ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

শিষ্টাচারী হবেন যেভাবে

মাসুদ আলম

প্রকাশিত : ০৯:২০ পিএম, ২২ আগস্ট ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৯:২২ পিএম, ২২ আগস্ট ২০১৯ বৃহস্পতিবার

সামাজিক মুখোশ নয়, অন্তর্গত শক্তিই হচ্ছে অপনার সত্যিকারের ব্যক্তিত্ব। আর অন্তর্গত শক্তির উৎস হচ্ছে সঠিক জীবনদৃষ্টি। সঠিক জীবনদৃষ্টির প্রকাশ ঘটে রুচিসম্মত পোশাক ও প্রসাধন, সদাচরণ, সুন্দর কথোপকথনে। সঠিক ব্যক্তিত্ব প্রকাশে দৈনন্দিন জীবনের আচরণ কী হওয়া উচিত তার কিছু উদাহরণ দেয়া হলো। বাস্তবতার আলোকে এ থেকে নিজেই আপনার আচরণের ভুলভ্রান্তিগুলোকে দূর করে চৌকষ ব্যক্তিত্ব হিসেবে চারপাশের মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারেন।

নীতিগতভাবে অনুসরণ করুন

কারো সাথে দেখা হলে আগে সালাম বা শুভেচ্ছা বিনিময় করুন। কাউকে  কিছু দেয়া-নেয়ার ক্ষেত্রে পারতপক্ষে ডান হাত ব্যবহার করুণ। কারো কক্ষে প্রবেশের সময় অনুমতি নিন, প্রবেশের সময় বিনয়ী ও আত্মপ্রত্যয়ী থাকুন। হাই উঠলে বা হাঁচি-কাশি এলে মুখের সামনে রুমাল বা হাত রাখুন। অন্যের চিঠি ডায়েরি এসএমএস পড়বেন না, এমনকি খুলেও দেখবেন না। কারো চেহারা, গায়ের রং, গড়ন নিয়ে মন্তব্য করে তাকে অস্বস্তিতে ফেলবেন না। ব্যাংকের কাউন্টারে, বাসে বা লিফটে ওঠার জন্য নির্ধারিত লাইনে দাঁড়ান। লাইনে অনেকের বিল একজনকে দিয়ে জমা করে অন্যায় সুবিধা নেবেন না। এপয়েন্টমেন্ট করা থাকলে নির্দিষ্ট সময়েই উপস্থিত হোন, মনে থাকার জন্য প্রয়োজনে লিখে রাখুন। বিশ্বস্ততার সাথে অন্যের গোপনীয়তা রক্ষা করুন। 

যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কারো বয়স বা বেতন জিজ্ঞেস করবেন না। পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে নিয়মবহির্ভূত সুবিধা নেবেন না। উপহাস বা ব্যঙ্গ করে কাউকে উপনাম বা বিকৃত নামে ডাকবেন না। কথায় কথায় কসম কাটা বা অভিশাপ দেয়া থেকে বিরত থাকুন। কারো ছবি তোলার আগে  তার অনুমতি নিন। অহেতুক বিলম্ব না করে কাজ শেষ হলে দ্রুত পারিশ্রমিক পরিশোধ করুন। অনুমতি ছাড়া অন্যকে করা প্রশ্নের উত্তর নিজে দেবেন না। কাউকে বোকা বানিয়ে বা অপ্রস্তুত করে ‘এপ্রিল ফুল’-এর মতো বিকৃত আনন্দে মেতে উঠবেন না। আমানতের প্রতি বিশ্বস্ত হোন, যে-জিনিস যেভাবে নিয়েছেন তা সেভাবেই ফেরত দিন। বিনা অনুমতিতে কারো জিনিস ধরা, ব্যবহার বা অপসারণ করা থেকে বিরত থাকুন। 

কথোপকথনে

শোনার সময় মনোযোগী হোন। ধীরে স্পষ্টভাবে শুদ্ধ ভাষায় এবং পরিমিত স্বরে কথা বলুন। কতটুকু বলছেন তা খেয়াল করুন, বলার ক্ষেত্রে কুশলী হোন। গায়ের জোরে মত চাপিয়ে দেবেন না। আগবাড়িয়ে বলার অভ্যাস ত্যাগ করুন। বুঝতে বা শুনতে অসুবিধা হলে ‘হুঁ’ বা ‘অ্যাঁ’ জাতীয় শব্দ না করে বলুন- ‘জী’ বা ‘দয়া করে আবার বলুন।’ একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলার সময় প্রত্যেকের দিকেই মাঝে মাঝে তাকান। অপরপক্ষকে তার বক্তব্য শেষ করতে দিন, তারপর আপনি বলুন। অপ্রাসঙ্গিক ও অহেতুক কথাবার্তা আপনার ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ন করবে। মুখের কাছে মুখ নিয়ে, গায়ে হাত দিয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। দুজনের কথার মাঝে কথা বলবেন না, কখনো বলে ফেললে ‘দুঃখিত’ বলুন। বাস্তব কারণে কখনো সত্য বলতে না পারলেও অহেতুক মিথ্যা না বলে নীরব থাকুন।

চলাফেরা

হেলেদুলে বা কুঁজো হয়ে নয়, ঘাড় সোজা রেখে সামনের দিকে দৃষ্টি দিয়ে স্বাভাবিকভাবে হাঁটুন। সঙ্গে কেউ থাকলে তাকে পেছন ফেলে রেখে এগিয়ে যাবেন না। দলবদ্ধভাবে কোথাও গেলে (বিশেষত নতুন স্থানে) কখনোই দলছুট হবেন না। দুজন কথা বলছেন-সে সময় তাদের মাঝ দিয়ে যেতে হলে ‘মাফ করবেন’ বলে মনোযোগ আকর্ষণ করুন। জুতো ঘষে বা শব্দ করে হাঁটবেন না। যথাসম্ভব নীরবে ও সন্তর্পণে চলাফেরা করুন। অন্যের চলাচলে অসুবিধা হয়- এমনভাবে পথ আগলে দাঁড়াবেন না। ভিড়ের মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে ঠেলা দেয়া বা ধাক্কাধাক্কি করা থেকে বিরত থাকুন। হঠাৎ করে অনিচ্ছাকৃত ধাক্কা লাগলে বা মুখোমুখি হয়ে গেলে ‘দুঃখিত’ বলুন। কারো অশালীন বা বিব্রতকর মন্তব্য ও আচরণকে এড়িয়ে যান। জলন্ত সিগারেট পড়ে থাকলে নিভিয়ে দিন। কলা বা  বাদামের খোসা, খালি প্যাকেট, পলিব্যাগ যথাস্থানে ফেলুন। সম্পূর্ণ অপরিচিত কেউ যেচে কথা বলতে এলে উত্তর দেয়ার ক্ষেত্রে কুশলী হোন।

পোশাক-প্রসাধনে

বয়স বুঝে সময় ও অনুষ্ঠান উপযোগী পোশাক ঠিক করুন। পরিচ্ছন্ন, মার্জিত ও শালীন পোশাক পরিধান করুন। খুব আঁটসাঁট না পরে কাজে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন-এমন পোশাক পরিধান করুন। ব্যবহার্য বা পরিধেয় কোনকিছুর মূল্য জিজ্ঞেস করবেন না, যদি তিনি নিজে থেকে না বলেন। খালি গায়ে কারো সামনে আসবেন না। চোখের কোনে ময়লা, মুখ ও ঘামের দুর্গন্ধের ব্যাপারে সচেতন থাকুন। ব্যবহৃত পারফিউম, জুতোর হিল বা অলংকারের শব্দে যাতে অন্যের অসুবিধা না হয় তা খেয়াল রাখুন। তথাকথিক স্মার্ট  সাজতে গিয়ে ছেলেরা মেয়েদের  বা মেয়েরা ছেলেদের  পোশাক পরা থেকে বিরত থাকুন।

এসি