মালিবাগে উবার চালক মিলন হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:৪৩ পিএম, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ১১:১১ পিএম, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার
অ্যাপসভিত্তিক রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান উবারের চালক মো. মিলনকে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন ঘাতক নুরউদ্দিন সুমন। গত ২ সেপ্টেম্বর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহর কাছে জবানবন্দিতে তাকে হত্যার বর্ণনা দেন ঘাতক নুরউদ্দিন।
বর্ণনায় নুরউদ্দিন জানায়, মিলনকে হত্যার পর তার মোটরসাইকেলটি নিয়ে ফ্লাইওভার থেকে নেমে মালিবাগ বাজারে যায় ঘাতক মো. নুরউদ্দিন। বাজারে বসেই চা খায় সে। এরপর মালিবাগের একটি নির্মাণাধীন ভবনে মোটরসাইকেলটি লুকিয়ে রাখে সে।
গত ২৬ আগস্ট রাত আড়াইটার দিকে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে মালিবাগ ফ্লাইওভারের ওপরে চালক মিলনকে গলা কেটে হত্যা করা সে। এরপর থেকেই পলাতক ছিল যাত্রীবেশী ঘাতক নুরুউদ্দিন সুমন। তবে গত ১ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত তিনটার দিকে মালিবাগ এলাকা থেকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিম গ্রেফতার করে নুরুউদ্দিনকে। আর ২ সেপ্টেম্বর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে সে। এরপর আদালতে পেশ করলে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন আদালত।
নুরউদ্দিনের দেয়া জবানবন্দি থেকে জানা যায়, তার বাড়ি নোয়াখালী। রাজধানীর শাহবাগ থেকে ফুল নিয়ে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতো সে। গত ২৬ আগস্ট রাত ১টা ৪৫ মিনিটে বাসা থেকে বের হয়ে মালিবাগস্থ আবুল হোটেলের সামনে যায় নুরুদ্দিন। সেখান থেকে গুলিস্তান যাওয়ার জন্য ৫০ টাকা চুক্তিতে উবার চালকের মোটরসাইকেলে চড়ে সে। যে মোটরসাইকেলটির চালক ছিলেন নিহত মো. মিলন।
সেই মোটরসাইকেলে চড়ে মালিবাগ ফ্লাইওভারে ওঠার পর চালককে সিগারেট ধরানোর কথা বলে থামতে বলে এবং ফ্লাইওভারের ওপর দাঁড়িয়েই ধূমপান করে দুজনে। ধূমপান শেষে ঘাতক নুরউদ্দিন চালককে পেছনে বসতে বলে নিজে মোটরসাইকেলটি চালাতে চায়। কিন্তু তাতে রাজি হননি চালক মিলন। এমনকি তাকে নিয়ে গুলিস্তান যেতেও অস্বীকৃতি জানান মিলন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে প্রথমে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
একপর্যায়ে নুরউদ্দিন তার পকেটে থাকা অ্যান্টিকাটার দিয়ে মিলনের গলা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে পোচ দেয়। আঘাত প্রাপ্ত হয়ে নিজের মোবাইল ফোন, হেলমেট ও মোটরসাইকেল রেখে গলা চেপে ধরে শান্তিনগরের দিকে নেমে যান মিলন। এসময় তার মোবাইল ফোনটি নিয়ে নেয় নুরউদ্দিন। পরে তার (মিলনের) মৃত্যু হয়।
এদিকে মোবাইল নেয়ার পর মিলনের মোটরসাইকেলটি ঘুরিয়ে ফ্লাইওভারের উল্টোপথ দিয়ে মালিবাগ বাজারে নামে নুরউদ্দিন। বাজারে বসে চা খায় সে। এরপর সেখান থেকে মালিবাগের ২২২/২ মেট্রো এইমের নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ের সামনে যায় নুরউদ্দিন। বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে জানায়, কিছু সময়ের জন্য বন্ধুর মোটরসাইকেলটি সেখানে রাখতে চায় সে। পরে বাউন্ডারির ভেতরে খোলা জায়গায় মোটরসাইকেল রেখে হেলমেট ও মোবাইল ফোন নিয়ে বাসায় চলে যায় নুরউদ্দিন।
এ বিষয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, ‘এ ঘটনায় নুরউদ্দিন একাই জড়িত। সে ছিনতাই ও চুরির সঙ্গেও জড়িত। তবে তার বিরুদ্ধে থানায় কোনও মামলা এখনও পাওয়া যায়নি।’
এদিকে যেসব প্রতিষ্ঠান অ্যাপসভিত্তিক রাইড শেয়ারিং ব্যবসা করে, তাদের আরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত বলে মনে করেন আব্দুল বাতেন। তিনি বলেন, চুক্তিভিত্তিক রাইড শেয়ারিং করা উচিত নয়। এজন্য চালক ও যাত্রী উভয়ের মধ্যে ঝুঁকি থেকে যায়।
এনএস/