ঢাকা, সোমবার   ০৭ অক্টোবর ২০২৪,   আশ্বিন ২২ ১৪৩১

পানির অভাবে জাগ দিতে পারছে না চুয়াডাঙ্গার পাটচাষিরা

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৪:৩০ পিএম, ২২ আগস্ট ২০১৯ বৃহস্পতিবার

“আল্লায় যেন গজব দিয়িছে, আষাঢ় মাস শেষ হতি গেল পানি হচ্ছে না। খাল বিলি এক ছটাকও পানি নেই যে সেখানে পাট জাগ দিব। মহাজনের কাছে সুদির টেকায় ঋণ নিয়ে ১৫ কাটা জমিতে পাট চাষ করিলাম। এখন মাটের পাট নিয়ি চিন্তায় ঘুমিতে পারছি না।”

মাঠের পাট নিয়ে এভাবেই নিজের দুর্ভোগের কথা বলছিলেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের প্রান্তিক কৃষক ইন্তাজ মন্ডল। শুধু ইন্তাজ মন্ডলই নয়, চলতি বছর পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তার মতো হাজার হাজার কৃষক। পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না তারা কেউই। এমন দুর্ভোগে পড়ে অনেকের রাতের ঘুম হারাম হওয়ার যোগাড়।

দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিলেও বৃষ্টি নেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গায়। ভরা বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টি না হওয়াতে জেলার নালা, খাল-বিল ও পুকুরগুলোও ফেটে চৌচির অবস্থা। আর এতে করে জেলার কয়েক হাজার পাটচাষি পড়েছেন চরম বিপাকে। পানির অভাবে তারা পাট জাগ দিতে পারছেন না। পানি না পেয়ে অনেক কৃষকই ক্ষেতেই শুকাতে বাধ্য হচ্ছেন সোনালী আঁশ খ্যাত স্বপ্নের ফসল। এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন কৃষকরা।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার মাটি ও আবহাওয়া পাট চাষের জন্য খুবই উপযোগী। প্রতি বছর এ জেলার কৃষকরা অন্য ফসলের মতোই পাট চাষ করে থাকেন। গত বছরের মত বাজার দর ভালো হওয়ায় চলতি বছরও পাট চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন পাট চাষে।

কৃষি অফিসের তথ্য মতে, চলতি বছর জেলার চারটি উপজেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৫ হাজার ২শ হেক্টর জমি। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে পাটের আবাদ হয়েছে ১৫ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলাতে আবাদ হয়েছে ৫৯০ হেক্টর, দামুড়হুদায় ৬ হাজার ২৮৫ হেক্টর, আলমডাঙ্গায় ৬ হাজার ২শ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলাতে ২ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে।

জেলার চারটি উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ বিস্তীর্ণ পাটের ক্ষেত। মৃদু বাতাসের দোলে দুলছে পাট গাছ। আলমডাঙ্গা ও দামুড়হুদা উপজেলার কয়েকটি মাঠের চিত্র বলছে- বেশ আগেই পাট কাটার সময় পেরিয়ে গেছে কিন্তু পাট না কাটায় অনেকটা বিবর্ণ হয়ে গেছে পাটের চেহারা।

কথা হয় আলমডাঙ্গা উপজেলার বড় গাংনী গ্রামের কৃষক আব্বাস আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, বাপ দাদার আমল থেকে আমরা পাট চাষ করে আসছি। গত বছরের মতো ভালো লাভের আশায় এবারও ৫ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলাম। বিস্তীর্ণ ক্ষেতের সবুজ পাতা স্বপ্ন দেখাচ্ছিল সোনালী আঁশ ঘরে তোলার কিন্তু তা বিধি বাম। বৃষ্টির দেখা নেই কোথাও। পাট জাগ দিতে পারছি না।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া গ্রামের পাট চাষি আখের আলী বলেন, আষাঢ় পেরিয়ে এখন মধ্য শ্রাবণ। দেখা নেই কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির। মাঠের পাট কাটার সময়ও পেরিয়ে গেছে আগেই। পাট জাগ দিতে না পেরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়াচ্ছে পাট চাষিদের মাঝে। তাদের আশঙ্কা- সঠিক সময়ে পাট জাগ দিতে না পারলে ফলন বিপর্যয় হবে। এতে বড় লোকশানের আশঙ্কা তাদের।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক সুফী রফিকুজ্জামান বলেন, পাট চাষের জন্য চুয়াডাঙ্গার মাটি খুবই উপযোগী। এ কারণে প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে পাটের আবাদ। তিনি স্বীকার করেন, বৃষ্টির অভাবে সঠিক সময়ে পাট পচাতে না পারলে কিছুটা ফলন বিপর্যয় হতে পারে। তবে কৃষি বিভাগের তরফ থেকে কৃষকদের বিকল্প উপায়ে পাট পচানোর পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। এজন্য রেবন রেটিং প্রদ্ধতিসহ পুকুর ও ডোবা-নালাগুলো সেচের পানিতে ভরাট করে পাট পচানোর জন্য কৃষকদের বলা হচ্ছে।
 
এনএস/