এরশাদের আসন নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব চরমে
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:০৮ এএম, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ রবিবার | আপডেট: ০১:৩২ পিএম, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ রবিবার
জাতীয় পার্টির ঘাঁটি রংপুর-৩ আসন। দলটির সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। আজ রোববার, ১ সেপ্টেম্বর এ আসনে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৫ অক্টোবর ভোটগ্রহণের দিন রেখে ইতিমধ্যে উপনির্বাচনের তফসিল দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু আসনটিতে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে দ্বিধা-বিভক্ত জাপার সিনিয়র নেতারা। এরশাদ পরিবারের পক্ষ থেকে প্রার্থী হচ্ছেন অন্তত চারজন। ফলে পারিবারিক দ্বন্দ্বে আসন হারানোর আশঙ্কায় রয়েছে দলের তৃণমূল নেতারা।
জানা গেছে, পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতা ও এরশাদের সহধর্মিণী রওশন তার ছেলে শাদ এরশাদকে এই আসন থেকে এমপি হিসেবে দেখতে চান। কিন্তু দলের অনেক সিনিয়র নেতা ও স্থানীয় জাপার নেতাকর্মীরা তা মানতে নারাজ। তারা চান রংপুরের তৃণমূলকে প্রাধান্য দিয়ে প্রার্থী নির্বাচিত হোক। এতে দল আরও বেশি শক্তিশালী হবে। সেই সঙ্গে দলে নিজেদের অবস্থান আরও বেগবান হবে বলে মনে করেন স্থানীয় নেতারা।
পার্টির শীর্ষ নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, এরশাদ পরিবারই এখনও রংপুর-৩ আসনে মনোনয়নের বিষয়ে একমত হতে পারেনি। পরিবার থেকে মনোনয়ন দৌড়ে এরশাদপুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ ছাড়াও ভাতিজা- সাবেক এমপি আসিফ শাহরিয়ার, ভাতিজা (মামাত ভাইয়ের ছেলে) মেজর (অব) খালেদ আখতার, ভাগনি (মেরিনা রহমানের মেয়ে) মেহেজেবুন্নেছা রহমান টুম্পাও মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
পরিবারের বাইরে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসিরকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানিয়ে ইতোমধ্যে আল্টিমেটাম দিয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এ আসনে মনোনয়ন পেলেই বিজয়ী হবেন এমনটা চিন্তা থেকেই লবিং-তদবির বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রার্থীরা। অনেকেই পার্টির চেয়ারম্যান মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচন করার আগ্রহ রয়েছে প্রয়াত এরশাদের সহোদর ও পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের। সেক্ষেত্রে এ আসনে অনেক হিসেব-নিকেশ করে মনোনয়ন দিতে চান তিনি।
এ বিষয়ে পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের জন্য একটি বোর্ড গঠন করে দিয়েছি। তারাই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’
বোর্ড গঠনে পার্টির গঠনতন্ত্র অনুয়ায়ী সিনিয়রিটি মানা হয়নি এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘সিনিয়রদের নিয়েই করতে হবে এমনটি অত্যাবশ্যকীয় নয়। প্রয়োজনে গঠনতন্ত্রও পরিবর্তন হতে পারে।’
রংপুর মহানগর জাপার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বলেন, ‘রংপুরের মানুষ এরশাদের পরে তার পরিবারে জিএম কাদের ছাড়া আমরা চিন্তা করতে পারি না।’
এ বিষয়ে সাদ এরশাদ বলেন, ‘দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি বাবার আসনে নির্বাচন করব। এখানে অনেক কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। ওইসব কাজ আমি শেষ করতে চাই।’
এতো গেলো জাতীয় পার্টির কথা। আসনটি নিয়ে কঠিন হিসেব নিকেশ করছে বিএনপি। তারা চাইছে একজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ প্রার্থী দিতে। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগও আসনটি হারাতে চাইছে না। তাদেরও নজর রয়েছে আসনটির দিকে।
এদিকে পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেছেন, জাতীয় পার্টি মহাজোটের শরীক দল হওয়ায় এ আসনে নির্বাচন জোটগতভাবে হবে এবং পার্লামেন্টরী বোর্ড আগ্রহী প্রার্থীদের আবেদন ও মাঠের অবস্থা বিশ্লেষণ করে মনোনয়ন দেবে।
তবে পরিস্থিতি যা হয়েছে তাতে আসনটি নিয়ে চিন্তিত জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতারা। তারা মনে করছেন পারিবারিক দ্বন্দ্বের সমাধান না আসলে অন্যরা সুযোগ নিতে পারে। এমনকি জাপা আসনটি হারাতেও পারে।
এসএ/