আজীবন শেখ হাসিনার পাশে থাকতে চাই : আমিন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:০১ পিএম, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ রবিবার | আপডেট: ১১:৩০ পিএম, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ রবিবার
আমিনুল ইসলাম আমিন। তৃণমূল থেকে উঠে আসা এক পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নাম। চট্টগ্রাম মহানগর, এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজ তিনি জাতীয় রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার শাণিত বক্তব্য আর নেতৃত্বের দ্যুতিতে তিনি একজন জননন্দিত রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। আজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অটল থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনার পাশে থাকতে চান তিনি।
সম্প্রতি লন্ডন সফরে এসেছিলেন তিনি। সে সময় কথা হয় তিনি মুখোমুখি হন একুশে টেলিভিশন অনলাইনের লন্ডন প্রতিবেদকের সঙ্গে। কথা বলেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অতীত-বর্তমানসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনের উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হলো।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে গণমানুষের সম্পৃক্ততার কথা বলতে গিয়ে আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, “একটা রাজনৈতিক দল কতদিন টিকে থাকবে তা নির্ভর করে সে রাজনৈতিক দল মানুষের চিন্তা চেতনা কতটুকু ধারণ করতে পারে তার উপর। আওয়ামী লীগ মানুষের মনের ভাষা বুঝতে পেরেছে বলেই ক্ষমতার পাদপ্রদীপের বহুদূরে থেকেও ক্ষমতায় এসেছে এবং বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে আছে। কারণ আওয়ামী লীগ বরাবরই এই জনপদের মানুষ কি চায় সেটা অনুধাবন করতে পেরেছে।”
তিনি বলেন,“আওয়ামী লীগের জন্মলগ্নে মুসলিম লীগের দোর্দান্ড প্রতাপ ছিল।কিন্তু আওয়ামী নেতৃত্ব এতই দূরদর্শী ছিলেন যে জনগণের অসাম্প্রদয়িক মনোভাব বুঝতে পেরে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগকে সর্বসাধারণের দলে পরিণত করেন।কারণ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ জানতেন যে একটা সাম্প্রদায়িক দল নিয়ে বেশিদূর এগুনো যাবে না, মানুষের আবেগ নিয়ে সাময়িক সুবিধা পাওয়া গেলেও দেশ কিছু পাবে না। পরবর্তীতে জেনারেল আইয়ুব খান সেনা শাসনের সময় আওয়ামী লীগের উপর ভয়াবহ নির্যাতনের পরও আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহৃ করা যায়নি।এই দলের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।”
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর শাসকদলের ভয়াবহ নির্যাতনের পরও আওয়ামী লীগের টিকে থাকার একমাত্র কারণ শেখ হাসিনা বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বলে মনে করেন আমিন। তিনি বলেন, ১৯৭৮ সালে জেনারেল জিয়ার শাসনামলে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের সময় আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের নামে আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু লেখা যাবে না বলে নির্দেশ দেওয়া হয়।এভাবে সরকারী পুলিশ গোয়েন্দা সংস্থা বিভিন্নভাবে নিপীড়ন চালিয়েছে আওয়ামী লীগের উপর।তারপরও ১৯৮১ সালের পর থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।এর একমাত্র কারণ যোগ্য নেতৃত্ব এবং মানুষের মনের ভাষা উপলব্ধি করার সক্ষমতা।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন প্রসঙ্গে আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন,“২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে যখন আওয়ামী লীগ ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছিল তখন অনেকেই তখন হেসেছিল।তারা মনে করেছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে ঘরে ঘরে কম্পিউটার হবে, বাচ্চারা গেমস খেলবে এসব।কিন্তু আওয়ামী লীগের কাছে ডিজিটাল বাংলাদেশ হচ্ছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।”
তিনি আরও বলেন,“ ১৯৯১ সালে যখন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন দেশের সমুদ্র তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবল নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।কিন্তু তখন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, সাবমেরিন ক্যাবল এভাবে গেলে দেশের তথ্য পাচার হয়ে যাবে।একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী কতটা অজ্ঞ হলে এমন অর্বাচীন কথা বলতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।অথচ সে সময় যদি এই সুযোগটা কাজে লাগানো যেত তাহলে দেশ আরও এগিয়ে যেত।”
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তরুণদের নিয়ে কাজ করতে চায় বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন,“২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন তিনি তরুণদের জন্য জীবন উৎসর্গ করবেন। সেটা তরুণরা ভালোভাবে গ্রহণ করেছে এবং নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভূমিধস জয় এনে দিয়েছে।”
তাঁর মতে, “তরুণদের ভিশন দিতে হবে যাতে করে তারা আকৃষ্ট হয়। ২০০৮ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ স্বপ্ন দেখিয়েছিল ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ নিম্ম মধ্যবিত্ত আয়ের দেশে পরিণত হবে। আমরা ইতিমধ্যে সে স্বপ্ন পূরণ করেছি। এটি সম্ভব হয়েছে একমাত্র শেখ হাসিনার মতো কালজয়ী নেতৃত্ব পাওয়ার কারণে। এখন তিনি স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ উন্নত দেশে পরিণত করবো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ স্বপ্ন পূরণ করবে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ। এজন্য এদেশের তরুণরা যাতে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারে সেজন্য সরকার সবকিছু করছে।”
দলের মধ্যে তরুণরা প্রাধান্য পাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জাতীয় পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত দলের সকল স্তরে তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। যাতে প্রবীণদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তির সম্মিলন ঘটিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ”
সরকারের সাফল্য প্রবাসীসহ বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের তরুণ এই নেতা। তিনি বলেন,“মিশনগুলোর পাশাপশি দলীয়ভাবে অনলাইনের মাধ্যমে সারাবিশ্বে সরকারের সাফল্য প্রচার করা হয়। প্রবাসে দলীয় সমর্থকরা প্রচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদকের নেতৃত্বে নেতৃবৃন্দ এসব বিষয় দেখভাল করেন।”
ওয়ান ইলিভেনের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার এবং মাইনাস ফর্মুলার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম এই বিলাত থেকেই প্রতিবাদ হয়েছিলে বলে উল্লেখ করে তিনি প্রবাসী নেতাকর্মীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। প্রবাসীদের বিলাতের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
আমিন বলেন, “আওয়ামী লীগ একটি অনুভূতির নাম। যারা জীবন যৌবন বাংলাদেশে কাটিয়ে বিলাতে এসেছেন তারা নি:স্বার্থভাবে আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করেন। তাদের কষ্টার্জিত অর্থ দলের জন্য ব্যয় করেন। বিনিময়ে তারা কিছুই চান না। এমনকি অনেকে আক্ষেপ করে বলেন, দেশে গেলে নেতারা এসব কর্মীদের চেনেনও না। তারপরও তারা বঙ্গবন্ধুর প্রতি, শেখ হাসিনার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসায় কাজ করে যান। এ রকম নি:স্বার্থ কর্মী আছে বলে আওয়ামী লীগ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে আছে। ”
রাজনীতিতে আসার কথা বলতে গিয়ে আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন,“১৯৭৯ সালের নির্বাচনে এম এ মান্নান আমাদের এলাকায় এসেছিলেন। তখন আমাদের বাসায় এসেছিলেন। সে সময় বাবার হাত ধরে জয় বাংলা শ্লোগান দিতাম।” সাংগঠনিকভাবে ১৯৮১ সালে দেওয়ানবাজার ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সেক্রেটারীর দায়িত্ব পান আমিন। ১৯৮২ সালে ২১ ডিসেম্বর মার্শাল চলাকালীন সময় গঠিত চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কমিটিতে সর্বকনিষ্ট সদস্য হিসেবে স্থান পান। ১৯৮৪ সালে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯২ সালে হন গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক। ১৯৯৪ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এবং ৯৬ সালে সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি সহ-সম্পাদক হন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সদস্য হন। ২০১২ সালেও সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০১৬ সালে উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি।
১/১১ এর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, “শেখ হাসিনা আমার কাছে একটি ইমোশন। আমি ওনার সামনে গিয়ে কথা বলতে পারিনা।” ওই সময় যখন শেখ হাসিনা গ্রেফতার হন তখন ঢুকরে কেঁদে ওঠেন তিনি। সকালে মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে আমিন বেরিয়ে পড়েন আদালতের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনার পাশে থাকার জন্য। আজও তিনি আছেন ছায়ার মতো, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত প্রিয় নেত্রীর পাশে থাকার ইচ্ছাও ব্যক্ত করেন তিনি।
কেআই/