ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

‘টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ আবশ্যক’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৩৫ পিএম, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ১২:০৮ এএম, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ বুধবার

বিশ্বব্যাপী উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহের মধ্যে সম্পদ এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরের জন্য সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে পৌঁছাতে বিদেশী বিনিয়োগের বড় ভূমিকা রয়েছে। ভারী এবং হালকা উভয় ধরনের সম্পদ জড়ো করার জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী আন্তর্জাতিক পদ্ধতি হিসাবে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগকে বিবেচনা করা হয়, যা প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নের জন্য অত্যাবশ্যক।  

বিগত দু’বছরের মত ২০১৮ সালেও সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ ১৩ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ১.৩ ট্রিলিয়ন হয়েছে। বিদেশী বিনিয়োগ হ্রাস পাওয়ার একটা বড় কারন ২০১৮ সালের প্রথম দুই কোয়ার্টারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক এন্টাপ্রাইজগুলোর পুঞ্জীভ’ত বিদেশী আয়ের বড় একটি অংশ দেশে ফিরিয়ে আনা।

বিগত ৩০ বছরে, উন্নয়নশীল দেশের আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বিনিয়োগের ধরন ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন হয়ে বাণিজ্য এবং গ্লোবাল ভ্যালু চেইনের মত অপরিহার্য অংশে পরিনত হয়েছে। অনেক উন্নয়নশীল দেশই এখন ক্রমশ কৃত্রিম পণ্য এবং সেবা উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে, এগুলো বহুজাতিক এন্টারপ্রাইজগুলোর সমন্বিত আন্তর্জাতিক উৎপাদন নেটওয়ার্কের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

২০৩০ সালের এজেন্ডা অর্জনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উন্নয়নশীল দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। উৎপাদন ক্ষমতা উন্নীতকরণ ও বহুমুখীকরণ এবং যোগাযোগকে এগিয়ে নেয়ার জন্য এনার্জি এবং পরিবহন অবকাঠামো এখনও অগ্রাধিকার খাত। বিভিন্ন দেশ, বিশেষত স্বল্পোন্নত দেশসমূহ এখনও অনেকাংশে আন্তর্জাতিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল।

এটা অনুমান করা হয় যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের জন্য গোটা বিশ্বের ৪.৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৭.৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হবে। টঘঈঞঅউ এর হিসাব অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ টেকসই উন্নয়ন খাতের বার্ষিক বিনিয়োগ ব্যবধান ২.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং অনেক দেশকেই অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ দ্বিগুন করতে হবে।

ঊঝঈঅচ  এর হিসাব অনুযায়ী এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে বাৎসরিক অতিরিক্ত ১.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, গড়ে জিডিপির ৫ শতাংশ অর্থায়নের পয়োজন হবে। এ অঞ্চলের স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন, কেননা টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে এ দেশগুলোর জিডিপির ১৬ শতাংশ অর্থায়নের প্রয়োজন হবে। এ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে এ লক্ষ্য অর্জনে জাতীয় প্রচেষ্টার সাথে আঞ্চলিক সহযোগিতাও বাড়াতে হবে ।

টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে সরকারী এবং বেসরকারী খাতের মধ্যে নজীরবিহীন সমন্বয় এবং সহযোগিতা প্রয়োজন। বিশ্ব অর্থনৈতিক কাঠামোরও সংস্কার প্রয়োজন, যেমন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আভ্যন্তরীন এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান সমূহের ভূমিকা আরও শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন।

যাহোক, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে পর্যাপ্ত অর্থায়নের ব্যবস্থা রাখা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও সরকারী বেসরকারী উভয় খাত থেকেই সমন্বিত টেকসই অর্থায়ন বাড়ছে, কিন্তু টেকসই উন্নয়ন সংক্রান্ত বিনিয়োগ এখনও অপ্রতুল। ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা এবং সংরক্ষিত বাণিজ্য নীতির কারনে বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি বাড়ছে।

এটা সুপারিশ করা হয় যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে পৌঁছাতে শক্তিশালী এবং বহুমুখী অর্থনৈতিক কর্মকান্ড যেমন কর ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা, ODA, বাণিজ্যিক ব্যাংকিং, মূলধন বাজার, নন-ব্যাংক আর্থিক প্রকল্প, জলবায়ুর অর্থায়ন, ক্ষুদ্র ব্যবসা এবং সাপ্লাইচেইন অর্থায়ন, র‌্যামিট্যান্স, FinTech ও STI অর্থায়ন ইত্যাদি নতুন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশগুলোকে এগোতে হবে।

বিশ্বব্যাপী সমন্বিত এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন বৃদ্ধির জন্য স্বল্প মেয়াদে বিনিয়োগের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের জন্য মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে যাতে কেউ পিছিয়ে না থাকে, বিশেষত স্বল্প আয়ের শেণিভূক্তরা। 

এনএস/