ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

কারখানা কর্মকর্তার লাথিতে গর্ভবতী নারীসহ আহত ৫

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:৫০ পিএম, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ রবিবার

রাজধানী ঢাকার অদূরে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি পোশাক কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপকের লাথিতে আহত হয়েছে গর্ভবতী একজনসহ ৪ নারী শ্রমিক। আহত নারী শ্রমিকদেরও স্থানীয় নারী ও শিশু নেওয়া হলে গর্ভবতী নারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত নোভা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। 

রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় জামগড়া থীম পার্ক ফ্যান্টাসি কিংডমের পেছনে সিটকো গ্রুপের একটি পোশাক কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।

আহত নারী শ্রমিকরা হলো, গর্ভবতী সুইং অপরেটর নারী শ্রমিক হাসনা(২৫), একই কারখানার সুইং অপারেটর ঝুমা (২২), ডস্টিংসহ অপারেটর রাজিয়া(২৭) ও কুলসুম (২৪)।এদিকে নারী শ্রমিকদের লাথি মারার সময় মেঝেতে পড়ে আহত হন উক্ত পোশাক কারখানার সহকারি মহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম(৪৫)।

আহত নারী শ্রমিকদের সহকর্মীরা জানান, গত কয়েকদিন ধরে কারখানার অভ্যন্তরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৩০ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করেন কর্তৃপক্ষ।এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় গত বৃহস্পতিবার কারখানা ছুটির পর প্রধান ফটকের সামনে বহিরাগত ভাড়া করা সন্ত্রাসীদের দিয়ে নিরীহ শ্রমিকদের মারধর করা হয়।এরই জের ধরে গত শনিবার সকালে কারখানা কর্তৃপক্ষ ১৫ জন শ্রমিককে কারখানার অভ্যন্তরে একটি কক্ষে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে।নির্যাতিত শ্রমিকরা তাদের সহকর্মীদের নিকট এসব কথা জানালে তারা এই ঘটনার বিচার দাবি করেন। 

রোববার সকালে প্রতিদিনের মতো শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করে আগের দিনের ঘটনার বিচার দাবি করলে সহকারি মহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম ক্ষিপ্ত হয়ে শ্রমিকদের পর চড়াও হয় এবং বিচার প্রার্থী নারী শ্রমিকদের লাথি মেড়ে আহত করে।সহকর্মীদের আহত হওয়ার সংবাদ কারখানার অন্যান্য শ্রমিকদের মাঝে ছড়িয়ে গেলে তারা কাজ বন্ধ রেখে কারখানার অভ্যন্তরেই বিক্ষোভ করতে থাকে। কারখানা কর্তৃপক্ষ উত্তেজিত শ্রমিকদের কাজে ফেরাতে ব্যর্থ হলে কারখানাস্থলে শিল্প পুলিশকে তলব করেন। বেলা ১০টার দিকে কারখানাস্থলে শিল্প পুলিশ সদস্যরা গিয়ে শ্রমিকদের সাথে কয়েক দফা আলোচনা করেন।

এসময় পুলিশের পক্ষ থেকে নারী শ্রমিকদের মারধরের ঘটনার বিচার করার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হতে থাকে। পরে বিকাল ৫টার দিকে কারখানা কর্তৃপক্ষ ছুটি ঘোষণা করলে শ্রমিকরা বাসায় চলে যায়।
 
আহত নারী শ্রমিক কুলসুম বলেন,কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম বিনা কারণেই নারী শ্রমিকদের গায়ে হাত তুলেন।বারবার এ বিষয়ে উৎপাদন ব্যবস্থাপকদের নিকট বিচার প্রার্থী হলেও কোন প্রতিকার হয়নি।
  
সিটকো গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম শ্রমিকদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির কথা স্বীকার করে বলেন, শ্রমিকরা কোন কারণ ছাড়াই তার উপর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, এক পর্যায়ে তারা বারান্দায় রাখা ফুলে টব তাকে লক্ষ্য করে ছুরলে মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হন তিনি।চার নারী শ্রমিক আহতের বিষয়ে তিনি বলেন,আমি কোন শ্রমিকদের মারধর করিনি।

বিজিএমইএ’র ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটির আশুলিয়া অঞ্চলের ইনচার্জ নূরে আলম সিদ্দিক বলেন,আমি কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তাদের সমস্যাটির সমাধান করেছি।আহত নারী শ্রমিকদের সম্পূর্ণ চিকিৎসা খরচ মালিকপক্ষ বহন করবে।পাশাপাশি নারী শ্রমিকদের সাথে খারাপ আচরণের জন্য সহকারী মহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম তাদের প্রতি ক্ষমা চেয়েছেন। 

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামীকাল থেকে যথারীতি কারখানাটিতে সচল থাকবে।তবে তৃতীয় একটি পক্ষ শ্রমিকদের ইন্দন দিয়ে ঘটনাটি গোলাটে করার চেষ্টা করছে বলেও তিনি আশঙ্কা করছেন।
 
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর সহকারী পুলিশ সুপার আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কারখানা কর্মকর্তার সাথে নারী শ্রমিকদের যে অনাকাক্ষিত ঘটনাটি ঘটেছে এতে কর্তৃপক্ষ দু:খ প্রকাশ করেছেন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে কারখানার ওই কর্মকর্তাকে সতর্ক করা হয়েছে ভবিষ্যতে এ ধরনের কোন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটালে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।  
কেআই/