‘গ্রামে ডেঙ্গু হওয়ার ঝুঁকি কম’
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:১৭ পিএম, ১১ আগস্ট ২০১৯ রবিবার | আপডেট: ০৬:২৪ পিএম, ১১ আগস্ট ২০১৯ রবিবার
সারা দেশে ডেঙ্গু এখন আতঙ্কের নাম। ডেঙ্গু আতঙ্ক নিয়ে ঈদের ছুটিতে রাজধানী ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ। এই সুযোগে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। কিন্তু এই আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে আশার বাণী শুনিয়েছেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ।
যদিও গ্রামে ডেঙ্গু বিস্তারের কোনও খবর এখনও জানা যায়নি। এডিস মশার বাস মূলত শহরকেন্দ্রিক, সেটা ঢাকা শহর হোক বা জেলা শহর হোক। সারা দেশে যতটুকু ছড়িয়ে গেছে বলা হচ্ছে,আসলে তা শহরে, গ্রামে নয়। সুতরাং গ্রামে গিয়ে কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও তার দ্বারা অন্য কারোর আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কিংবা ঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছেন এই চিকিৎসক।
ঢাকা বা অন্যান্য শহর থেকে ঈদে যারা গ্রামে যাবেন, তাদের জন্য পরামর্শও দিয়েছেন এবিএম আব্দুল্লাহ। তিনি বলেছেন, যিনি এখন জ্বরে আক্রান্ত,তার গ্রামে না যাওয়াই ভালো। কেননা সেখানে গিয়ে সমস্যা বাড়লে বিপদ হতে পারে। যার জ্বর হয়েছিল এখন ভালো হয়ে গেছে, তিনি গ্রামে যেতে পারবেন, তার জন্য তেমন কোন সমস্যা নেই। যারা গ্রামে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন, তারা সেখানে যথাযথ চিকিৎসা নেবেন, মশারির নিচে অবস্থান করবেন এবং পরিপূর্ণ বিশ্রাম নেবেন।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, চলতি মাসের এ কয়েক দিনেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে।
এদিকে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ডেঙ্গু আক্রান্ত কোন ব্যক্তিকে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে রোগতত্ব, রোগ-নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট। তবে কেউ এডিস মশার কামড়ে সংক্রমিত হওয়ার পরও জ্বর না আসলে তার মধ্যে ডেঙ্গু সনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে।
ডেঙ্গুর প্রকোপ মূলত ঢাকায় হলেও ঢাকার বাইরে বেশ কয়েকদিন ধরে প্রতিদিন গড়পড়তা পাঁচ’শ জন এই মশাবাহিত ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বরং আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে-বিভিন্ন জেলায় সরকারি হিসেবে ১৭১২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, আর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দেড় হাজার মানুষ।
অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে আসন্ন ঈদুল আজহার সময় বিপুল সংখ্যক মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেলে এই ভাইরাস সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মেহেরজাদী সাব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, ঢাকা থেকে যারা যাবেন তাদের মধ্যে একটা অংশ কোনো না কোনো ভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন।
তিনি বলেন, কিন্তু এদের মধ্যে কারও হয়তো জ্বর থাকবে, আবার কারও হয়তো তখনো জ্বর নেই কিন্তু পরে জ্বর হতে পারে। তাই এটা প্রতিরোধে, কারও যদি জ্বর থাকে তাহলে তিনি যেন ভ্রমণ না করেন। জ্বর থাকলে যেন পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন যে এটা ডেঙ্গু কি-না?
কারণ ‘ঢাকায় থাকে এডিস অ্যাজিপ্টি। ঢাকার বাইরে থাকে এডিস অ্যালবোপিক্টাস। অ্যাজিপ্টি যত বেশি মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে, অ্যালবোপিক্টাসের এই রেটটা অনেক কম। গ্রামে যেহেতু অ্যালবোপিক্টাস বেশি থাকে, তাই সেক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ হলেও সেটা এতো দ্রুত হবে না যেটা ঢাকায় হয়েছে। সুতরাং সে হিসেবে ইনফেকশনের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে ঢাকার বাইরে কম হবে। তাই ঢাকার বাইরে আমরা ঢাকার মতো ডেঙ্গু অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছি না।’
জীবাণুবাহী এডিস মশা ছাড়া কিউলেক্স বা অন্য মশা কাউকে কামড়ালে ডেঙ্গু হয় না। কিছু ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে এ ধরনের আশঙ্কা করা হয়, যেকোনো মশা যখন কামড়ায়, তার মুখে ওই রক্তটা থাকে, তাই জীবাণু ছড়াতে পারে। এটা কিন্তু প্রমাণিত সত্য নয়। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও সচেতন থাকতে হবে।
কেআই/