বেনাপোলে ৪৭ বছরেও নেই বিএসটিআই ও বিএসআইআর’র শাখা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:৪৩ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার
দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরের যাত্রা শুরু প্রায় ৪৭ বছর আগে। তবে পথচলার দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও বন্দরটি এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নে পিছিয়ে রয়েছে। বিশেষত খাদ্যদ্রব্যসহ অনেক পণ্যের পরীক্ষণের কোন ব্যবস্থা নেই এ বন্দরে। এতে মারাত্মক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যাহত হচ্ছে শিল্পকারখানায় উৎপাদন প্রক্রিয়া। যার প্রভাব পড়ছে বাজারে ভোক্তারদের ওপর। তবে কিছু কিছু কেমিক্যাল বেনাপোল কাস্টমস হাউজে স্থাপিত ল্যাবে পরীক্ষণ করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, খাদ্য দ্রব্যের কাঁচামাল, কসমেটিকসসহ কিছু পণ্য বন্দরের বাইরে থেকে পণ্যের নমুনা পরীক্ষা করিয়ে আনতে হয়। পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে কখনও কখনও মাসের অধিক সময়ও লেগে যায়। এতে তারা যেমন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির শিকার হন, তেমনি বন্দরে লম্বা সময় পণ্য চালান আটকে থেকে গুণগত মানও নষ্ট হয়। সবচেয়ে বেশি রাজস্বদাতা এ বন্দরে পণ্য পরীক্ষণের নিজস্ব ব্যবস্থার দাবি তুলেছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে জানান, পরীক্ষাগার স্থাপনের বিষয়টি ইতিমধ্যে তারা লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে দেশের স্থলপথে যে পণ্য আমদানি হয় তার ৭০ শতাংশ আসে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে। এ পথে বছরে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়ে থাকে, যা থেকে সরকার প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করে। বন্দরে আমদানি পণ্য খালাসের অন্যতম শর্ত পণ্য পরীক্ষণ।
এ বন্দর দিয়ে সাড়ে তিন শতাধিক ধরনের পণ্য আমদানি হয়। যার মধ্যে খাদ্য দ্রব্যের কাঁচামাল, কসমেটিকস ও শিল্প কারখানার কেমিক্যাল জাতীয় ৫৫টি পণ্য পরীক্ষণ সার্টিফিকেট ছাড়া খালাস করা হয়না। কিন্তু পণ্য পরীক্ষণের ভালো কোনো ব্যবস্থা নেই বেনাপোল বন্দরে। ফলে আমদানি করা খাদ্যদ্রব্য, খাদ্যদ্রব্যের কাঁচামাল, কসমেটিকস ও শিল্প কারখানার কেমিক্যাল বাইরে থেকে পরীক্ষণে মাসের অধিক সময় নষ্ট হয়। এ কারণে অনেক ব্যবসায়ী এ বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
আমদানিকারক গিয়াস উদ্দিন বলেন, বেনাপোল বন্দর দিয়ে যে সব পণ্য ভারত থেকে আমদানি হয় তার বড় একটি অংশ খাদ্যদ্রব্য আর শিশুখাদ্য। বন্দরে পণ্য পরীক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় খুলনা বা ঢাকা থেকে নমুনা পরীক্ষা করাতে ১৫ থেকে ২০ দিন আবার কখনও মাসের অধিক সময় লেগে যায়। এতে দীর্ঘদিন ধরে এসব পণ্য বন্দরে পড়ে থাকায় অনেক সময় মানও নষ্ট হয়ে যায়। পাশাপাশি আমদানি পণ্য বন্দর শেডে বা ট্রাকে রেখে মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় ব্যবসায়ীদের। যার প্রভাব পড়ছে ভোক্তাদের ওপর। তারপরও এসব পণ্য পরীক্ষণে যে টাকা ব্যয় হয় তাতে মাঝে মধ্যে দেখা যায় সরকারি ডিউটির চেয়ে পণ্যের পরীক্ষা করাতে বেশি টাকা চলে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ে সাধারণ মানুষের উপর।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, বন্দরে বিএসটিআই ও বিএসআইআর-এর যে মারাত্মক সমস্যা তা নিরসন হওয়া দরকার। এটা বড় সদস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি পণ্য চালান আমদানি করতে এলসিসহ ধাপে ধাপে বিভিন্ন খরচ আছে। যদি পরীক্ষণ সমস্যায় লম্বা সময় পণ্য চালান আটকে থাকে তবে সব খরচ ব্যবসায়ীর ঘাড়ের ওপর পড়ে। আর যদি সময়মতো কাঁচামাল কারখানায় না পৌঁছায় তবে তা কাজে লাগাতে পারেন না ব্যবসায়ীরা।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের ল্যান্ডপোর্ট সাব কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, পরীক্ষা করাতে হয় এমন অনেক পণ্য ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে রফতানি হয়। কিন্তু সেখানে ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে পণ্যের রিপোর্ট ই-মেইলের মাধ্যমে চলে আসে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য বেনাপোল বন্দরে এ সুবিধা নাই।
চট্রগ্রাম বন্দরে ৫৫টি পণ্যের বাইরে যদি কোন খাদ্যদ্রব্য আমদানি হয় তবে মানুষের খাবারের উপযোগী এমন সার্টিফিকেট দিলে ওই পণ্য পুনরায় আর পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। চট্টগ্রামে যদি ব্যবসায়ীরা পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে এমন সুবিধা পান তবে বেনাপোল বন্দরে সেই সুবিধার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দিক-নির্দেশনার বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।
বেনাপোলের কাস্টম কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী জানান, চট্রগ্রাম বন্দরে বিএসটিআই ও বিএসআইআর’র শাখা আছে। সেখানে ব্যবসায়ীরা সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু বেনাপোল বন্দরে এ সুবিধা না থাকায় ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হয়ে আসছেন। এতে শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় প্রভাব পড়ে বাজারে ভোক্তার ওপর। বেনাপোল বন্দরে কাস্টম হাউজে স্বল্পপরিসরে বিএসটিআই-এর একটি শাখা চালু হয়েছে। তবে বিসিএসআইআর-সহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর শাখাও যাতে দ্রুত স্থাপন হয় তা লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
আই/এসি