ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

স্ট্রোকের ঝুঁকিতে নিরামিষভোজীরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:০৭ পিএম, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ রবিবার

সুস্থ থাকার জন্য যারা নিরামিষকে বেছে নিয়েছেন তারা জানেন কি এর ক্ষতি কতোটা? নিরামিষভোজীদের ডায়েট বা খাদ্যাভ্যাস হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দিলেও বাড়িয়ে দেয় স্ট্রোকের ঝুঁকি। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই পাওয়া গেছে।

ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণাটি ১৮ বছর ধরে ৪৮ হাজার মানুষের উপর পরিচালনা করা হয়। প্রতি এক হাজার জনের মধ্যে নিরামিষভোজীদের মধ্যে করোনারি হৃদরোগীর সংখ্যা মাংসাশীদের তুলনায় ১০ জন করে কম পাওয়া গেছে। কিন্তু স্ট্রোকের ঝুঁকি রয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা তিনজন করে বেশি পাওয়া গেছে।

এপিক-অক্সফোর্ড স্টাডি মূলত একটি দীর্ঘ মেয়াদি গবেষণা প্রকল্প যা দীর্ঘ সময় ধরে মানুষের খাদ্যাভ্যাস এবং স্বাস্থ্য নিয়ে পরীক্ষা চালায় তাদের তথ্য নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে এই গবেষণায়।

১৯৯৩ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অর্ধেকই ছিলেন মাংসাশী। ১৬ হাজারের কিছু বেশি ছিলেন নিরামিষভোজী। আর সাড়ে সাত হাজার অংশগ্রহণকারী জানান যে তারা আহার হিসেবে মাছ খেতেন।

মাংসাশীদের তুলনায় মাছ ভোজীদের মধ্যে সিএইচডি'র ঝুঁকি ১৩ ভাগ কম ছিলো। আর নিরামিষভোজীদের মধ্যে এই হার ২২ ভাগ কম ছিল। কিন্তু যারা উদ্ভিদ ও শাক সবজি খেয়ে জীবন ধারণ করেন বা যারা নিরামিষভোজী, তাদের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি ২০ ভাগ বেশি ছিল।

গবেষকদের ধারণা, ভিটামিন বি১২ এর অভাবের কারণে এই ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে তারা বলেন যে, এর প্রকৃত কারণ খুঁজে পেতে হলে আরো গবেষণার দরকার রয়েছে। এমনও হতে পারে যে, খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে আসলে এর কোন সম্পর্ক নেই। বরং যারা মাংস খায় না তাদের জীবনের অন্যান্য কারণের জন্যই হয়তো এই ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।

ব্রিটিশ ডায়েটিক এসোসিয়েশনের ডা. ফ্রাঙ্কি ফিলিপস বলেন যে, এটা নাও হতে পারে। কারণ এই গবেষণাটি শুধুমাত্র একটি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা মাত্র। তারা শুধু পর্যবেক্ষণ করেছে মানুষ কি খায় এবং তাদেরকে বছরের পর বছর ধরে অনুসরণ করেছে। এটা শুধু সম্পৃক্ততাই জানান দেয়, কারণ বা প্রভাব সম্পর্কে বিশ্লেষণ করে না।

তিনি বলেন, সবচেয়ে ভালো হচ্ছে পরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাস এবং বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়া। মাংসাশীরা সাধারণত বিভিন্ন ধরনের খাবার খায় না। কারণ তারা প্রতিরাতে খাবার হিসেবে মাংসই খায় এবং কোন ধরনের শাক-সবজি খায় না।

২০১০ সালে গবেষকরা আবার অংশগ্রহণকারীদের কাছে গিয়ে তাদের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। তাতে নিরামিষভোজীদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন ঘটেছিল তা পাওয়া যায়। নিরামিষভোজীদের খাবারের পরিধি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তারা এখন মূল ধারার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

ব্রিটিশ জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ‘ইট ওয়েল গাইড’ নামে খাবার সম্পর্কিত একটি নির্দেশিকা দিয়েছে। তাতে আপনি যে ধরনের খাবারই খান না কেন, আপনার খাবারের প্লেটে যে খাবার থাকাটা জরুরি বলে উল্লেখ করা হয়েছে তাহলো-

• দিনে কমপক্ষে ৫ ভাগ ফল এবং শাক-সবজি খাবেন।

• মূল খাবার হিসেবে উচ্চমাত্রায় আঁশ সম্পন্ন এবং শ্বেতসার বহুল খাবার যেমন আলু, রুটি, ভাত কিংবা পাস্তা রাখা উচিত।

• প্রোটিন জাতীয় চর্বিহীন মাংস, মাছ, সামুদ্রিক খাবার, ডাল, তফু কিংবা লবণহীন বাদাম খেতে হবে।

• দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার থাকতে হবে।

• উচ্চমাত্রাযর চর্বিযুক্ত খাবার, চিনি কিংবা লবণ যত কমানো যায় ততই ভালো।

কিন্তু যারা নিরামিষভোজী তাদের নির্দিষ্ট কিছু পুষ্টি গ্রহণ সম্পর্কে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। উদ্ভিদ-জাত খাবার থেকে আয়রন কম পাওয়া যায়। তাই যারা মাংস খান না তাই তাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, তারা যাতে নিয়মিত গমের রুটি, আটা, শুকনো ফল এবং ডাল খান। এছাড়া মস্তিষ্কের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ভিটামিন কোলিন পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে নিরামিষভোজীদের।

এএইচ/