ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

পাইলিংয়ের নামে অর্ধকোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ

সাবেক শিল্পমন্ত্রীর বাড়ি যাতায়াতের সড়কের বেহাল চিত্র!

ঝালকাঠি প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১০:৫৮ পিএম, ২৬ আগস্ট ২০১৯ সোমবার

ভাঙন ও ধসে ঝালকাঠিতে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও বর্তমান এমপি আমির হোসেন আমুর বাড়ি যাতায়াতের পথ ঝালকাঠি-শেখেরহাট সড়কের বর্তমানে বেহাল দশা। ঠিকাদার নিয়োগ না করেই ভাঙন ও ধস প্রতিরোধে পাইলিংয়ের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় অর্ধকোটি টাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা নিজেরাই লুটপাট চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গাবখান নদীর পশ্চিম তীরবর্তী সড়কটির বেশ কয়েকটি স্থান নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় বাঁশ দিয়ে তড়িঘড়ি পাইলিং দেয়ার ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নদী ভাঙনের পাইলিং বাঁশ দিয়ে করায় এই লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। 

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে জরুরী ভিত্তিতে গাবখান নদীর ভাঙনে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়া এই সড়কটি রক্ষায় পাইলিংয়ের বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্দের পরিমাণ ৪৯ লাখ ৭৪ হাজার ৫৯১ টাকা। ৫ জন ঠিকাদারকে এই কাজ দেয়া হয়। ৩১ আগষ্টের মধ্যে এ কাজ শেষ করা হবে বলে সূত্রটি জানিয়েছে। 

ছয় কিলোমিটারের এই সড়কে জরুরী ভিত্তিতে পাইলিংয়ের জন্য ৭টি প্যাকেজে ১২টি অংশের পাইলিংয়ের জন্য এই অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিপিএম পদ্ধতিতে কাগজে কলমে ঠিকাদারের মাধ্যমে এই কাজ করার কথা বললেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজেরাই দায়সরাভাবে এই কাজ করে বরাদ্দ অর্থ লুটপাটের পায়তারা করছে। 

গাবখান চ্যানেল তীরে সড়কটিতে প্রতিদিন ভাঙনের পাশাপাশি গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। এ সড়ক দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল না করলেও নৌ রুটের ভারী ও মালবাহী জাহাজ চলাচল করছে গাবখান চ্যানেল দিয়ে। এতে পানির স্রোতে সড়কের মাটি ও গাছ ভেঙে পড়ছে। বেহাল দশার এ সড়কটি নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল এলাকাবাসী দীর্ঘ দিন থেকে।

এরই প্রেক্ষিতে এলজিইডি বিভাগের আওতায় ৬ কিলোমিটারের এই সড়কটি সংস্কারের জন্য অনেক আগেই প্রায় ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ এসেছে। কিন্তু তা দিয়েও কাজে লাগানো যাচ্ছেনা সড়কটির ভাঙন প্রতিরোধে, না হচ্ছে কোন স্থায়ী সমাধান।

গত ২২ আগষ্ট গাবখান নদী তীরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পাইলিং কাজের জন্য ঠিকাদারের কোন লোক নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্য সহকারী রায়হান খান কাজ দেখাশোনা করছেন। তিনি জানান, সাময়িক ও জরুরী এই কাজের জন্য এই মূহুর্তে কোন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড এই কাজের সার্বিক পরিচালনা করছে। 

এসময় সেখানে রাস্তার ভাঙনকূলে বাঁশ দিয়ে পাইলিং করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা কোন স্থায়ী কাজ নয়। সাময়িক কাজ হওয়ায় বাঁশ ও গাছ দিয়ে পাইলিং দেয়া হচ্ছে। 

গাবখান এলাকার বাসিন্দা ঠিকাদার তপন তালুকদার, মুক্তিযোদ্ধা আঃ শুক্কুর ও কৃষক নাসির হাওলাদার পাইলিংয়ের নামে দুর্নীতি করে বরাদ্দ অর্থ লুটপাটের অভিযোগ জানিয়ে বলেন, বাঁশ দিয়ে পানি উন্নয়নবোর্ড নদী ভাঙনের সড়কে পাইলিং দেয়। আমরা এটা প্রথম দেখলাম। এই পাইলিং কোন কাজে লাগবেনা কারণ, বাশ কিছু দিন পরেই পচে নষ্ট হয়ে যাবে।

তাছাড়া পাইলিংয়ের বাঁশের গোড়ার মাটি সরে গিয়ে এবং ভিতরে ফেলানো বালুর ব্যাগের চাপে নদীতে পাইলিং ও সড়ক দুটোই ধসে পড়বে। যদি দূরে সরিয়ে কংক্রিটের পাইলিং দিয়ে ভিতরে বালুর বস্তা ফেলা হতো তাহলেই কেবল ভাঙন প্রতিরোধ করা সম্ভব হতো। 

এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, বরাদ্দ লুটপাটের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই বাঁশ পাইলিং শুধুই একটি বাহানা। আমরা এর প্রতিবাদ করলে আমাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা করবে কর্তৃপক্ষ। তাই আমরা প্রতিবাদ করতে পারছিনা।

এ বিষয়ে ঝালকাঠি পানি উন্নয় বোর্ডের উক্ত প্রকল্পের উপ-সহকারী প্রকৌশলী বিভূতী চন্দ্র রায় জানান, গত সপ্তাহে জরুরী ভিত্তিতে এই পাইলিং কাজ শুরু করা হয়। উক্ত প্রকল্পের কার্যাদেশ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ঠিকানা দেখতে চাইলে তিনি বলেন, কার্যাদেশ আমাকে না দেয়ায় আমার কাছে এর কোন তথ্য নেই।

নদী ভাঙনে সড়কের পাইলিং কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ড কংক্রিট/ব্লক না দিয়ে বাঁশ ব্যাবহার করায় তা কতটা মজবুত বা স্থায়ী হবে জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আতাউর রহমান বলেন, ৫টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাইলিংয়ের এই কাজ করা হচ্ছে।
   
তিনি আরও বলেন, অস্থায়ীভাবে জরুরী ভিত্তিতে এই পাইলিং কাজ করায় এতে বাঁশ ব্যাবহার করা হচ্ছে। পাইলিংয়ের ভিতরে জিওবি ব্যাগ ফেলানো হবে। যাতে রাস্তার মাটি ধূয়ে না যায়। 

এসময় প্রকল্পের উপ-সহকারী প্রকৌশলীর কাছে ঠিকাদরী প্রতিষ্ঠানের নাম এবং কার্যাদেশ না থাকার কারণ জানতে চাইলে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি তিনি।

এনএস/