ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

বেনাপোল থেকে ঢাকায় ফেরার টিকেট সংকট,বিপাকে যাত্রীরা 

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি: 

প্রকাশিত : ০৬:৪০ পিএম, ১৬ আগস্ট ২০১৯ শুক্রবার

সীমানা পেরিয়ে দেশে ঢুকে নিজের গন্তব্য যেতে মিলছে না বাসের টিকিট। তেমনি ঈদের ছুটিতে পরিবারের সাথে ঈদ পালন করতে এসে ফিরে যেতেও  পড়ছেন মহাবিপাকে ।  বাস ট্রেন কোথাও টিকিট নেই। দ্বিগুণ চাহিদা বেড়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বাসের। যার কারণে ঈদে নাড়ির টানে গ্রামে এসে  কর্মস্থলে ফিরে যেতে এসি বাদে চেয়ার কোচেরও টিকিট পাচ্ছে না বেনাপোলের মানুষ। 

স্থানীয় লোকজন ঈদের আগেই বেনাপোল চেকপোস্ট, বাজার, নাভারন ও বাগআঁচড়ার বিভিন্ন বাস কাউন্টার ঘুরে কিছু মানুষ চেয়ার কোচের টিকিট সংগ্রহ করে কর্মস্থল ঢাকা, চট্রগ্রামে ফিরছে। কিন্তু আগামী মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) পর্যন্ত কোন টিকিট নেই বাসের। বেনাপোল থেকে ঢাকাগামী বেনাপোল এক্সপ্রেসেরও (ট্রেনের) টিকিট নেই। সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে ভারত ফেরত যাত্রীরা। পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদের ছুটি ও স্বজনদের সাথে দেখা সাক্ষাত করে দেশে ফিরে গন্তব্যে যেতে কোন টিকিট পাচ্ছেন না তারা। সেই সাথে টিকিটের দামও বাড়িয়েছে বাস মালিকরা। ১৩০০ টাকার এসি বাসে নেয়া হচ্ছে ১৪৫০ টাকা এবং ৫০০ টাকার নন এসিতে নেওয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা। ট্রেনের টিকিটও চলে গেছে দালালদের হাতে। বেশি টাকা দিলে ২/৪টি টিকিট মিলছে। কাউন্টার থেকে টিকিট নেই বলা হলেও ট্রেনের মধ্যে অনেক আসন খালি দেখা যাচ্ছে।

শুক্রবার (১৬ আগস্ট) সকাল থেকে বেনাপোল থেকে দেশের অভ্যন্তরে দূরপাল্লার গন্তব্যের যাত্রীদের দূর্ভোগ ছিল চোখে পড়ার মতো। শনিবার তা অনেটা বেড়ে যাবে। রোববার থেকে অফিস আদালত খুলছে। কর্মস্থলে ফিরতেই হবে। 
ঢাকার মিরপুরের খন্দকার বশির আহমেদ ঈদের লম্বা ছুটি পেয়ে পরিবার নিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন চিকিৎসা ও বেড়ানোর জন্য। তিনি জানান, শুক্রবার সকালে ভারত থেকে ফিরেছেন। কিন্তু বেনাপোল থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য পরিবহনে টিকিট এখনো পায়নি। তবে রাতের গাড়িতে টিকিট দিবে বলে একটি বাসের ম্যানেজার কথা দিয়েছেন। 


ভারত ফেরত যাত্রী তাতী বাজারের প্রদীপ সরকার বলেন, চিকিৎসা শেষ করতে এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে। রোববার অফিস খুলবে। এখন জরুরি ঘরে ফেরা প্রয়োজন। বাসে তো টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। যশোর থেকে কোনো এয়ারলাইন্সেও টিকিট নেই। যে ভাবে হোক গন্তব্যে ফিরতে হবে। 

বেনাপোলের ধান্যখোলা গ্রামের শামছুল আলম জানান, পরিবারের সাথে ঈদ করতে এসে আর কর্মস্থলে ফিরতে পারছি না। কোন টিকিট নেই বাস ও ট্রেনে।

বেনাপোলের স্থলবন্দরের এয়ার টিকিট এজেন্ট টাইম ট্রাভেল আ্যান্ড ট্যুরিজমের প্রতিনিধি হাসান বলেন, সড়কপথে বেহাল অবস্থার কারনে দিন দিন আকাশপথে যাত্রীর চাপ বাড়ছে। চাপ বাড়ায় এবার ঈদে এয়ারলাইন্সগুলো ফ্লাইট সংখ্যাও বাড়িয়েছে। তারপরেও সংকট থেকে যাচ্ছে। ঈদের পরের দিন থেকে অধিকংশ প্লেনের টিকিট নেই। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে  স্বাভাবিক হবে বলেও জানান তিনি। 

বেনাপোল চেকপোস্টের রাজা বাদশা মানি চেঞ্জারের  স্বত্বাধিকারী আবুল বাশার বলেন, চিকিকৎসা ও ভ্রমনের কাজে এপথে দিন দিন যাত্রী যাতায়াত বাড়লেও চাহিদা অনুযায়ী দূরপাল্লার বাসের সংখ্যা বাড়েনি। প্রতিবছর ঈদে, পূজাসহ বিশেষ উৎসবের সময় এ রুটে বাসের টিকিট না পেয়ে যন্ত্রণা ভোগ করতে দেখা যায় পাসপোর্টযাত্রীদের। একটি ট্রেন দিলেও তাতেও টিকিট থাকে না।

বেনাপোলের সবচেয়ে বেশী বাস চলাচলকারী সোহাগ পরিবহনের ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম জানান, ঈদের ছুটিতে যারা কর্মস্থল ঢাকা থেকে বেনাপোল ও শার্শায় এসেছেন তারা ছুটি শেষে আবারো কর্মস্থলে যোগদানের জন্য ছুটাছুটি শুরু করেছেন। আমাদের টিকিট অনলাইনে বিক্রি করি বিধায় সব কাউন্টার অগ্রিম টিকিট বিক্রি করে ফেলেছেন। আগামী ২০ আগস্ট পর্যন্ত কোন টিকিট নেই। এসি বাসের টিকিট ভারত থেকে বিক্রি হয়ে যাওয়ায় আমরা স্থানীয়দের কোন টিকিট দিতে পারছি না। কর্মস্থলে ফিরতি যাত্রীদের নিয়ে তার কোম্পানীর প্রায় ১৫টি এসি নন এসি বাস প্রতিদিন ঢাকার উদ্দেশ্যে বেনাপোল ত্যাগ করছে। ভাড়া রাখা হচ্ছে এসি ১৪৫০ টাকা ও নন এসি চেয়ার ৬০০ টাকা। তবে অনেকে এসি বাসের টিকিট না পেয়ে চেয়ার কোচে টিকিট সংগ্রহ করেছেন। তিনি বলেন, আগে চেয়ার কোচের চাহিদা ছিল বেশী। কিন্তু এখন এসি বাসের চাহিদা আগের তুলনায় বেড়েছে দ্বিগুণ। সবাই একটু আরামে যাতায়াত করতে চায়। তারা খরচের দিকে না তাকিয়ে  স্বাচ্ছন্দের দিকে তাকায়। 

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের শার্শা উপজেলা কমিটির সভাপতি সাজেদুর রহমান বলেন, বিগত দিনের চেয়ে বেনাপোল শার্শার মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। ঢাকামুখী কর্মসংস্থান ও ব্যবসা-বাণিজ্য বেড়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে বেনাপোলে এসি বাস ও ট্রেনের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করতে হবে বলে তিনি মনে করেন। 

এনএম