ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

নোয়াখালীতে ৩ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, জনমনে স্বস্তি 

নোয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৮:১২ পিএম, ২৪ আগস্ট ২০১৯ শনিবার

গত কয়েক দশকের জলাবদ্ধতা ও যানজট নোয়াখালী জেলা শহরের বাসিন্দাদের দুর্বিসহ করে তুলেছে। এমন দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধনসহ নানা আন্দোলনেও নামতে হয়েছিল বাসিন্দাদের। বর্ষা এলেই গণমাধ্যমে জলাবদ্ধতার সংবাদ আর বছর জুড়ে যানজটের সংবাদ থাকলেও দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মেলেনে লাখো বাসিন্দার। 

তবে জেলার জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসনে জেলা প্রশাসন, সদর উপজেলা, বিএডিসি, পৌর ও পুলিশ প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে চলতি বছর বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে শহরের ছাগলমারা খাল পুন:খনন ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ একটি বড় পদক্ষেপ। যার ৭৫ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে প্রায় শেষ। সর্বশেষ শনিবার (২৪ আগস্ট) শুরু হয় সোনাপুর জিরো পয়েন্ট এলাকার খালের উপর ও সড়কের পাশে নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সোনাপুর জিরো পয়েন্ট থেকে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সড়কের পাশের খাল ও সোনাপুর-রামগতি-সুবর্ণচর সড়কের পাশে গত পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে পর্যায়ক্রমে গড়ে ওঠে তিন শতাধিক অবৈধ স্থাপনা। এর মধ্যে আধা-পাকা দোকান থেকে শুরু করে বহুতল ভবনও রয়েছে। এসব অবৈধ স্থাপনার কারণে খালের পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। তাছাড়া নিয়মিত যানজট লেগে থাকে। 

যার ফলে দীর্ঘ পরিকল্পনা শেষে পৌরসভা, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিএডিসি যৌথ উদ্যোগে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অবৈধ এসব স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সঙ্গে পিডিবি ও বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। 

উচ্ছেদ অভিযানে পুলিশের পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডও অংশগ্রহণ করেন।

এদিকে প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে নোয়াখালী পৌর শহরের নাগরিকরা। তাদের মতে, পুরোনো শহর নদী গর্বে বিলিন হওয়ার পর গত পঞ্চাশ বছরে পর্যায়ক্রমে এসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় যে যার মতো করে স্থাপনা গড়ে তোলে। এতে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে শহরের বাসিন্দা ও সাধারণ মানুষকে। তবে অনেক দেরিতে হলেও প্রশাসনের এমন উদ্যোগ বিগত সময়ের সকল ইতিহাসকে হার মানিয়েছে। কেউ কখনও চিন্তাও করেনি এভাবে উচ্ছেদ অভিযান হবে। 

আবুল বশার নামে সোনাপুরের কাঠপট্টি এলাকার এক বাসিন্দা জানান, সোনাপুর এলাকায় এক সময় এসব খালে জোয়ার আসতো। আশপাশের মানুষ এসব খালে জাল ফেলে মাছ ধরতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন তা হারিয়ে গেছে। খালগুলোর উপর গড়ে ওঠেছে বহুতল ভবনসহ অবৈধ স্থাপনা। এখানে যে কোনও এক সময় খাল ছিল তার কোনও চিহ্নও আজ অবশিষ্ট নেই।
 
তৌহিদুল হাসান নামে এক পথচারি জানান, তিনি সুবর্ণচর থেকে সপ্তাহে একদিন সোনাপুর হয়ে চৌমুহনী যান ব্যবসায়ীক কাজে। কিন্তু সোনাপুর এলাকার যানজটে ভীষণ কষ্ট সহ্য করতে হয় তাকে। তার মতে প্রশাসনের এমন উদ্যোগ সকলের জন্যই মঙ্গলজনক।
 
তবে এ অভিযানকে হটকারিতা বলছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী জানান, পৌরসভাকে সকল প্রকার ট্যাক্স দিয়েই তারা ব্যবসা পরিচালণা করছেন। এমন উচ্ছেদ অভিযানের কারণে কয়েক হাজার মানুষ বেকার হয়ে যাবে। এ ক্ষতি পুষিয়ে দিতে তাদেরকে পুনর্বাসনের দাবি জানান উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীরা।
 
এ বিষয়ে নোয়াখালী পৌরসভার মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসন করা হবে বলেই আশ্বাস দিয়েছেন। 

তবে একাধিক কর্মকর্তা জানান, পৌরসভা শুধুমাত্র হোল্ডিং ও ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে। আর এসবের বিনিময়ে নির্দিষ্ট ফি নিয়েছে। এর বাইরে পৌরসভা ঘর বন্দোবস্ত বা জায়গা বন্দোবস্ত দেয়নি। 

উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্বদানকারী নোয়াখালী সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, কে কিভাবে বন্দোবস্ত দিয়েছে তা দেখার বিষয় নয়। এতটুকুই সত্য যে, খালের জায়গা বন্দোবস্ত দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। তাছাড়া এখানে যতগুলো স্থাপনা রয়েছে সবগুলোই অবৈধ। নোয়াখালী শহরের দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা ও যানজট সমস্যার সমাধানে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা জরুরি ছিল। তাই সরকারি সকল বিভাগের যৌথ উদ্যোগে এ অভিযান পারিচালিত হয়েছে।
 
তিনি আরও জানান, তিন শতাধিক স্থাপনার মধ্যে শনিবার দুপুর পর্যন্ত শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখানে একাধিক বহুতল ভবনও রয়েছে। তবে কাউকে কোনও প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। 

এ কর্মকর্তা আরও বলেন, সব ধরণের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খালের পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করা হবে। একই সঙ্গে শহরের যানজটও নিরসন করা হবে। অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। 

এনএস/