হবে উপকূলীয় বিশাল এ জনপদ।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৮৫ কিলোমিটার জুড়ে ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। হাতিয়ার মূল ভূখন্ডের নলচিরা, সুখচর, নিঝুমদ্বীপ, চর ঈশ্বর (উত্তরাংশ)। নদীর উত্তরাংশে বয়ারচর, কেয়ারিংচর, নলেরচর, নঙ্গলিয়া। সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লার্ক, মোহাম্মদপুর ও চরবাগ্যা। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর, চরএলাহী, চর লেংটা, গাংচিল ও চরবালুয়া। গত ১০ বছরে এসব এলাকার ১১ হাজার হেক্টরেরও বেশি ফসলি জমি বিলিন হয়েছে। বসতভিটা হারিয়েছেন অন্তত ৩০ হাজার মানুষ।
সূত্র আরও জানায়, চলতি বছর সুবর্ণচর উপজেলার চর বাগ্গা এলাকায় নতুন করে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। বিশাল এলাকায় এ ভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
নোয়াখালীর পানি উন্নয়ন বোর্ড’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাছির উদ্দিন বলেন, ‘নদী ভাঙ্গন রোধে বিকল্প বেড়িবাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন রোধে একটি মেঘা প্রকল্প চলতি মাসের ১১ জুলাই মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। যার ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এ প্রকল্প ইতোমধ্যে মন্ত্রণায় গ্রহণ করে একটি কমিটিও গঠন করে দিয়েছে। কমিটি কাজও শুরু করেছে।
বৃহত্তর নোয়াখালীর লক্ষ্মীপুর, ফেনী ও নোয়াখালীর উপকূলীয় ১২৬, একই সাথে শুধু হাতিয়ার মধ্যে ৮৬ কিলোমিটার জুড়ে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে থাকবে নদী শাসনও। তার দৃষ্টিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন রোধের পাশাপাশি আর্থসামাজিকভাবে উন্নয়ন হবে জেলার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। একই সঙ্গে এটি হবে দেশের অন্যতম পর্যটন অঞ্চল।’
এমএস/কেআই