জমে উঠেছে জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফেব্রিক উইক
রিজাউল করিম
প্রকাশিত : ০৫:৩৩ পিএম, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০৫:৩৬ পিএম, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সোমবার
দেশি-বিদেশি ক্রেতাদের পদচারণায় জমে উঠেছে রাজধানীতে আয়োজিত বাংলাদেশ টেক্সটাইল এবং গার্মেন্টস শিল্পের জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ‘ফেব্রিক উইক’ প্রদর্শনী। রোজ পনের থেকে বিশটি দেশের বড় বড় পোশাক শিল্প প্রতিনিধিরা এ প্রদর্শনীতে আসছেন। তারা সাজিয়ে রাখা বিভিন্ন নতুন আইটেমের পোশাক ঘুরেঘুরে দেখছেন। আর তাদের পরিদর্শনের সহযোগিতায় ব্যস্ত সময় কাটছে কর্মীদের।
রাজধানীর গুলশান-২ এ কনকর্ড টাওয়ারের ১৩ তলায় জাবের অ্যান্ড জুবায়ের করপোরেট অফিসে পঞ্চমবারের মতো আয়োজিত এ প্রদর্শনী আজ সোমবার সরেজমিন ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। গতকাল রোববার থেকে শুরু হওয়া একক প্রতিষ্ঠানের এ পণ্য প্রদর্শণী চলবে আগামী ৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। এবারের প্রদর্শনীতে দেশী-বিদেশি ৫৬০জন ক্রেতা-দর্শনার্থী মেলা পরিদর্শনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে বলে জানায় আয়োজক প্রতিষ্ঠান জাবের অ্যান্ড জুবায়ের। তবে প্রদর্শনীতে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন ছাড়াও ক্রেতা-দর্শনার্থী আসছে বলে জানায় জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফেব্রিক ব্রান্ড অ্যান্ড কাস্টমার কেয়ার সিনিয়র ম্যানেজার অনল রায়হান।
তিনি বলেন, পোশাক খাতে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম নির্ভরস্থল। বিশ্ববাজারে চীন, ভারত ইত্যাদি দেশের সঙ্গে আমাদের প্রতিযোগিতা চলছে। এরকম অবস্থায় ‘ফেব্রিক উইক’ গোটা বাংলাদেশের ইমেজ বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এবারের প্রদর্শনীতে আমাদের কারখানায় নিজস্ব নকশাবিদ এবং বস্ত্র বিশেষজ্ঞদের দিয়ে রফতানি বাজারের জন্য তৈরি পণ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে।
জানা গেছে, জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফেব্রিক্স টানা এগারো বার বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বর্ণ ট্রফি পেয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানিতে এ গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান পুরস্কার পেয়েছে। গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফেব্রিক্সের ব্যস্থাপনা পরিচালক এ এস এম রফিকুল ইসলাম ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জাবের এ পুরস্কার নেন।
বাংলাদেশের বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতে ২০১৭ সালে প্রথম ফেব্রিক মেলার আয়োজন করে জাবের অ্যান্ড জুবায়ের। এবার মেলায় মূলত শরৎ এবং শীতের বস্ত্র ও পোশাক প্রদর্শন করা হচ্ছে। প্রায় সব আন্তর্জাতিক কাপড়ের ব্র্যান্ড ও রিটেইলারের প্রতিনিধিরা এ প্রদর্শনীতে আসছেন। এতে এইচ অ্যান্ড এম, মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার, সিয়ার্স, কোহলস, সি অ্যান্ড এ, আমেরিকান ইগল, জারা, টেসকো প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। জাবের অ্যান্ড জুবায়ের প্যারিসের টেক্সওয়ার্ল্ডের কাপড়ের মেলা ছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের মিল উইকগুলোতে নিয়মিত অংশ নিচ্ছে।
প্রদর্শণীর আয়োজক সূ্ত্রে জানা গেছে, ইউরোপ, আমেরিকা এবং এশিয়ায় পোশাক ও কাপড় ক্রেতারা এ ধরনের মিল উইকের আয়োজন করে থাকে প্রতি বছর। এতে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, চীন, তুরস্ক, ভিয়েতনাম, মিশরসহ বিভিন্ন দেশের পোশাক উৎপাদনকারীরা অংশ নেয়। দেশের সর্বোচ্চ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফেব্রিক। নিজেদের পণ্য ক্রেতাদের কাছে তুলে ধরতে প্যারিসের টেক্সওয়ার্ল্ডসহ এই ধরণের উইকগুলোতে নিয়মিত অংশ নিয়ে আসছে। তবে চলমান এই ‘ফেব্রিক উইক’ জাবের অ্যান্ড জুবায়ের এর নিজস্ব উদ্যোগে আয়োজিত। যেখানে শুধু জাবের অ্যান্ড জুবায়ের এর ফেব্রিক প্রদর্শন করা হয়।
এবারের প্রদর্শনীতে ফিলিপাইনের কনকর্ড ভেন্সার, জাপানের মারুবিনি ইউনি ক্লো, রাশিয়ার ওডজি, ইউরোপের উইন্ডি গ্রুপ, ইংল্যান্ডের সিরিফিল্ড, হংকংয়ের ইপিআইসি, ভারতের জেডএক্সওয়াই ইন্টারন্যাশনালসহ বিশ্বের ১০টি দেশের বিখ্যাত পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা পরিদর্শনে আসবেন।
জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফেব্রিক বাংলাদেশের ডিজিটাল মার্কেটিং ম্যানেজার খালিদ বিজু বলেন, এবার প্রদর্শনীতে অংশ নিতে আমাদের অফিসের ওয়েবসাইটে নির্দিষ্ট নিয়মে নিবন্ধন করছেন দেশী-বিদেশি ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। এখনও পর্যন্ত অনেকে ফোনে বা অনলাইনে পরিদর্শনে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করছেন। অনেকে আবার না জানিয়েই চলে আসছেন। ধারণা নিচ্ছেন। এবারের ফেব্রিক উইকে ২০টি ক্যাটাগরির ফেব্রিক প্রদর্শন হচ্ছে। যার মধ্যে অন্যতম নতুন আকর্শণ হলো সমুদ্রের তলদেশে পড়ে থাকা প্লাস্টিকের ফেলে দেয়া বোতল থেকে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে তৈরি পোশাক সবার নজর কেড়েছে। এটি সম্পূর্ণ পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যটি রফতানি শুরু হয়েছে। বিশ্ববাজারে এর চাহিদা দিনদিন আরও বাড়ছে।
প্লাস্টিকের এ বোতল থেকে তৈরি পোশাক কতটা স্বাস্থ্যসম্মত এমন প্রশ্নে জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফেব্রিক বাংলাদেশের ব্যবসায়ীক উন্নয়ন বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার সুবোধ তালুকদার বলেন, প্লাস্টিক থেকে কাপড় তৈরির কথা শুনলে প্রথমেই মানুষ পরিবেশ বা স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন করে। আসলে আমাদের এ কাপড় পরিবেশ ও স্বাস্থ্যসম্মত। এ কাপড় ব্যবহারে শরীর বা চামড়ার কোন ক্ষতি হবে না। ফেলে দেয়া বোতল থেকে কাপড় উৎপাদনে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে না, বরং পরিবেশ দূষণমুক্ত হচ্ছে। কারণ সমুদ্রের তলদেশের প্লাস্টিক বোতল কাজে না লাগাতে পারলে সেটা পরিবেশকে ক্ষতিই করে।
আরকে//