কাশ্মীর ইস্যুতে মুখোমুখি ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০২:৩৩ পিএম, ১৩ আগস্ট ২০১৯ মঙ্গলবার
কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি শান্ত বলে বার বার উল্লেখ করছে ভারত সরকার। উপত্যকাটির 'বিশেষ মর্যাদা' তুলে নেওয়ার পর গত ছয় দিনে একটি গুলিও চলেনি বলে প্রচার করা হচ্ছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে। তবে বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্সসহ বেশকিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে ভিন্ন কথা।
গণমাধ্যমগুলোর বিভিন্ন প্রতিবেদনে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, কাশ্মীরের পরিস্থিতি শান্ত হলে শ্রীনগরের হাসপাতালে প্রতিদিন কাশ্মীরি যুবকরা ভর্তি হচ্ছেন কেন? তাদেরকে ছররা গুলির আঘাতে আহত করা হচ্ছে কেন?
তবে এহেন পরিস্থিতিতে ভারতীয় গণমাধ্যম প্রশ্ন তুলেছে এসব প্রতিবেদনে উল্লেখিত বিষয়ের সত্যতা নিয়ে। মঙ্গলবার স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের মতো প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আনন্দবাজার পত্রিকাও।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে 'অন্য কাশ্মীর'- শিরোনামে কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে- অবরুদ্ধ, বিভ্রান্ত, সন্ত্রস্ত, ক্রুদ্ধ। মোদি সরকারের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ করার সিদ্ধান্তের পর কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের মানসিক অবস্থা বোঝাতে এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
৯ ও ১০ আগস্ট নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদনে কাশ্মীরের 'বর্তমান পরিস্থিতি' তুলে ধরা হয়েছে। প্রথম দিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক সপ্তাহ ধরে কাশ্মীর উপত্যকাটিকে কার্যত গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। হাজার হাজার ভারতীয় সেনা রাস্তা আটকে, স্কুল-কলেজ বন্ধ করে, সাধারণ মানুষের বাড়ির ছাদ দখল করে নিয়েছে। ইন্টারনেট, মোবাইল ও ল্যান্ডলাইন বন্ধ, ফলে বাইরের দুনিয়ায় যোগাযোগের কোনও উপায় নেই।'
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, 'ভারত সরকারের দাবি, এই পদক্ষেপগুলো এলাকার আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য জরুরি। মানবাধিকারকর্মীরা অবশ্য এর সঙ্গে বন্দিদশার তুলনা করছেন!'
মার্কিন সংবাদপত্রটির মতোই ব্রিটিশ টিভি চ্যানেল ও গণমাধ্যম বিবিসি-ও দাবি করেছে যে, বিক্ষোভ সামলাতে গুলি বা ছররা ছুড়েছে ভারতীয় সেনা। গত ৯ অগস্ট এমন একটি ভিডিও সম্প্রচার করে বিবিসি। তাতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ছররা ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে সেনারা। ছররা চালানোর শব্দও পাওয়া যাচ্ছে। ভিডিওটি সেইদিনই শ্রীনগরে তোলা হয়েছে বলে দাবি করেছে ব্রিটিশ চ্যানেলটি।
নিউ ইয়র্ক টাইমসও দাবি করেছে, প্রতিবাদকারীদের ধারে-কাছে ঘেঁষতে না দিলেও তাদের সাংবাদিকরাও ছররা চালানোর শব্দ শুনতে পেয়েছেন।
এদিকে সাংবাদিকদের শ্রীনগরে ঢোকার উপরে বিধিনিষেধ থাকলেও যে কোনওভাবে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের কিছু প্রতিনিধি শ্রীনগরে ঢুকে পড়েছেন বলে দাবি করেছে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। এর মধ্যে নিউ ইয়র্ক টাইমস ছাড়াও রয়েছেন রয়টার্স ও এএফপি'র চিত্র সাংবাদিকরা। তাদের তোলা ছবিতে উঠে এসেছে বিক্ষোভের নানা মুহূর্ত। 'ছররা ও পদপিষ্ট হয়ে আহতদের' ছবিও ধরা পড়েছে তাতে।
আফসানা ফারুক (১৪) নামে শ্রীনগরের হাসপাতালে যন্ত্রণাক্লিষ্ট এক কিশোরীর ছবি ছেপে নিউ ইয়র্ক টাইমস দাবি করেছে, শ্রীনগরে কাশ্মীরিদের একটি বিক্ষোভ-সমাবেশের ওপর সেনাবাহিনী ছররা চালাতে শুরু করলে ভিড়ের ভেতর পদপিষ্ট হয় ওই কিশোরী।
তবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর এসব দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করে সোমবার বিবৃতি দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আজ ওই অভিযোগ খণ্ডন করে টুইট করেছে বিবিসি। টুইটে বলা হয়, 'কাশ্মীরে যা হচ্ছে আমরা তার ভ্রান্ত ধারণা তুলে ধরছি'- বলে ভারতের এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমরা নিরপেক্ষ ও সঠিকভাবে পরিস্থিতি তুলে ধরছি। আমরাও কাশ্মীরে যথেষ্ট বাধ্যবাধকতার মধ্যে কাজ করছি। আসলে কী ঘটে চলেছে- আমরা মূলত তা-ই দেখিয়েছি এবং দেখিয়েই যাব।' সূত্র- বিবিসি, রয়টার্স ও নিউ ইয়র্ক টাইমস।
এনএস/