জয়পুরহাটে মাটিতে চামড়া ফেলে রেখেছে ব্যবসায়ীরা
জয়পুরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৭:৩৩ পিএম, ১৫ আগস্ট ২০১৯ বৃহস্পতিবার
জয়পুরহাটে কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে। জেলার বাজারগুলোতে গত বছরের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগ দামে চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। স্বল্প দামেও বিক্রি না হওয়ায় মাটিতে ফেলে রাখা হয়েছে চামড়া। অন্যদিকে হতদরিদ্ররাও চামড়া বিক্রির টাকার যে অংশটা পেয়ে থাকে তা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে তারা।
জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে জেলায় বিভিন্ন বাজারে প্রতিটি ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এবার আকারভেদে তার দাম পড়ছে ৭০ থেকে ৮০ এবং ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। এছাড়া গেল বছরে প্রতিটি গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায় হলেও এবার তা নেমেছে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায়।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার হেলকুন্ডা গ্রামের আনিছুর রহমান, কালাই উপজেলার হাতিয়র গ্রামের গোলাম রব্বানী, ক্ষেতলাল উপজেলার দাশড়া গ্রামের হানিফ হোসেনসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজন জানান, বিগত ১০ বছরের চামড়ার এমন মন্দা বাজার তারা দেখেননি।
চামড়া বাজারে এমন ধসের কারণে লোকসানের শিকার হচ্ছেন জেলার প্রায় সব মৌসুমি ব্যবসায়ী। জয়পুরহাট জেলা শহরের নতুনহাট এলাকার ইদ্রিস আলী, জামালগঞ্জ বাজারের মতিউর রহমানসহ মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানির চামড়ার এ দরপতনে দিশেহারা মধ্যস্বত্বভোগী চামড়া ব্যবসায়ীরা। প্রতি বছর কোরবানির সময় দুই একদিনের এ ব্যবসায় অর্থ বিনিয়োগ করে ভালো মুনাফা অর্জন করলেও এবার বিপাকে পড়েছেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ওপারে কিছু চামড়া পাঠিয়ে মুনাফা অর্জন করতে পাড়লেও এবার সীমান্তে কড়াকড়ি হওয়ায় সেই পথের কথা চিন্তা করতে পারছেন না তারা। পুঁজি সংকট, ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া পাওনা ইত্যাদি কারণে চামড়ার দাম পড়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা। জয়পুরহাট শহরের চামড়া ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, ‘ট্যানারি মালিকদের কাছে লাখ লাখ টাকার বকেয়া পাওনা রয়েছে। হাতে টাকা না থাকায় তারা কাঙ্খিত পরিমাণে চামড়া কিনতে পারছেন না। ফলে বাজারে চাহিদা কম থাকায় চামড়া মূল্য স্বাভাবিক কারণে কমেছে।’
অন্যদিকে চামড়া পাচার রোধে সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’র (বিজিবি) টহল বাড়ানো হয়েছে। এতে দেশের স্থানীয় বাজারেই কেনাবেচা হচ্ছে চামড়া। ফলে চাহিদা খানিকটা কম হওয়ায় দরপতন ঘটছে বলে দাবি করেন কয়েকজন ব্যবসায়ী।
জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল রাশেদ মোহাম্মদ আনিসুল হক জানান, জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীনে প্রায় ৪১ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা রয়েছে। যার মধ্যে ২২ কিলোমিটার এলাকা তারকাঁটা থাকলেও ১৮ কিলোমিটার সীমান্ত উন্মুক্ত। চোরাকারবারিরা উন্মুক্ত এ সীমান্তকে তাদের পাচারের পথ হিসেবে ব্যবহার করে বলে ঐ স্থানসমূহকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। চামড়া পাচার রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন তারা বলে জানান এ বিজিবি কর্মকর্তা।
চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে হলে রপ্তানী বাড়ানোর পাশাপাশি চামড়া ব্যবসায়ী ও ট্যানারী মালিকদের সহজ শর্তে ঋন সুবিধার দাবী জানিয়েছেন এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা।
এমএস/এনএম