ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

ব্রেক্সিট ইস্যু: নতুন সংকট ও সম্ভাবনা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:৫৯ পিএম, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার

'ব্রিটিশ এক্সিট' নামটিকে সংক্ষেপে ডাকা হচ্ছে ব্রেক্সিট নামে। এটি হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাবার প্রক্রিয়া। ব্রেক্সিট বুঝতে হলে আগে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সর্ম্পকে ধরণা থাকতে হবে। একথায় বলা চলে ক্ষমতা রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি নিজেদের হাতে রাখতেই এই সংকট তৈরি হয়। এখনও ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যে বিতর্ক চলছেই।

দেশটির পার্লামেন্টে কোনো ভোটাভুটিকে কেন্দ্র করে রাজনীতিকদের এমন দৌড়ঝাঁপ ও উত্তেজনার ঘটনা নিকট অতীতে আর দেখা যায়নি। এর আগে ১৯৬৬ সালে লেবার পার্টি হেরেছিল ১৬৬ ভোটের বিশাল ব্যবধানে। গত বছরের নভেম্বরে চুক্তি সম্পাদনের পর ১১ বার এ বিষয়ে জনমত যাচাই করা হয়। সবশেষ  খবর অনুযায়ী, আগামী ৩১শে অক্টোবরেই তাদের এই ইউরোপীয় জোট থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। তো এখন আর কী কী হতে পারে? এর মধ্যেই তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কি চুক্তি করে নাকি চুক্তি ছাড়াই ই.ইউর সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটাবে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলছেন, বের হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি ইইউর সাথে নতুন করে চুক্তি করতে চান। তবে তিনি এটাও স্পষ্ট করে দেয়েছেন যে সমঝোতা হোক কি না হোক ৩১শে অক্টোবরেই ব্রিটেন ইইউর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কী?

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) হচ্ছে ২৮টি দেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক জোট। এই জোটের সদস্য দেশগুলো নিজেদের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য করে থাকে, এসব দেশের নাগরিকরা জোটভুক্ত যেকোন দেশে গিয়ে থাকতে ও কাজ করতে পারেন। (সদস্যদেশগুলোর নামের তালিকা এখানে দেখতে পারেন) ১৯৭৩ সালে যুক্তরাজ্য ইইউতে যোগ দেয়। তখন এটির নাম ছিল- ইইসি (ইউরোপিয়ান ইকনোমিক কম্যুনিটি)

ইইউ ছাড়ছে কেনযুক্তরাজ্য?

৪০ বছরের বেশি সময় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে থাকার পর ২০১৬ সালের ২৩শে জুন একটি গণভোট নিয়েছিল যুক্তরাজ্য। সেখানে সেদেশের নাগরিকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল- যুক্তরাজ্যের কি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে থাকা উচিত নাকি উচিত না?

৫২ শতাংশ ভোট পড়েছিল ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে,আর থাকার পক্ষে ছিল বাকি ৪৮ শতাংশ ভোটকিন্তু সেই ভোটের ফলাফলের সাথে সাথেই ব্রেক্সিট হয়ে যায়নি। এই বিচ্ছেদ ঘটবে আগামী ২৯শে মার্চ।

এখন পর্যন্ত কী ঘটেছে?

২০১৬ সালে সবেমাত্র শুরু হয়েছে এই প্রক্রিয়া। এরপর থেকে যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপিয়ান দেশগুলোর মধ্যে সমঝোতা চলছে।

আলোচনা মূলত এই 'ডিভোর্স' চুক্তিটি নিয়েই। আলোচনার বিষয়বস্তু হচ্ছে - ঠিক কী উপায়ে যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বের হবে; ছাড়ার পর কী হবে সেটি নয়।

 

এই চুক্তিটি 'প্রত্যাহার চুক্তি' নামে পরিচিত।

প্রত্যাহার চুক্তির মূল বিষয়গুলো:

বের হতে হলে যুক্তরাজ্য ইইউকে যে পরিমাণ অর্থ দিতে হবে তা হলো - প্রায় ৩৯ বিলিয়ন ডলার যুক্তরাজ্যের যেসব নাগরিক ইইউ ভুক্ত দেশগুলোতে রয়েছেন তাদের এবং যুক্তরাজ্যে ইইউভুক্ত দেশগুলোর যেসব নাগরিক রয়েছেন তাদের কী হবেনর্দান আয়ারল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ড রিপাব্লিক এর মাঝামাঝি ইইউ এবং যুক্তরাজ্যের সীমানা কীভাবে নির্ধারণ হবে যুক্তরাজ্য এবং ইইউকে একটি নির্দিষ্ট 'অন্তবর্তীকালীন সময়' দেওয়া হয়েছে যেন তারা একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে এবং নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য বুঝে নিতে পারে।

প্রত্যাহার চুক্তিতে এমপিরা কীভাবে ভোট দিয়েছেন? এখন পর্যন্ত তারা দুই বার ভোট দিয়েছেন।প্রথমবার ১৫ই জানুয়ারিতে, প্রধানমন্ত্রী মে ২৩০ ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন।পরে টেরিজা মে ইইউ'র সাথে দেন-দরবার করে আরো কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসলেও ১২ই মার্চ এমপিরা আবারো এই চুক্তির বিপক্ষে ভোট দেন। এবারের ব্যবধান দাঁড়ায় - ৩৯১ এবং ২৪২ ভোট।

 

এখন কী ঘটছে?

এমপিরা আবারো ১৩ই মার্চ (আজকে) বুধবার ভোট দিবেন যে তারা কি কোন ধরনের চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট ছাড়তে চান কি-না। মনে করা হচ্ছে - তারা এবারো 'না' বলবেন।

যদি এমপিরা না বলেন, তবে টেরিজা মে ১৪ই মার্চ এমপিদের কাছে জানতে চাইবেন - ইইউ থেকে বের হওয়ার তারিখ ২৯শে মার্চ থেকে আর পেছানো যায় কি-না। মিজ. মে বলেছেন, এ বিষয়টি জুনের শেষ নাগাদ নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। আর তখন বিষয়টি একবারের জন্যই হবে। তখন ইইউকে অবশ্যই এই বিলম্ব মেনে নিতে হবে।

কিন্তু ২৩শে মে শুরু হওয়া ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের নির্বাচনে যুক্তরাজ্য অংশ না নিলে এরপর আর সময় বাড়ানো হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইইউ। জনগণ কেন এই বিলটির বিরোধিতা করছে?

বিলটি নিয়ে বিরোধিতাকারীদের নানা ধরনের অভিযোগ আছে। অনেকেই দাবি করেন, বিলটি যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ইইউ-এর প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করার মতো সুযোগ দেয়নি।

তাছাড়া আরেকটি বড় আপত্তির জায়গা হলো আইরিশ সীমান্তে আসলে কী হবে - তা নিয়ে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্য দু'পক্ষই এ বিষয়ে আরেকটি নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা চুক্তিতে উল্লেখ করেছে।এটি হলো ব্যাকস্টপ।

ব্যাকস্টপ কী?

ব্রেক্সিট সমঝোতায় যাই আসুক না কেন আয়ারল্যান্ড দ্বীপে একটি মুক্ত সীমান্ত রাখার সর্বশেষ চেষ্টা বোঝাতে 'ব্যাকস্টপ' শব্দটি ব্যবহার করা হয়। এটা হলো এমন ব্যবস্থা যেখানে যুক্তরাজ্যের অন্যান্য অংশ ছাড়া শুধুমাত্র নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে খাদ্যদ্রব্যসহ বেশ কিছু বিষয়ে ইইউ-এর নিয়ম বলবৎ থাকবে।

প্রধামন্ত্রী টেরিজা মে বলছেন - যদি পরিকল্পনামাফিক সবকিছু হয়, এটা কোন তেমন কাজে আসবে না। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে বিরক্ত কয়েকজন এমপি। তাদের যুক্তি, ব্রিটেন ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলেও তার অংশ উত্তর আয়ারল্যান্ড ইইউর আইনের কাঠামোর মধ্যেই থেকে যাচ্ছে, এটা হতে পারে না।

আবার অনেকে ইইউ-এর কাছাকাছি বা ভেতরেও থাকতে চাইছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডকে যুক্তরাজ্যে অন্যান্য অংশ থেকে ভিন্নভাবে দেখা উচিত নয়।

স্ট্রাসবুর্গে ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট ইয়ংকার এবং প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে ২৯শে মার্চ যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বের হচ্ছে?

আইন অনুযায়ী, স্থানীয় সময় রাত ১১টায় যুক্তরাজ্য বের হয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।

কিন্তু এটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না যে ঐদিন কী হবে। এই তারিখ আবার পেছাতেও পারে। আগেই যেমন বলা হয়েছে যে তারিখ পেছানো নিয়ে ব্রিটিশ এমপিদের মধ্যে ভোটাভুটি হবে। যদি তারা তারিখ পেছাতে না চায় - কখন কী হবে?

মিজ. মে বলেছেন, যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন তারা তা তারিখ পিছিয়ে লাভ হবে না। এমনকি ইউরোপীয়ান কোর্ট অফ জাস্টিস বলেছে যে কোন ধরনের সম্মতি ছাড়াই যুক্তরাজ্য ব্রেক্সিট থেকে বের হয়ে আসতে পার্কিন্তু টেরিজা. মে বলেছেন, তিনি সেটা করবেন না।

চুক্তি ছাড়া বের হলে যুক্তরাজ্য কী করবে?

চুক্তিহীন থাকার অর্থ হচ্ছে যুক্তরাজ্য একটি প্রত্যাহার চুক্তিতে সম্মত হতে ব্যর্থ হয়েছে। এর মানে দাঁড়ায়, ২৯শে মার্চের পর যুক্তরাজ্য অর্ন্তবর্তীকালীন কোন সময় পাবে না এবং যুক্তরাজ্যে সমস্ত ইইউ আইন অকার্যকর হয়ে যায় সরকার এই পরিস্থির জন্য 'প্রস্তুতি নিচ্ছে' বলে জানিয়েছে। সরকার ধারণা করছে - এর ফলে কিছু খাদ্য দ্রব্যের দাম বাড়তে পারে এবং কাস্টমস-এর চেকিং এর জন্য হাজার হাজার পাউন্ড খরচ হতে পারে। তবে পোষা প্রাণী, পাসপোর্ট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহসহ - সব বিষয়ে একটি বিস্তর নীতিমালা প্রকাশ করেছে ব্রিটেন।

টিআর/