হিন্দুরা নাগরিকত্ব পেলেও তাড়ানো হবে মুসলিমদের
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:০৬ এএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ শুক্রবার
চলতি বছরের ৩১ আগস্ট আসামে চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই চরম আতঙ্কে নাগরিকত্ব হারানো প্রায় ১৯ লাখ মানুষ। যার বড় একটা অংশ মুসলিম। বিজেপি নেতাদের হিন্দুত্ববাদী কঠোর মনোভবের কারণে বেশ চিন্তিত তারা। কেননা, তাদেরকে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এদিকে, আসামের পর এবার পশ্চিমবঙ্গেও এনআরসি বা নাগরিক তালিকা করতে চাইছে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। যেখানে প্রায় দুই কোটি মানুষকে নাগরিকত্ব হারাতে হবে বলে আগাম ঘোষণা দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
তার ভাষায়, দুই কোটি বাঙালি মুসলিম এদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। যার এক কোটি পশ্চিমবঙ্গে আর এক কোটি জন্মুসহ গোটা ভারতজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
বিজেপির এমন সিদ্ধান্তে আসামের যুব সংগঠন, ‘সারা আসাম বাঙালি যুব ছাত্র ফেডারেশন’র দাবি, আসামে এনআরসিতে যে ১৯ লাখ মানুষকে বাদ দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে বাঙালি হিন্দুর সংখ্যা ১০ থেকে ১২ লাখ। বাদ পড়াদের মধ্যে বাঙালি মুসলিম বাদ পড়েছেন দেড় থেকে দু’লাখ।
অন্যদিকে, শুরু থেকেই পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি বিরোধী মিছিল, সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচিসহ বেশ আটঘাট বেধেই রাস্তায় নেমেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আর এতেই বিপাকে পড়ে রাজ্য বিজেপির সভাপতি ঘোষণা দিয়েছেন, বাদ পড়াদের মধ্যে সকল হিন্দুকে নাগরিকত্ব দেয়া হবে। তবে বাংলাদেশি মুসলিম ও রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেয়া হবে।
আসামের নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়া হিন্দুদের আশ্বাস দিয়ে বিজেপির এই নেতা বলেন, হিন্দুদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সব বিরোধী এক হলেও এনআরসি কেউ আটকাতে পারবে না।
তিনি বলেন, কাউকে তাড়ানো আমাদের লক্ষ্য না। ভারতের উন্নয়নে বাধা দিতে চায়, আইনশৃঙ্খলায় বাধা দেয়, এখানকার মানুষকে অতিষ্ঠ করে এমন লোকজন এদেশে থাকতে পারবে না। দুই কোটি বাংলাদেশি মুসলিম এদেশে ঢুকেছে বলে জানান তিনি।
এর মধ্যে এক কোটি রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। এক কোটি জম্মু পর্যন্ত চলে গেছে। ওপার বাংলায় অত্যাচারিত-নিপীড়িত হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। কিন্তু বাংলাদেশি মুসলিম আর রোহিঙ্গাদের দেশ থেকে তাড়ানো হবে বলে উল্লেখ করেন বিজেপি নেতা।
এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবারও পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি বিরোধী প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন মমতা। এদিন রাস্তায় নেমে বিজেপি সরকারের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাঙালিদের বাংলা (পশ্চিমবঙ্গ) থেকে উচ্ছেদ করতে চাইছে বিজেপি।
মমতা বলেন, “তার প্রাণ থাকতে তিনি এ রাজ্যে এনআরসি তৈরি করতে দেবেন না। বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে মমতা বলেন, “পারলে দুটো লোকের গায়ে হাত দিয়ে দেখ, এজেন্সি কোথায় থাকে আর মানুষ কোথায় থাকে দেখে নিও ভাল করে”।
আসামে চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা থেকে ১৯ লাখ লোকের নাম বাদ দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আসামে লাখ লাখ পুলিশ দিয়ে সাধারণ মানুষের মুখ বন্ধ করতে পারলেও, এখানে আমাদের মুখ বন্ধ করা অত সহজ হবে না। তুমি দম দম করে পুলিশ আনলে আমরাও পাল্টা দম দম দেব।’’
তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘আমি স্বাধীন দেশের নাগরিক। তারপরও কতবার আমাকে পরাধীন হতে হবে? এখন কেন প্রমাণ দিতে হবে আমি এ দেশের নাগরিক কি না?’’
তৃণমূল নেত্রীর এমন অভিযোগের জবাবে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, আমরা কাউকে তাড়াতে চাই না। বাংলাদেশের মুসলিম ও রোহিঙ্গারা মমতার আশ্রয়ে থাকে। কিন্তু আমরা চাই হিন্দুরা এদেশেই থাকবে।
বিজেপি নেতার এমন কথায় মমতার পাল্টা হুমকি, ‘‘দেখি না, কতজনকে জেলে ঢোকাতে পার! দেখি না কত বড় জেল তৈরি করতে পার! আমি বেঁচে থাকতে তো এনআরসি হতে দেবই না। আমার মৃত্যুর পরেও চার প্রজন্ম তৈরি। তারাও কোনোওভাবেই তোমাদের এনআরসি করতে দেবে না।’’
বিজেপির এমন হঠকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দল, মত নির্বিশেষ সবাইকে এক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বিশেষ করে ছাত্র সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তৃণমুল নেত্রী।
আই/