জাপার দ্বন্দ্বে আড়ালে কেন রাঙ্গা?
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:৩৪ পিএম, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ শনিবার
শীর্ষ পদ নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে জাতীয় পার্টিতে টানাটানি চলছে। রওশন এরশাদ ও গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) দলের চেয়ারম্যান ও বিরোধেী দলীয় নেতার পদ নিয়ে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছেন।
এদিকে পার্টির শীর্ষ পদ নিয়ে টানা হেঁচড়া চললেও রওশন বা জিএম কাদের উভয় পক্ষই মসিউর রহমান রাঙ্গাকে মহাসচিব হিসেবে দাবি করছেন। তবে রওশন বা জিএম কাদের কার প্রতি তার সমর্থন আছে সেটা পরিষ্কার করেননি রাঙ্গা।
বেশ কয়েকদিন ধরে নিরব রয়েছেন রাঙ্গা। যোগ দেননি কারও সংবাদ সম্মেলনে অথবা কর্মসূচিতে। এমনকি অতি জরুরি ছাড়া অন্য কারও ফোনও ধরছেন না। জিএম কাদের বা রওশন এরশাদ কারও ফোন ধরছেন না তিনি।
কারও সঙ্গে দেখা না করা এবং ফোন না ধরলেও বৃহস্পতিবার রাজধানীর সড়ক ভবনে সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের একটি বৈঠকে রাঙ্গা অংশ নেন। তিনি এ কাউন্সিলের সদস্য। বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম কর্মীরা মসিউর রহমান রাঙ্গার সঙ্গে কথা বলতে তার বাসায় গিয়ে দেখা পাননি। মুঠোফোনে চেষ্টা করেও কথা বলতে পারেননি দলীয় নেতাকর্মীরা।
তবে তার সঙ্গে সম্প্রতি কথা বলেছে একুশে টেলিভিশন। একুশে টেলিভিশনের সঙ্গে আলাপকালে মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘আমাকে কর্মীরা ভালোবাসে বলেই সবাই চাইছে। আমি সব সময়ই কর্মীদের খবরাখবর নিতে চেষ্টা করেছি। তাদের জন্য কাজ করতে চেষ্টা করেছি বলে আমার জনপ্রিয়তা আছে।’
বিরোধী দলের নেতা হওয়ার জন্য কে দলীয়ভাবে যোগ্য এমন প্রশ্ন করলে তিনি সদুত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।
রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের মধ্যে দ্বন্দ্ব কি কারণে চলছে এমনটি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আসলে তেমন কোন কারণে হচ্ছে না। কিছু নেতাকর্মী তাদের মাঝখানে ঢুকে পড়ায় এমনটি হয়েছে। স্বার্থবাদী কিছু লোক সব সময়ই ঝামেলার সৃষ্টি করে।’
এ দ্বন্দ্ব স্থায়ী হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে রাঙ্গা বলেন, ‘তেমনভাবে স্থায়ী হবে না। সকলকে নিয়ে বসতে পারলে বিষয়টি সুরাহা হবে।’
এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর মাত্র এক মাস একুশ দিনের মাথায় নিজেদের কলহে বড় কোপ লাগলো তার রেখে যাওয়া জাতীয় পার্টিতে (জাপা)। সংসদের ভেতরে-বাইরে দলের নেতৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ ও সহোদর জিএম কাদেরের মধ্যে চলমান বিরোধের জের ধরে দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গেল। গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে নিজেকে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে ঘোষণা করার অনুরোধ জানিয়ে দলীয় প্যাডে চিঠি পাঠিয়েছেন জিএম কাদের। এরপর বুধবার স্পিকারের প্রতি পাল্টা এক চিঠিতে কাদেরের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন দলের কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ।
এ নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও সংসদ সদস্যরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। বিরোধী দলীয় নেতার আসনে জিএম কাদেরকে চায় এক পক্ষ অন্য পক্ষ চায় রওশন এরশাদকে। মৃত্যুর আগে জিএম কাদেরকে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে এরশাদ লিখিতভাবে ঘোষণা দিয়ে গেলেও গতকাল বৃহস্পতিবার রওশনকে পাল্টা চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করেছেন তার অনুসারীরা।
তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জিএম কাদের বলেছেন, ‘এরশাদের দিয়ে যাওয়া সিদ্ধান্ত ও দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিনিই দলের বৈধ চেয়ারম্যান।’ দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুশিয়ারি দেন কাদের।
বৃহস্পতিবার জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে রওশন এরশাদ বৃহস্পতিবারই নির্বাচন কমিশিনকে চিঠি পাঠিয়েছেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন তার স্বাক্ষর ব্যতীত অন্যকারও স্বাক্ষরকে যেন চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর হিসেবে গণ্য না করা হয়।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে জিএম কাদেরের সভাপতিত্বে দলটির পার্লামেন্টারি বোর্ডের সভায় রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়। সাদ এরশাদ সাক্ষাৎকার দিতে না আসায় এ আসনে জাপার প্রার্থী হিসেবে জিএম কাদেরপন্থীদের পছন্দের এস এম ইয়াসিরকে চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান।
এদিকে আজ শনিবার রংপুরের উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে যাচ্ছে বিবাদমান দুই পক্ষ।
এমএস/