ট্রাভেল পাস নিতে হাইকমিশনে উপচে পড়া ভিড়
শেখ আরিফুজ্জামান, মালয়েশিয়া থেকে:
প্রকাশিত : ০৫:১৮ পিএম, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার
মালয়েশিয়ান সরকারের ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার মধ্যেও ধরপাকড় অভিযান অব্যাহত থাকায় অবস্থানরত অবৈধ প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেশে ফিরতে ট্রাভেল পাস সংগ্রহে হাইকমিশনে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
জানা গেছে, সরকারের ঘোষিত সাধারণ ক্ষমা কর্মসূচির আওতায় দেশে ফিরছেন অবৈধ প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশে ফিরতে প্রতিদিন মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে ট্রাভেল পাস সংগ্রহে ভিড় করছেন শত শত অবৈধ বাংলাদেশীরা।
এদিকে, মালয়েশিয়ান সরকারের ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার মধ্যেও ধরপাকড় অভিযান অব্যাহত থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অবৈধভাবে অবস্থান করা বাংলাদেশীসহ বিদেশী শ্রমিকেরা। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান থেকে কোনোভাবেই রেহায় পাবে না জেনে এবার তারা ট্রাভেল পাস সংগ্রহের জন্য ভিড় জমাচ্ছেন বাংলাদেশ হাইকমিশনে।
এছাড়া ট্রাভেল পারমিট (টিপি) ইস্যুতে কঠোর অবস্থানে দূতাবাস। সঠিক তথ্যাদি ও প্রমাণ সাপেক্ষে প্রকৃত বাংলাদেশীদেরকে টিপি ইস্যু করা হচ্ছে। কাউকে ট্রাভেল পাসের জন্য অর্থ দিয়ে থাকলে এবং প্রতারিত হলে তথ্য ও প্রমাণাদিসহ মিশনে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
ট্রাভেল পাসকে কেন্দ্র করে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ট্রাভেল পারমিট করে দেয়ার নামে বিভিন্ন অফিস। ওইসব অফিস হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকে চটকদার আইডি খুলে ট্রাভেল পারমিট করে দেয়ার নামে সাধারণ শ্রমিকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার রিঙ্গিত। ফলে অবৈধ বাংলাদেশিরা ট্রাভেল পাস পেতে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার এ প্রতিবেদককে বলেন, দালাল বা প্রতারকদের সঙ্গে কোনকরম লেনদেন না করতে আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছে। মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষিত এ কর্মসূচির আওতায় মালয়েশিয়ায় প্রবেশের কোনো তথ্য নেই বা ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করেছে এবং ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবস্থান করছে এমন ব্যক্তিরা সহজ শর্তে মালয়েশিয়া ত্যাগের সুযোগ পাচ্ছেন।
এ কর্মসূচি ১ আগস্টে থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত চলবে। মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট এবং নিশ্চিত (কনফার্মড) বিমান টিকিটসহ আবেদন করতে হবে এবং জরিমানা ও স্পেশাল পাস বাবদ সর্বসাকুল্যে ৭০০ রিংগিত জমা দিতে হবে। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আবেদনের এক কার্যদিবসের মধ্যেই স্পেশাল পাস বা বহির্গমনের অনুমতি প্রদান করবে। এই অনুমতি প্রাপ্তির তারিখ থেকে ৭ দিনের মধ্যেই মালয়েশিয়া ত্যাগ করতে হবে। আবেদনকারীদের সুবিধা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন সারাদেশে ৮০টির বেশি বুথ স্থাপন করেছে। এ কর্মসূচির কাজ প্রক্রিয়াকরণের জন্য কোনো তৃতীয় পক্ষ বা ভেন্ডর বা এজেন্ট নিযুক্ত করা হয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ হাইকমিশন ইচ্ছুক অবৈধ প্রবাসীদের দেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য দীর্ঘসূত্রতা ও হয়রানিমুক্ত সহজ পদ্ধতি প্রবর্তন এবং জেল জরিমানা ব্যতিরেকে দেশে ফেরা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা ফসল অবৈধদের দেশে ফেরা। ফলে মালয়েশিয়া সরকার 'বিফোরজি' কর্মসূচি চালু করেছে। এর আগের পদ্ধতিতে গ্রেফতার, জরিমানা ও কারাবরণ শেষে ডিপোর্টেশন ক্যাম্পে অবস্থানের পর দেশে ফেরত যেতে হয়; আত্মসমর্পণকারীদের স্পেশাল পাস বা বহির্গমন অনুমতি পেতে ১৪ দিন অপেক্ষা করতে হয় এবং ৩১০০ রিংগিত বা তার বেশি জরিমানা দিতে হয়, যা তাদের জন্য কষ্টকর।
প্রতিদিন মালয়েশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নানা কারণে অবৈধ হয়ে পড়া শ্রমিকরা ট্রাভেল পাস নিতে ভোর বেলা থেকেই বাংলাদেশ হাইকমিশনে এসে ভিড় জমাচ্ছেন। ১ আগস্ট থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত কয়েক হাজার ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হয়েছে।
এদিকে, ট্রাভেল পাস নিতে বাংলাদেশিরা যাতে হয়রানির শিকার না হন সেজন্য মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের ফেসবুক পেজে কিছু পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
আরকে/