ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

ফের ছড়াচ্ছে গরুর অ্যানথ্রাক্স রোগ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:০২ পিএম, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ শুক্রবার

বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায় সম্প্রতি অ্যানথ্রাক্স রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় সেসব এলাকার মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। মানুষের অ্যানথ্রাক্স মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে - একধরণের অ্যানথ্রাক্স হয় পরিপাকতন্ত্রে, আরেক ধরণের অ্যানথ্রাক্স শরীরের বাইরের অংশে সংক্রমণ ঘটায়। পরিপাকতন্ত্রে অ্যানথ্রাক্স জীবাণুর সংক্রমণ হলে সাধারণত হালকা জ্বর, মাংসপেশীতে ব্যাথা, গলা ব্যাথার মত উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে বাংলাদেশে যে অ্যানথ্রাক্স দেখা যায় তা শরীরের বাইরের অংশে প্রভাব ফেলে।

এধরণের অ্যানথ্রাক্সে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফোঁড়া বা গোটা হয়ে থাকে। ফোঁড়া ঠিক হয়ে গেলে হাতে, মুখে বা কাঁধের চামড়ায় দাগ দেখা যেতে পারে। যেসব এলাকায় গবাদি পশু পালন করা হয় সেসব এলাকাতেই সাধারণত অ্যানথ্রাক্সের প্রকোপ বেশি দেখা যায়।

বাংলাদেশের রোগতত্ব, নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মেহেরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা জানান বাংলাদেশে সাধারণত কয়েকটি নির্দিষ্ট এলাকাতেই অ্যানথ্রাক্স হয়ে থাকে। "অ্যানথ্রাক্স গরু, ছাগল, মহিষ - এই ধরণের প্রাণির মধ্যে প্রথম দেখা যায়। এসব প্রাণির মাধ্যমেই অ্যানথ্রাক্স মানুষের মধ্যে ছড়ায়।"

কীভাবে অ্যানথ্রাক্স মানুষের মধ্যে ছড়ায়?
মূলত অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশুর মাংস কাটার সময় মানুষের মধ্যে অ্যানথ্রাক্স ছড়ানোর সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। ফ্লোরা বলেন, "পশু জবাই করা, সেটির মাংস কাটাকাটি করা এবং মাংস ধোয়া বা রান্নার সময় অনেকক্ষণ মাংস, রক্ত ও হাড্ডির সংস্পর্শে থাকতে হয়। সেসময় আক্রান্ত পশুর রক্তের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে অ্যানথ্রাক্স।"

মাংস কাটাকাটির সময় মানুষের শরীরের চামড়ায় কোনরকম ক্ষত থাকলে তার দেহে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু প্রবেশ করার সম্ভাবনা বেশি তাকে বলে জানান তিনি।
"আমাদের দেশে পশুর অ্যানথ্রাক্স হলেও অনেকসময় তা জবাই করে মাংস কম দামে বিক্রি করে ফেলা হয়। ঐ মাংস কাটাকাটি করার সময় অ্যানথ্রাক্স আক্রন্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।"

ফ্লোরা নিশ্চিত করেন, পশু থেকে মানুষের মধ্যে অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণ হলেও মানুষ থেকে অন্য মানুষের মধ্যে অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণ হয় না।

আক্রান্ত পশুর মাংস খেলে কী অ্যানথ্রাক্স হতে পারে?
মিজ. ফ্লোরা বলেন, অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশুর মাংস খেয়ে পরিপাকতন্ত্রে অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকলেও বাংলাদেশে সাধারণত যেভাবে মাংস রান্না করে খাওয়া হয় তাতে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু মাংসে টিকে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। "বিদেশে 'হাফ ডান' অবস্থায় মাংস রান্না করে খাওয়া হয়, সেই পদ্ধতিতে রান্না করলে মাংসে জীবাণু থাকার সম্ভাবনা থাকে।" "কিন্তু আমাদের দেশে যেভাবে মাংস রান্না করা হয়, ঐ পদ্ধতিতে রান্না করলে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু থাকার সম্ভাবনা খুব কম থাকে।" তবে, অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশুর মাংস না খাওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ বলে মন্তব্য করেন ফ্লোরা।

অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে করণীয়
অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে মূলত দুই ধরণের পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান ফ্লোরা। প্রথমত, যাদের গরু, মহিষ, ছাগলের মত গবাদি পশু রয়েছে, তারা যেন তাদের পশুকে নিয়মিত অ্যানথ্রাক্সের টীকা দেন তা নিশ্চিত করতে হবে।" আর পশুর যদি অ্যানথ্রাক্স হয়েই যায়, সেক্ষেত্রে পশুকে দ্রুত মাটির নীচে পুঁতে ফেলা প্রয়োজন।

 সূত্র-বিবিসি

আরকে//