ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

যেভাবে উত্থান হল মুফতি তাহেরীর?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:০৮ পিএম, ২৮ আগস্ট ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ০১:০৮ পিএম, ২৮ আগস্ট ২০১৯ বুধবার

কয়েকদিন ধরে ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুফতি গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরীর কিছু বক্তব্য নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। ফেসবুক প্ল্যাটফরম ঘাঁটলেই চোখে পড়ছে তার আলোচিত সেই উক্তিগুলো। অনেকেই নিজের ছবি ফেইসবুকে আপলোড করে তার ওয়াজে ব্যবহৃত কিছু উক্তি লিখছে। এপরিস্থিতিতে তিনি এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে।

সম্প্রতি সময়ে এই মুফতির একটি ওয়াজে দেখা গেছে, হাতে একটি চায়ের কাপ নিয়ে তাতে চুমুক দেন তিনি। এরপর বলেন, ‘কেউ কথা কইয়েন না, একটু চা খাব? খাই একটু? আপনারা খাবেন? ঢেলে দেই? মুচকি হেসে আবারও বলেন, ঢেলে দেই? ... ‘ভাই পরিবেশটা সুন্দর না? কোনো হইচই আছে? আমি কি কাউকে গালি দিয়েছি? কারোর বিরুদ্ধে বলতেছি? এরপরও সকালে একদল লোক বলবে, তাহেরী বালা (ভালো) না।’ বক্তব্যের মধ্যে অশ্লীল ভঙ্গিও করেন তিনি। সেই সঙ্গে নাচ-গানসহ আরও বিনোদনমূলক কথাও বলেন এই বক্তা।

তারা ওয়াজ বা কিছু উক্তি বিষয় সবাই জানা থাকলেও কে সে, কি তার বংশ পরিচয়। কোথায় বা লেখাপড়া, বিভাবে সেই এই অবস্থানে আসছে, এমন খবর অনেকেরই অজানা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দাওয়াতে ঈমানী বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মুফতী মুহম্মদ গিয়াস উদ্দিন আত তাহেরী। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জিকিরের সময় নেচে-গেয়ে ‘বসেন বসেন, বইসা যান’ বলায় সমালোচিত হন তাহেরী। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে নিয়ে তৈরি হয়ে নানা ট্রল ও ভিডিও। এরপর কিছুদিন ওয়াজ বন্ধ রেখেছিলেন তিনি। সম্প্রতি ফের আলোচনায় এলেন এই বক্তা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তাহেরী নামেই তিনি পরিচিত। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেন মুফতী মুহম্মদ গিয়াস উদ্দিন আত তাহেরী। তাঁর পারিবারিক ইতিহাস ও বংশগত পরিচয় নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। তবে তিনি তরত্রক বিতর্কের মধ্য দিয়েই যাচ্ছেন। যদিও তিনি তাঁর সম্পর্কে বিতর্কের বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে আসছেন।

তার বিরুদ্ধে নাচ করার যে অভিযোগ রয়েছে তাকে তিনি ক্যামেরার কারসাজি বলে উল্লেখ করেছেন। ২০১৩সালে নরসিংদীতে গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরীর ওয়াজে ‘তাবলীগের লোকদের কাফের বলে গালাগাল, আলেম-ওলামা সম্পর্কে এবং শরীয়তের পীর-মাশায়েকদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য’নিয়ে রায়পুরার অলিপুরা শাহেরচর ও বড়চর গ্রামে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ অর্ধশত শটগানের ফাঁকা গুলি ও ৩০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। ওই ঘটনায় একটি মামলাও হয়।
উত্তরবঙ্গের একটি জেলায় সম্প্রতি এক ওয়াজ মাহফিলে কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের ‘পোলা তো নয় সে যে আগুনের গোলা রে’ গানটি নেচে-গেয়ে উপস্থাপন করায় ইসলামী আলোচকদের সমালোচনার মুখে পড়েন তাহেরী।

স্থানীয়রা বলছে, গিয়াস উদ্দিন আত তাহেরী একজন লাল পাগড়ি ও লাল আলখেল্লা পরিহিত ভণ্ডপীর। রায়পুরার মাস্তানগঞ্জ নামক একটি মহল্লায় খাজা বাবার দরবার নাম দিয়ে এখানে দীর্ঘদিন ধরে একটি আস্তানা গড়ে তুলেছে। এ আস্তানায় সার্বক্ষণিক আড্ডা দেয় এলাকার বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত লোকজন। এই আস্তানায় নারীপুরুষ একত্রে নেশা করে নাচ গান করে। তবে ঘটনার সত্যতা কতটুকু বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।   
গণমাধ্যমগুলো বলছে, গিয়াস উদ্দিন আত তাহেরী তার বক্তৃতায় তবলীগের লোকদের কাফের বলে গালাগাল করে এবং আলেম ওলামা সম্পর্কে ও শরীয়তের পীর মাশায়েকদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে। গত ১৫ জানুয়ারি ছাদেক চেয়ারম্যান ও এলাহী মেম্বার মিলে অলিপুরা গ্রামে গিয়াস উদ্দিন আত তাহেরীকে প্রধান বক্তা করে এক জলসার ঘোষণা দিলে এলাকার লোকজনের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তারা আত তাহেরীর আগমন বন্দের দাবিতে মিছিল করে রায়পুরা প্রধান সড়কে অবস্থান নেয়। 

জানা যায়, রায়পুরা থানার ওসি মাহমুদুল ইসলাম মুসলি্লদের আশ্বাস দিলে তারা চলে যায়। পরে অলিপুরা ব্রাহ্মনবধুয়া, চান্দেরকান্দী, নবীয়াবাদ, রাধানগর, শাহেরচর ও বরচর গ্রামের ধর্মপ্রাণ লোকেরা একত্রে মিলিত হয়ে ভন্ড পীরের আগমন রোধে আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করে। এলাকার মুসল্লীদের পক্ষে মাওলানা নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে রায়পুরার অলিপুরায় গিয়াস উদ্দিন আত তাহেরীর আগমনের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে রায়পুরার সহকারী জজ আদালতে একটি দেওয়ানি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১০/২০১৩। এ মামলায় বিজ্ঞ সহকারী জজ সাইদুজ্জামান শরীফ, বাদী পক্ষের শুনানি শেষে ঘটনাস্থলে আত তাহেরীর জলসা স্থগিত ঘোষণা করে এবং কেন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে না এ মর্মে কারণ দশানোর নোটিশ জারি করেন।


গত ২৫ আগস্ট কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা শাইখ নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যার বিচারের দাবিতে ভৈরবে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা। এই মানবন্ধনেই সর্বশেষ অংশ নিতে দেখা যায় তাহেরীকে।

 টিআর/