লেনদেন বন্ধের পথে সোনালী ব্যাংকের বাগেরহাট শাখা
বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৯:২৪ পিএম, ২২ আগস্ট ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৯:২৭ পিএম, ২২ আগস্ট ২০১৯ বৃহস্পতিবার
জরাজীর্ণ ভবনের পলেস্তরা খসে পড়ে সোনালী ব্যাংক, বাগেরহাট কোর্ট বিল্ডিং শাখার লেনদেন প্রায় বন্ধ রয়েছে। সঠিক সময়ে ব্যাংকিং সেবা না পেয়ে বিপাকে পড়েছে ওই শাখার প্রায় আড়াই হাজার গ্রাহক। চাকুরীর স্বার্থে কোনরকম ভবনের বাইরে বারান্দায় চেয়ার টেবিল নিয়ে গ্রাহকদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তবে কবে নাগাদ জরাজীর্ণ ব্যবহার অনুপযোগী ওই ভবন থেকে শাখার কার্যক্রম স্থানান্তর করা হবে তা ওই ব্যাংকের ব্যবস্থাপকও জানেন না।
এদিকে ভবনটি ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় বাগেরহাট জেলা প্রশাসন সোনালী ব্যাংকের ওই শাখার জন্য একটি ভবনও বরাদ্দ দিয়েছেন। তবে দাপ্তরিক জটিলতার কারণে ওই ভবনে যেতে পারছেনা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের সামনের বারান্দায় ৩-৪টি চেয়ার ও একটি টেবিল নিয়ে বসে আছেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা। গ্রাহকরা আসলে কোনরকম দুই একজনের টাকা শুধু জমা নিচ্ছেন। কাউকে কোন পেমেন্ট দিতে পারছেন না। ভিতরে ক্যাশ কাউন্টারের চেয়ারগুলো ফাকা, উপরে পানি রোধের জন্য পলিথিন দেওয়া। ব্যবস্থাপকসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদেরও চেয়ার ফাকা এবং ভবনের উপর থেকে প্লাস্তরা খসে পড়েছে। কয়েকদিন আগের বৃষ্টির পানিও পড়ছে ফোটা কেটে। ১৬ ও ১৭ আগস্টের টানা বর্ষণে ওই শাখার এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারপও ব্যাংকের কর্মকর্তারা জীবনের ঝুকি নিয়ে সেবা দিচ্ছিল গ্রাহকদের। এর মধ্যে কয়েকদিন আগে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে ওই শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার শাহ মোঃ ইকবালের মোবাইল ভেঙ্গে যায়। সর্বশেষ আজ সকালে অবস্থা বেগতিক দেখে ব্যাংকের কর্মকর্তারা শাখার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে বারান্দায় টেবিল চেয়ার নিয়ে বসেন। সেখানেও সেবা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে।
ব্যাংকের ২ হাজার ৫‘শ গ্রাহকের মধ্যে বিচারক, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনজীবি, মোহরারসহ অনেক গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তি রয়েছে। যারা সময়মত লেনদেন না করতে পেরে প্রচন্ড রকম বিপাকে পড়েছে। ব্যাংকের ওই শাখায় নতুন হিসেবে খুলতে আসা কাড়াপাড়া গ্রামের রঞ্জন মন্ডল বলেন, জরুরী প্রয়োজনে একটি ব্যাংক হিসেব খুলতে আসছিলাম। কিন্তু ব্যাংকে এসে দেখি বেহাল অবস্থা। এখন অন্য কোথাও চেষ্টা করতে হবে।
বাগেরহাট মোহরার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিঠু বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে এই শাখায় লেনদেন করতে খুব সমস্যা হচ্ছে। আমরা বারবার বলা স্বত্তেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ ভবন থেকে শাখা স্থানান্তরের কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না।
ব্যাংকের অফিসার কনিকা রানী বলেন, প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুকি নিয়ে এখানে কাজ করতে হয়। নতুন ভবন বরাদ্দ থাকা স্বত্তেও শুধু দাপ্তরিক জটিলতার কারণে যেতে পারছি না। এটা একধরণের হটকারিতা।
সোনালী ব্যাংকের কোর্ট বিল্ডিং শাখার ব্যবস্থাপক প্রসূন কুমার রায় বলেন, দীর্ঘদিন চেষ্টার পরে ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের নতুন ভবনে স্থানান্তরের অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আমাদের যে ভবন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, সেখানে সব ধরণের অবকাঠামো ও শাখার কার্যক্রম পরিচালনার উপযুক্ত করতে মোটামুটি তিন মাসের অধিক সময় লাগবে। আপাতত সোনালী ব্যাংক, বাগেরহাট শাখায় এই শাখার কার্যক্রম চালানোর প্রক্রিয়া চলছে।
সোনলী ব্যাংক খুলনার মহাপরিচালকের কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ জাহিদ বিন নাজিম বলেন, নতুন বরাদ্দকৃত ভবন পরিদর্শন করেছি। দুই একদিনের মধ্যে ওই ভবনের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির তালিকা প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে। আশা করি অনুমোদন হলে যতদ্রুত সম্ভব নতুন ভবনে উঠতে পারব।
সোনালী ব্যাংকের বাগেরহাট অঞ্জলের অঞ্চল প্রধান শেখ আল মামুন বলেন, ভবনটি জারজীর্ণ হওয়ায় সে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তা খুবদ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করছি।
আরকে/