টি-টোয়েন্টি দলে ‘নতুন মুখ’ কে এই মিশু?
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৩৫ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৮:৪০ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার
আফগানিস্তান ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আসন্ন টি-টোয়েন্টি ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচের জন্য দল ঘোষণা করেছে বিসিবি। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) ঘোষিত ১৩ সদস্যের এ দলে চমক হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ইয়াসিন আরাফাত মিশু।
কিন্তু কে এই ইয়াসিন আরাফাত মিশু! যে কিনা ডাক পেয়েছে আফগানিস্তান ও জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ত্রিদেশীয় টি-২০ সিরিজে?
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের রোল মডেল হিসেবেই আখ্যায়িত করা হয় মাশরাফি বিন মর্তুজাকে। বিশেষ করে, তরুণ পেসারদের জন্য তিনিই স্বপ্নের নায়ক। দুই হাঁটুতে সাতটি অস্ত্রোপচারের পরও খেলে যাচ্ছেন নিয়মিত।
মাশরাফিকে আদর্শ মেনে পথ চলা তরুণদের সংখ্যা এ দেশে কম নেই। তবে তাদের মধ্যে থেকে কেউ যেমন অকালে ঝরে পড়েন, তেমনি আবার কেউ নিজের সামর্থ্যের শতভাগ উজাড় করে দিয়ে খেলে যান নিয়মিত। তেমনই একজন পেসারের নাম ইয়াসিন আরাফাত মিশু।
২০ বছর বয়সী এই তরুণ পেসারকেও ইনজুরিতে পড়তে হয়েছে বেশ কয়েকবার। কিন্তু মাশরাফির মতোই ইনজুরি তাকে কখনও পিছু হটতে দেয়নি।
নোয়াখালীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে জন্ম নেয়া মিশুর ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক ছিলো ক্রিকেটের প্রতি। পড়া ফাঁকি দিয়েও ক্রিকেট খেলতে চলে যেতেন মাঠে। মিশুর ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ দেখে তার বাবা-মা'কে সাভারের বিকেএসপিতে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন মিশুর গৃহশিক্ষক।
ওই গৃহশিক্ষকের পরামর্শেই পরবর্তীতে বিকেএসপিতে ভর্তি করা হয় মিশুকে। আর সেখানে ভর্তি হয়েই নিজের জাত চেনান তরুণ এই প্রতিভাবান পেসার। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট দলের হয়ে খেলার সুযোগ এখান থেকেই হয় মিশুর। যেখানে নিজেকে প্রমাণ করে ছোট থেকে লালন করা স্বপ্নের দ্বারপ্রান্তেও চলে যান তিনি।
সুযোগ আসে প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলার। কিন্তু ২০১৮ বিশ্বকাপের ঠিক আগে ইনজুরিতে পড়ে সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায় মিশুর। সে সময়েই হয়তো দাঁতে দাঁত চেপে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, নতুন উদ্যমে ফিরে আসার। ঠিক যেভাবে বারংবার ফিরে এসেছেন টাইগার লিজেন্ড মাশরাফি।
যার সর্বশেষ উদাহরণ দেখা গেছে চলমান ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও (ডিপিএল)। ইনজুরি থেকে ফিরে গাজী গ্রুপের হয়ে খেলা অমিত সম্ভাবনাময় এই তরুণ প্রবল প্রতিপক্ষ আবাহনীকে রীতিমত একাই ধসিয়ে দিয়েছেন। ডিপিএলে গত বছর মার্চে মাত্রই নিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন তিনি। আর সেই ম্যাচেই নিজেকে প্রমাণ করে ছাড়েন মিশু।
মোসাদ্দেক-নাসির-শান্ত-মাশরাফিদের বিপক্ষে ৪০ রানে একাই ৮ উইকেট শিকার করেন এই উঠতি তরুণ। আর তার এই বিধ্বংসী স্পেলে মাত্র ১১৩ রানে গুঁটিয়ে যায় শক্তিশালি আবাহনী। আর এই ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে ৮ উইকেট শিকার করার বিরল রেকর্ড গড়েন ২০ বছর বয়সী এ পেসার।
শুধু তাই নয়, বিশ্ব ক্রিকেটের অষ্টম সেরা বোলিং ফিগারের মালিকও বনে গিয়েছেন ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার এই ডানহাতি পেসার।
এছাড়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেকেই ৫ উইকেট নেয়ার কীর্তিও আছে মিশুর। ২০১৬ সালের ওই ম্যাচে রংপুর বিভাগের বিপক্ষে তিনি প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করেছিলেন ৬৫ রানের বিনিময়ে।
এরপর ২০১৮ সালের জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে ঘোষিত বাংলাদেশের ৩১ সদস্যের প্রাথমিক স্কোয়াডে ছিলেন মিশু। এছাড়া গত মাসে ৩৫ ক্রিকেটারকে নিয়ে চারদিনের যে কন্ডিশনিং ক্যাম্প করেছিল বিসিবি, সেখানেও ছিলেন তিনি।
যদিও টি-টোয়েন্টি দলে মিশুর অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি অবশ্য বেশ চমক হয়েই এসেছে। কারণ এখন পর্যন্ত ঘরোয়া পর্যায়ে কোনও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেননি মিশু।
এর আগে গত জুলাইয়ে একটি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে আফগানিস্তান ‘এ’ দলকে হারায় বাংলাদেশ। যেখানে ‘এ’ দলের হয়ে ৩ উইকেট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন মিশু। এরপর বাংলাদেশ হাইপারফরম্যান্স দলের হয়ে শ্রীলঙ্কা ইমার্জিং দলের বিপক্ষে সিরিজে অবশ্য আশানুরূপ পারফর্ম করতে পারেননি তিনি।
তবে ক্যারিয়ার শুরুর অল্প সময়ের মধ্যেই প্রথম শ্রেণি ও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে মিশু নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর ও সামর্থ্যের প্রমাণ রেখেছেন। তাছাড়া আগামী বছর অনুষ্ঠিত হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তাই সবদিক বিবেচনা করে দারুণ সম্ভাবনাময় এ তরুণকে পরখ করে দেখতে চাইছেন নির্বাচকরা।
দীর্ঘদেহী মিশুর মূল বৈশিষ্ট হলো- উইকেট থেকে বেশ বাউন্স আদায় করে নিতে পারেন তিনি। আর উইকেট থেকে সুবিধা না পেলে তার লক্ষ্য থাকে ব্যাটসম্যানের খেলার ধরন বুঝে ডেলিভারি দিয়ে পরাস্ত করা।
এনএস/