ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

‘অধিনায়কত্ব’ ইস্যুতে চাপে বাংলাদেশ, চটেছেন সুজন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:৫১ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ শনিবার

বিশ্বকাপের পর থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার নাম ‘অধিনায়কত্ব’। কেননা, বিদায়ের প্রহর গুণছেন ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলনেতা সাকিবও সম্প্রতি জানিয়েছেন, অধিনায়কত্বের কারণে পারফরম্যান্সে অসুবিধা হচ্ছে তার। আর এতেই ফের টপ অব দ্য টপিক-এ সেই অধিনায়কত্ব। 

যদিও মাশরাফির আসন্ন বিদায়ের পর টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির সঙ্গে ওয়ানডেতেও সাকিবের উপরই আস্থা রাখতে চেয়েছিলেন বিসিবিসহ সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি আফগানিস্তানের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত টেস্টে লজ্জাজনক পরাজয়ের পর টেস্ট অধিনায়কের পদ থেকে অব্যাহতি চান সাকিব আল হাসান। এতে নতুন অধিনায়ক কে হবেন- তা নিয়েই শুরু হয় তুমুল জল্পনা কল্পনা। 

এ বিষয়ে মুশফিকুর রহিম জানিয়েছেন- ভবিষ্যতে কখনও অধিনায়ক হতে চান না তিনি। তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও খুব একটা যে ফর্মে আছেন, তা বলা যাচ্ছে না। অন্যদিকে তরুণদের হাতেও দায়িত্ব তুলে দিতে ‘ভয়’ পাচ্ছেন কর্তারা।

যে সব কারণে এবার বিষয়টি নিয়ে রীতিমত ক্ষোভ প্রকাশ করলেন বিসিবি পরিচালক ও জাতীয় দলের সাবেক ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন। জাতীয় দলের বেশ কাছের এই অভিভাবক মনে করেন, দলের দুঃসময়ের জন্য অধিনায়কত্বের কোনও দায় নেই। আর নতুন অধিনায়ক খুঁজতে হলে আস্থা রাখতে হবে তরুণদের উপরই।

সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সুজন বলেন, ‘সাকিব আমাদের জন্য ওয়ান অফ দ্য বেস্ট লিডার। তবে সাকিব নিজেই যদি অধিনায়কত্ব করতে না চায়, তাহলে তো প্রশ্ন আসছেই। ও যেটা বলল- অধিনায়ক না থাকলে ওর পারফর্ম করা আরও সুবিধাজনক হবে। আমরা তো চাইব সাকিব পারফর্ম করুক। বিশ্বকাপে আমাদের যা পারফরম্যান্স, তার অনেকটা সাকিবের একারই অবদান। সেই পারফরম্যান্সের জন্যই সাকিব যদি অধিনায়কত্ব ছাড়তে চায়, তাহলে অবশ্যই এটা ভাববার মত একটা ব্যাপার।’

প্রাক্তন এই টাইগার ক্যাপ্টেন বলেন, ‘আপনারা হয়তো বলতে পারেন, আমাদের অধিনায়ক হবার মত কেউ নেই। তবে এ কথা আমি বিশ্বাস করি না। কাউকে অধিনায়কত্ব দিয়ে তো দেখতে হবে সে যোগ্য কিনা। জাতীয় দলে তো সাকিব ছাড়াও আরও দশজন খেলে থাকে। আমাদের তো কাউকে বেছে নিতে হবে। যদি মনে হয়, তিন ফরম্যাটে তিন অধিনায়ক দরকার তাহলে সেটাই করা উচিৎ। সাকিব যদি না চায়, উপভোগ না করে, তাহলে অবশ্যই বিসিবিকে এ বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে।’

তরুণ নেতৃত্বে আস্থা রাখার উপর জোর দিয়ে সুজন বলেন, ‘মুশফিক-সাকিব যখন অধিনায়ক হয় তখন ওদের বয়সই বা কত ছিল? এখন তো নতুন অনেক খেলোয়াড় আছে, আমরা কেন ভয় পাচ্ছি? তারা অধিনায়কত্ব করতে চাইবে না, তাহলে বাংলাদেশ দল চলবে কীভাবে? 

তিনি আরও বলেন, সাকিব-তামিম-মুশফিক-রিয়াদরা যদি না করতে চায় তাহলে তো জুনিয়র কাউকে দেখতেই হবে। অনেক সময় শুনি পাইপলাইনে খেলোয়াড় নেই। মোসাদ্দেক, লিটন, মিরাজ- যারা এখন খেলছে তারা কিন্তু সর্বশেষ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের খেলোয়াড়। সাকিবরাও অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ছিল। সামনের দিনে হৃদয়, আকবর আলী, তামিমরা আসবে। ওরা তৈরি হচ্ছে। আমি মনে করি, সাকিবরা যদি ২২ বছর বয়সে অধিনায়কত্ব করতে পারে তাহলে আরও অনেক তরুণ ছেলে এখন আছে যাদের আমরা দেখি না। কারণ আমরা এক জায়গাতেই আটকে আছি।’

তরুণ ক্রিকেটারদের সুযোগ দিয়ে তাদের তৈরি করে নেওয়া প্রয়োজন মনে করে সুজন বলেন, ‘কে পারবে, কে পারবে না -এটা তো বলার কিছু নয়। কাউকে না কাউকে দিয়ে তো চেষ্টা করা উচিৎ। দলে অনেক খেলোয়াড় আছে যারা ঘরোয়া বা যুব পর্যায়ে অধিনায়কত্ব করেছে। একজন অধিনায়ক তৈরি করতে তো সময় লাগবে, সহজ হবে না। স্টিভ স্মিথ যখন অস্ট্রেলিয়া দলে সুযোগ পেয়েছিল, তখন সে একাদশে সুযোগ পাওয়ার মতই ছিল না। সাকিব তো আজীবন খেলবে না। একটা সময় অবসর নেবে, খেলা ছাড়বে। তখন আমাদের অধিনায়ক কে হবে?’

অন্যদিকে সিনিয়ররা অধিনায়কত্ব নিতে না চাইলে তাদের উপর চাপ প্রয়োগ না করারও পক্ষে সাবেক এই অধিনায়ক। তার মতে, ‘এখন থেকেই চিন্তাভাবনা করতে হবে। ওরা যদি অধিনায়কত্ব করতে না চায়, বাড়তি চাপ মনে করে, পারফরম্যান্সের জন্য চাপ মনে করে, তাহলে অন্য কাউকে দিয়ে চেষ্টা করুন? তরুণদের মধ্যে দেখতে হবে দলে তার জায়গাটা পাকাপোক্ত কি না। মিরাজ নিয়মিত খেলছে। টেস্টে সাদমান খেলছে। এমনও নয় যে, মাত্র দুই টেস্ট খেলেছে বলে আপনি কাউকে অধিনায়কত্ব দিতে পারবেন না। এটা তো কোথাও লেখা নাই। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে যে অধিনায়কত্ব করছে আকবর আলী, তাকেই অধিনায়ক দিয়ে দিন। যদি এত ঘাটতি থাকে অধিনায়ক খুঁজতে!’

অধিনায়কত্ব নয়, অবকাঠামোগত পরিবর্তন খুব জরুরী উল্লেখ করে খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘এটা নিয়ে আমরা খুব বেশি কথা বলে ফেলি। এমন নয় যে, বাংলাদেশ অধিনায়কের জন্য খেলা জিতছে বা হারছে। অবশ্যই অধিনায়কত্ব গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। দলের বর্তমান পারফরম্যান্সে অধিনায়কত্ব কোনও সমস্যা না। আমাদের ক্রিকেটে অবকাঠামোগত পরিবর্তনটা খুব জরুরী।’

এনএস/