কাশ্মীর ইস্যু
ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি সামরিক হুশিয়ারি
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৩৩ এএম, ১০ আগস্ট ২০১৯ শনিবার
কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার সর্বোচ্চ স্থানে ভারত-পাকিস্তান। দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা পারমাণবিক শক্তিধর দেশদুটির মধ্যে এ উত্তেজনায় নতুন করে পারদ ঢেলে দিয়েছে ভারত। গত (৫ আগস্ট) ভারতের সংবিধানে দেয়া কাশ্মীরিদের জন্য বিশেষ মর্যাদা বাতিল করায় সম্পর্কের অবণতি চূড়ান্ত মাত্রায় রুপ নেয়।
বিলটি পাসের পর থেকে পাকিস্তান ভারতকে মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আসছে। এরই মধ্যে সমুদ্র উপকূল ও কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানভিত্তিক হামলার আশঙ্কা করছে দেশটির নৌবাহিনী। তবে ভারতে কোনো হামলা চালানো হলে এর উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন দেশটির এক সেনা কর্মকর্তা।
অপরদিকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, ভারত আগ্রাসন চালালে এর কঠোর জবাব দেয়া হবে। তবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তারা সংকটের সমাধানে আপাতত কূটনৈতিক পথে এগোবেন।
এই পরিস্থিতিতে উভয় রাষ্ট্রকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা দুই দেশের আলোচনার মাধ্যমেই কাশ্মীর ইস্যুর সমাধান চায়।
এদিকে সোমবার ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫-এ ধারা বাতিলের আগের রাত থেকেই জম্মু-কাশ্মীরে ১৪৪ ধারা জারি করে রেখেছে মোদি সরকার। গত কয়েকদিন ধরে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ থাকলেও শুক্রবার জুমার নামাজকে কেন্দ্র করে অবস্থা কিছুটা শিথিল এবং কিছু এলাকায় আংশিক ফোন ও ইন্টারনেট সেবা চালু করা হয়।
অন্যদিকে, সদ্যঘোষিত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখের কারগিল, দ্রাস ও সাঙ্কো এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছেন কারগিলের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জম্মু-কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির জেরে নৌপথে সন্ত্রাসবাদী হামলার আশঙ্কায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নৌসেনার এক আধিকারিক শুক্রবার বলেন, ‘আমাদের ওপর এই মুহূর্তে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে।’
জানা গেছে, উপকূলে নজরদারির জন্য রাডার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। নিরাপত্তার স্বার্থে অবিলম্বে মৎস্যজীবীদের নৌকায় ‘বন্ধু না শত্রু’ চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়া চালুর জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছে নৌসেনা।
এদিন দিল্লিতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্য ভারতীয় সেনার চিনার কর্পসের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল কাওয়ালজীত সিং বলেন, অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করলে ফল ভালো হবে না।
গোয়েন্দারা জানিয়েছে, ভারতে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছে পাকিস্তানভিত্তিক ‘জইশ-ই-মুহম্মদ’।
এরপরই কাওয়ালজীত বলেন, কাশ্মীর উপত্যকায় কেউ এলে এবং শান্তিতে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করলে তাকে নির্মূল করে দেব আমরা।
এই হুঁশিয়ারির পরপরই পাকিস্তানের ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন্সের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আসিফ গফুর টুইট করে কাওয়ালজীতের বক্তব্যকে মিথ্যা বলে অভিযোগ করেছেন।
তিনি লেখেন, দখলকৃত জম্মু-কাশ্মীরে ভয়াবহ ও নৃশংসতা থেকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি সরিয়ে নিতেই এসব মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। আরেক টুইটে তিনি বলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী কোনোরকম ‘মিস অ্যাডভেঞ্চার’ চালালে ২৭ ফেব্রুয়ারির চেয়ে আরও কঠোর জবাব দেবে পাকিস্তান।
তবে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর থেকে কয়েক দশকের পুরনো সাংবিধানিক বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয়ার ঘটনায় উত্তেজনা বাড়লেও পরিস্থিতি মোকাবেলায় এখনই সামরিক পদক্ষেপের কথা ভাবা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি।
তিনি বলেন, আমরা সামরিক বিকল্পের কথা ভাবছি না। কিন্তু আমরা কি ভারতের যেকোনো আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়া দেখানোর অধিকার রাখি। পাকিস্তান রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও আইনি বিকল্পের কথা ভাবছে।
এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস কাশ্মীর ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারত ও পাকিস্তানকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখাতে বলেছেন। জম্মু-কাশ্মীরের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হতে পারে, এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। একইসঙ্গে এই ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষের নাক গলানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে শিমলা চুক্তি সমুন্নত রাখতে বলেছেন।
মহাসচিবের এ আহ্বানের কথা তুলে ধরেন তার মুখপাত্র স্টেফানে দুজারিক।
টুইটারে দেয়া এক ভিডিও বিবৃতিতে জাতিসংঘের মুখপাত্র রুপার্ট কোলভিল কাশ্মীরে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সংস্থাটির উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, আগের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কর্তৃপক্ষ কীভাবে বারবার যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে মতপ্রকাশ বন্ধ করতে চাইছে, স্থানীয় সোচ্চার রাজনৈতিক নেতাদের আটকে রাখার পন্থা নিয়েছে এবং বিক্ষোভকারীদের দমনে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছে, যার মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাও রয়েছে।
তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বাসিন্দারা জম্মু-কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নিয়ে গণতান্ত্রিক কোনো প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে না।
কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানকে শান্তি বজায় রাখতে ও সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কাশ্মীরের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসবে না বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র মরগ্যান ওরটেগাস।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি হচ্ছে, কাশ্মীর ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় ইস্যু। যুক্তরাষ্ট্র চায়, কাশ্মীর ইস্যুতে দুই দেশ আলোচনায় বসুক।
কাশ্মীর ইস্যুতে চীনা সরকারের পক্ষ থেকে শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তান ও ভারত দু’পক্ষকেই আমরা আহ্বান জানাই, যা বিতর্ক আছে, আলোচনা ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে তা মিটিয়ে নিন। কারও পক্ষেরই উচিত নয়, একতরফাভাবে কিছু পরিবর্তন করা। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর বেজিংয়ের বেশি মাথাব্যথা ভারত-চীন সীমান্তের লাদাখ নিয়ে। ৬ আগস্ট বেইজিংয়ের প্রতিক্রিয়া ছিল, নয়াদিল্লির এই সিদ্ধান্তে চীনের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
ওদিকে জম্মু-কাশ্মীরে টানা পাঁচদিনের অবরুদ্ধ অবস্থার পর শুক্রবার সকালে ফোন ও ইন্টারনেট সেবা আংশিকভাবে চালু করা হয়েছে। জুমার নামাজের সুবিধার্থে চলাচলের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাও শিথিল করা হয় বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
ছোট ছোট মসজিদ খুলে দেয়া হয়। জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি, ওমর আবদুল্লাহসহ প্রায় ৪০০ রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেফতার করেছে ভারত সরকার। কারফিউ ও অন্যান্য বিধিনিষেধ সত্ত্বেও বেশিরভাগ কাশ্মীরি পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে শ্রীনগর যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
অপরদিকে লাদাখের কারগিলের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে জানানো হয়, ১৪৪ ধারার অধীনে কোনো স্থানে চারজন বা এর বেশি মানুষের জমায়েত হলেই শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়া হবে। এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া
আই/