ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১

রংপুরে কে পাচ্ছেন লাঙ্গল?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৫৫ এএম, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ শনিবার | আপডেট: ১১:৫৬ এএম, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ শনিবার

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ  নেই। এখন কার হাতে যাচ্ছে টানা ৩০ বছর তার দখলে থাকা রংপুর-৩ সংসদীয় আসন। এ আসনে এবার উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে কে প্রার্থীতার মনোনয়ন পাবেন, জাতীয় পার্টির দূর্গ খ্যাত এ আসনে দলীয় প্রতিক লাঙ্গলের হাল এবার ধরবেন কে? এমন প্রশ্ন নিয়ে সবাই কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে আছে দলটির দিকে। 

তবে দলের মধ্যেই যে ভাঙ্গনের সুর তরঙ্গের সেতারা বাজছে সে তালে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন দলটি নেতাকর্মীরা। দলটির খোদ জ্যেষ্ঠ নেতাদের এমন আত্মকেন্দ্রীক অবস্থা আদোতে দলকে ভালো কিছু উপহার দিতে পারবে কিনা তা নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। 

রংপুর স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রংপুর-৩ আসনে উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে একক প্রার্থী নির্বাচনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। দলের চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচন নিয়ে গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) ও রওশন এরশাদের বিবদমান সংকট নিরসন না হলে এ উপনির্বাচনেও দলের একক প্রার্থী মনোনয়নে অনিশ্চয়তা কাটার সম্ভাবনা নেই। এরই মধ্যে কেউ রওশনপন্থী আবার কেউ জিএম কাদেরপন্থী বলে সামনে এসেছেন। দীর্ঘ দিনের জাতীয় পার্টির ঘাটি এ রংপুরের নিয়ন্ত্রণ এখন মূলত কার হাতে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পাওয়া যাচ্ছে পাল্টপাল্টি বক্তব্য। রংপুর নিয়ে দুই পক্ষ এক না হতে পারলে একক প্রার্থীতা পাচ্ছেন না কেউ। যারা রওশনপন্থী নেতাকর্মীরা চান এরশাদ পুত্র রাহগির আল মাহির (সাদ এরশাদ) হবেন জাতীয় পার্টি থেকে এ উপনির্বাচনের প্রার্থী। অন্যদিকে রংপুর মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসিরকে প্রার্থী করতে চান জিএম কাদেরপন্থীরা। 

নির্বাচন কমিশন’র (ইসি) তফসিল অনুযায়ী, রংপুর-৩ আসন উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। বাছাই হবে ১১ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৬ সেপ্টেম্বর। এবং ৫ অক্টোবর হবে ভোটগ্রহণ।

এ উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হতে এ পর্যন্ত দল থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন রাহগির আল মাহির, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর, রংপুর মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির, এরশাদের ভাগ্নি ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলুর স্ত্রী ড. মেহেজেবুন্নেছা রহমান (টুম্পা)।

জানা যায়, এপ্রিলে অসুস্থ থাকা অবস্থায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার ছোট ভাই জিএম কাদেরকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেন। ১৪ জুলাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার মৃত্যুর ৪ দিন পর ১৮ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে জিএম কাদেরকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। পরে ২৩ জুলাই জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে অস্বীকার করে বিবৃতি দেন রওশন এরশাদসহ দলের সাত সংসদ সদস্য ও দু’জন প্রেসিডিয়াম সদস্য।

দলের চেয়ারম্যান পদ নিয়ে জিএম কাদের ও রওশন এরশাদের মধ্যে টানাটানি চলছে। এর মধ্যে রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যানও ঘোষণা করেছেন তার অনুসারী নেতারা। এ নিয়ে জিএম কাদের ও রওশনের মধ্যে ক্ষোভ ও বিরোধীতার কারনে এখনও চেয়ারম্যান পদটি আসলে কার তা নির্ধারণ করা যায়নি। 

অন্যদিকে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে জিএম কাদেরের সভাপতিত্বে দলটির পার্লামেন্টারি বোর্ডের সভায় রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়। সাক্ষাৎকার দিতে আসেননি রওশনপন্থীদের পছন্দের সাদ এরশাদ। সাদ এরশাদ সাক্ষাৎকার দিতে না আসায় এ আসনে জাপার প্রার্থী হিসেবে জিএম কাদেরপন্থীদের পছন্দের এস এম ইয়াসিরকে চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান। 

আজ শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করতে যাচ্ছে বিবাদমান এ দুই পক্ষ।

এদিকে জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে রওশন এরশাদ বৃহস্পতিবারই নির্বাচন কমিশিনকে চিঠি পাঠিয়েছেন। জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে তার ছাড়া অন্য কারও স্বাক্ষর গ্রহণ না করতে তিনি ইসিকে অনুরোধ জানান। তবে এরশাদ জীবিত থাকাকালে লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দের জন্য ইসিতে চিঠি দেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছিলেন দলের মহাসচিব রাঙ্গাকে। 

জানা গেছে, রাঙ্গার কাছ থেকে লিখিতভাবে সেই ক্ষমতা দুইদিন আগে নিজের কাছে নিয়েছেন জিএম কাদের। নিজেকে দলের একমাত্র বৈধ চেয়ারম্যান হিসেবে দাবি করে জিএম কাদেরও ইসিকে চিঠি দিয়েছেন। 

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মারা যাওয়ার পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের পদটি খালি আছে। আর মহাসচিব হিসেবে মসিউর রহমান রাঙ্গার নাম রয়েছে। এখন উপনির্বাচনের আগে দলটির চেয়ারম্যান নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন না হলে মহাসচিব হিসেবে মসিউর রহমান রাঙ্গা যার মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর করবেন, তাকেই ‘লাঙ্গল’ প্রতীক দেওয়া হবে। 

এমএস/