‘১৯ বছর বয়সী বিধবা মিন্নিকে জামিন দিলে পালিয়ে যাবে না’
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:৩৪ এএম, ২৯ আগস্ট ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১১:৩৬ এএম, ২৯ আগস্ট ২০১৯ বৃহস্পতিবার
‘১৯ বছর বয়সী বিধবা মিন্নিকে জামিন দিলে সে পালিয়ে যাবে না’ বলে বিচারকের কাছে মিন্নির জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবী জেড আই খান পান্না। বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল বুধবার হাইকোর্টে মিন্নির জামিন আবেদনে তিনি এ কথা বলেন।
আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ‘মিন্নি বিধবা এবং একজন ১৯ বছর বয়সী নারী, তাকে জামিন দিলে তিনি পালিয়ে যাবেন না। তাই আমরা তার জামিন প্রার্থনা করছি।’
এদিন মিন্নির জামিন বিষয়ে শুনানিকালে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ-এর প্রতি মিন্নির জামিন চেয়ে এ আবেদন করেন ওই আইনজীবী।
এ সময় আদালতে মিন্নির জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মশিউর রহমান ও মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন বাপ্পী।
শুনানির শুরুতে মিন্নির আইনজীবী আদালতকে বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে এ মামলায় শুনানি করছি। আজকে শুধু এ কথাই বলবো, মিন্নিকে গ্রেফতার ও কোর্টে হাজির করার পর তার পক্ষে কোনও আইনজীবী না থাকায় আদালত তার কাছে জানতে চাইলে তিনি (মিন্নি) জানান, ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। পুলিশ এ মামলায় তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।’
এরপর মিন্নির আইনজীবী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভাইরাল হওয়া সিসি ফুটেজের ১১ খণ্ডের ডিস্ক আদালতে দাখিল করেন। তিনি আদালতকে বলেন, ‘এসব সিসি ক্যামেরা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় ভিডিওগুলো কীভাবে বাইরে প্রকাশ হলো? এটাও কিন্তু একটা অপরাধ।’ পরে এ আইনজীবী ওই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ফুটেজও আদালতে দাখিল করেন।
এ সময় মিন্নির আইনজীবী কিছুটা অভিযোগের সুরে বলেন, ‘ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে মামলার অগ্রগতি প্রতিবেদন চেয়েছি, কিন্তু আমরা এখনও তা হাতে পাইনি।’
জবাবে মামলার প্রতিবেদন তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘কলেজের সামনে ওই ঘটনার আগে নয়নকে মিন্নি ৮ বার ফোন করে কথা বলেছিল। আর ঘটনার পর ৫ বার ফোন করে কথা বলে। মোবাইল অরিজিনেটেড কল এবং মোবাইল টার্মিনেটেড কল লিস্টে তা-ই উঠে এসেছে। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে রিফাত হাসপাতালে গেলেও মিন্নি কিন্তু সেখানেই ছিল। এসব কি তাকে নিষ্পাপ প্রমাণ করে?’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আরও বলেন, ‘সে (মিন্নি) এই ঘটনার মূল ষড়যন্ত্রকারী। তার বয়স ১৯ এবং সে নারী, এসব বলে জামিনের কোনও সুযোগ নেই। তাকে জামিন না দিয়ে মামলার ন্যায়বিচারের স্বার্থে তার জামিনের বিষয়ে জারি করা রুল খারিজ করা হোক। এছাড়া, নয়নের সঙ্গে মিন্নির সম্পর্ক ছিল এটা সে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। এই মামলাটি অনেক স্পর্শকাতর এবং জনমনে বেশ আগ্রহ কাজ করছে।’
জবাবে মিন্নির আইনজীবী বলেন, ‘একটি মানুষের ফোনে প্রতিদিন অনেক কল আসতে পারে।’ এ সময় একটি জাতীয় দৈনিকের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘পত্রিকায় তথ্য আছে, এই ঘটনার আগে ৭৭ বার পুলিশের সঙ্গে নয়নের কথা হয়েছে। বরগুনা থানার এস আই আসাদুজ্জামানের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। আপনারা মিন্নিকে জামিন দিন, প্রয়োজনে আমি তার গ্যারান্টার থাকবো।’
তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘নয়ন তার একটি পরিত্যক্ত মোটরসাইকেল আটকের বিষয়ে ওই এসআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতো।’
এ সময় সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী আদালতকে বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। তার জামিনের পক্ষে এখানে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। তাই তাকে জামিন দিলে তদন্তে কোনও হস্তক্ষেপ হবে না। তার জামিনের সঙ্গে তদন্তের কোনও সম্পৃক্ততা নেই। তাই জামিন দেওয়া আপনাদের বিবেচনাধীন বিষয়।’
এরপর আদালত মিন্নির জামিনের বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) দুপুর ২টায় আদেশের দিন নির্ধারণ করেন।
এনএস/