ঢাকা, শুক্রবার   ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪,   আশ্বিন ১২ ১৪৩১

‘মিন্নির মুক্তি আজকালের মধ্যেই’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:৩৩ পিএম, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০৩:৩৬ পিএম, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সোমবার

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির কারামুক্তিতে আইনগত যে জটিলতা ছিল তা কেটে গেছে। তাই দু’একদিনের মধ্যে তিনি মুক্তি পাবেন বলেই জানিয়েছেন তার আইনজীবী জেড আই খান পান্না। অর্থাৎ আজকালের মধ্যেই মুক্তি পাবেন মিন্নি।

তিনি বলেন, ‘এখন মিন্নির কারামুক্তিতে আইনগত কোনও বাধা নেই। আশা করছি, আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষে দু-একদিনের মধ্যে মিন্নি কারামুক্ত হবেন।’

মিন্নিকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত চেয়ে রোববার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে আজ সোমবার ‘নো অর্ডার’ দিয়েছেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর চেম্বার আদালত।

আর এর ফলে বহাল থাকছে মিন্নির জামিন এবং তার মুক্তিতে আর কোনও বাধা থাকছে না বলে জানান তার আইনজীবী জেড আই খান পান্না।

এদিকে রোববারই প্রকাশিত হয় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের স্বাক্ষরিত মিন্নিকে দেয়া জামিনের ৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়।

এর আগে গত ২৯ আগস্ট মিন্নিকে কেন জামিন দেয়া হবে না- মর্মে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে দুই শর্ত দিয়ে মিন্নির অন্তর্বর্তী স্থায়ী জামিন মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।

শর্ত দুটি হলো- ১. জামিনে থাকাবস্থায় মিন্নি তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের জিম্মায় থাকবেন; ২. জামিনে থাকাবস্থায় তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। এই দুই শর্তের ব্যত্যয় ঘটলে মিন্নির জামিন বাতিল হবে বলে রায়ে উল্লেখ করেন হাইকোর্ট।

প্রসঙ্গত, গত ২৯ আগস্ট মিন্নির জামিনের বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ বলে ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। তবে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর মিন্নিকে মিডিয়ার সঙ্গে কথা না বলার নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।

গত ২৬ জুন রিফাতকে বরগুনার রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পর দিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন, তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকে। পরে মিন্নির শ্বশুর তার ছেলেকে হত্যায় পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করলে ঘটনা নতুন দিকে মোড় নেয়।

তদন্তের স্বার্থে গত ১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরদিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠান। 

রিমান্ডের তৃতীয় দিন শেষে পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘মিন্নি হত্যাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা এবং হত্যা পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে মিন্নির যুক্ত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।’

পরের দিন মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হলে সেখানে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে পুলিশ জানায়।

এসময় মিন্নির বাবা অভিযোগ করেন যে, ‘নির্যাতন করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে’ মিন্নিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে পুলিশ। এর পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের হাত আছে বলেও তার দাবি। যার প্রেক্ষিতে মিন্নি পরে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেন।

এরপর মিন্নির জামিন আবেদন করা হয়। কিন্তু বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিন্নির জামিন আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার পর গত ৫ আগস্ট হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবীরা।

এনএস/