ক্যান্সারে আক্রান্ত লেনিন তার মেয়েটির জন্য বাঁচতে চায়
সুজন হাজং, গীতিকার
প্রকাশিত : ০৭:১৭ পিএম, ২৪ আগস্ট ২০১৯ শনিবার | আপডেট: ০৮:২৬ পিএম, ২৪ আগস্ট ২০১৯ শনিবার
রাত ৩টা । ঘুম আসছে না । পুরনো কিছু স্মৃতি মনের কোণে উঁকি দিচ্ছে। আর বার বার মনে পড়ছে খুব আদরের ছোট ভাই লেনিনের কথা। আমি ঢাকায় থাকি আর লেনিন দুর্গাপুরে। দুর্গাপুর থেকে ঢাকার দূরত্ব প্রায় ১৮২ কিলোমিটার। কিন্তু লেনিনের সাথে আমার দূরত্ব এক ইঞ্চিও হবে না। কারণ লেনিন সবসময় আমার সাথে যোগাযোগ রাখত।
আমি একজন সংস্কৃতি কর্মী। কবিতা লিখি। গান লিখি। কলাম লিখি। লেনিন কবিতা আর গান পছন্দ করে। আমার যে কোন সাফল্যে লেনিন খুব খুশি হতো এবং অভিনন্দন জানাতো। বলতো দাদা এগিয়ে যাও। আমি আছি তোমার সাথে। এই কথাটা আজ কেন জানি বার বার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সে আমার অনুজপ্রতিম তারপরও আমাকে সব সময় সাহস দিত। উৎসাহ দিত। অনুপ্রেরণা দিত।
আজ যখন জানলাম লেনিন ক্যান্সারে আক্রান্ত। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। আমি ভাষা হারিয়ে ফেললাম। দীর্ঘশ্বাস বাড়ছে। বার বার চিবুক বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। খুব কষ্ট পাচ্ছি। আজ বুঝলাম লেনিন আমার হৃদয়ে যে কতবড় জায়গা দখল করে আছে। পৃথিবীর সব সম্পর্ক রক্তের সম্পর্কের মাপকাঠিতে বিচার করা যায় না। কিছু সম্পর্ক মনের অজান্তেই মনের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলে।
গ্রামের সেই কাঁচা আলপথ দিয়ে হেঁটে আসা স্বপ্নবাজ তরুণ আজ থেকে কি স্বপ্ন দেখতে ভুলে যাবে? সে কি বাইকে চড়ে গ্রামের রাস্তা দিয়ে আর কোন জনসভায় যাবে না। মিছিল করবে না। বক্তৃতা করবে না। আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলবে না দাদা কেমন আছ?
আজ লেনিনের বেঁচে থাকার সংগ্রামে আমরা কি পাশে দাঁড়াতে পারি না? পাঁচ বছর আগে বাবাকে হারিয়ে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিল লেনিন। লেনিন ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে সমাজ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। একসময় নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ছিল। এখন দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিন ভাইয়ের মধ্যে লেনিন সবার বড়। মেজো ভাই স্ট্যালিন জেলা ছাত্রলীগের গণযোগাযোগ উন্নয়ন বিষয়ক উপ- সম্পাদক। আর সবার ছোট ভাই সৌরভ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।
ছোট ভাইদের স্নেহ ভালবাসা দিয়ে বুকের মধ্যে আগলে রেখেছে। দু:খিনি মায়ের পাশে ছায়ার মতো সব সময় থেকেছে। মায়ের কখন কি লাগবে সবকিছু খুব কাছ থেকে দেখেছে এবং মায়ের সাংসারিক সব কাজ দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে সে করতো।
লেনিনের মায়ের খুব ইচ্ছে ছিল বঙ্গবন্ধুর বত্রিশ নম্বর বাড়িটি দেখার। যে বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর অনেক স্মৃতি জড়িত। বঙ্গবন্ধু যে বাড়িতে তাঁর সপরিবারে নিহত হয়েছিলেন। সেই ছোট্ট অবুঝ শিশু শেখ রাসেলের ক্রন্দন যে ঘাতক খুনিরা শুনেনি। কত আদর কত মমতামাখা ভালবাসায় জড়ানো সেই বত্রিশ নম্বর বাড়িটি। লেনিন তার মাকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ঘুরে দেখেছে। সন্তান হিসেবে মায়ের সেই স্বপ্ন পূরণ করেছে। ছোট ভাইদের অভাব অভিযোগ সবকিছু শুনতো যে মানুষটি সেই মানুষটিই আজ নিরব নিস্তব্ধ।
অভিভাবকহীন এই পরিবারটি কি হবে? সবার ছোট ভাই সৌরভের হাহাকার শুনছি। ছেলেটি খুব ভেঙে পড়েছে। তাকে শান্তনা দেয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা। ফেইসবুকে সৌরভ লিখেছে তার জীবনের বিনিময়ে হলেও যেন তার ভাইয়ের জীবন ফিরিয়ে দেয় সৃষ্টিকর্তা। একজন বাবা যেন তার ছোট্ট আদরের মেয়ের কাছে ফিরে যেতে পারে। একজন স্বামী যেন তার সহধর্মিণীর কাছে ফিরে যেতে পারে। এরকম হৃদয়স্পর্শী লেখা সৌরভের ব্যক্তিগত ফেইসবুক ওয়ালে দেখেছি। মা তাঁর সন্তানকে বুকে আগলে রেখে বাঁচতে চাই। মায়ের এই চাওয়াটি কি মিথ্যে হয়ে যাবে?
লেনিনের মতো প্রাণবন্ত এক উজ্জ্বল তরুণের জীবন কি আমাদের চোখের সামনেই নিঃশেষ হয়ে যাবে? লেনিনের তিন বছরের আদরের কন্যা শিশুটি কি এই বয়সে তার বাবাকে হারাবে? লেনিন তার কন্যা শিশুটির নাম রেখেছে রোজ। ফুটফুটে গোলাপের মতো দেখতে রোজ। বাবার কুলে রোজের সেই হাসিমাখা মুখটি ফেইসবুকে দেখছি আর আনমনে ভাবছি জীবন কত সুন্দর। কিন্তু ক্যান্সার নামক ঘাতক ব্যাধি সেই সুন্দর জীবনকে মুহূর্তেই যে ধ্বংস করে দিতে পারে তা দেখছি লেনিনকে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটাল শ্যামলিতে আইসিইউতে দেখে। ক্যান্সারে আক্রান্ত লেনিন তার মেয়েটির জন্য বাঁচতে চাই। তার এই অশ্রুসিক্ত বাঁচার আকুতি যেন বিধাতা শুনতে পান।
গত নির্বাচনে একসাথে বিভিন্ন জায়গায় মিটিং করেছি। নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছি। লেনিনকে খুব কাছ দেখেছি। লেনিনের মতো এত ত্যাগী, পরিশ্রমী কর্মী আজকাল রাজনীতিতে খুব বেশি চোখে পড়ে না। তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সক্রিয় কর্মী কি উন্নত চিকিৎসার অভাবে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে? এই প্রশ্নটি আমার ছাত্রলীগ ভাইদের কাছে এবং যুবলীগ ভাইদের কাছে। সর্বোপরি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার কাছে?
আরকে//