ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

জিএস পদও হারাচ্ছেন রাব্বানী!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:৩৫ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সোমবার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থের কমিশন দাবি, কমিটি নিয়ে বাণিজ্য ও নানা বিতির্কিত কর্মকাণ্ডের দায়ে দেশের অন্যতম বৃহৎ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে পদচ্যুত করা হয়েছে।

এতে করে গোলাম রাব্বানী ডাকসুর জিএস পদে থাকতে পারবেন কি-না, তা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। গতকাল রোববার থেকে আজও সে প্রশ্নই ‘টক অব দ্য ক্যাম্পাসে’ রুপ নিয়েছে। এর উত্তর খুঁজছেন সকল শিক্ষার্থীরা। 

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, একজন ব্যক্তি একটা ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ পদে থেকে যখন নৈতিক স্খলনের দায়ে বহিষ্কার হন, তাহলে একই ব্যক্তি কি করে আরেকটি সংগঠনে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। তাই, নিয়ম অনুযায়ী গোলাম রাব্বানী আর ডাকসুর জিএস পদে থাকতে পারেন না বলে দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) ফাঁস হওয়া এক ফোনালাপে জানা গেছে, জাবি শাখা ছাত্রলীগকে এক কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। এর সঙ্গে তিনি ছাড়াও সংশ্লিষ্ট ছিলেন তার ছেলে, স্বামী, ব্যক্তিগত সচিব ও প্রকল্প পরিচালক। 

ছাত্রলীগের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে জাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের মধ্যে ফোনালাপের ৬ মিনিট ১১ সেকেন্ডের ওই অডিও ইতিমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

কথোপকথনে ছাত্রলীগের কারা কিভাবে কত টাকা পেয়েছে তাও উঠে এসেছে। যা নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা, সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তবে, ছাত্রলীগকে অর্থ প্রদান ও এর সঙ্গে পরিবারের সংশ্লিষ্টতার কথা বরাবরের মত অস্বীকার করে আসছেন জাবির ভিসি। 

এছাড়া ডাকসুর নির্বাচিত কমিটি অর্ধেকেরও বেশি সময় পার করেছে। কিন্তু মেয়াদ পার করলেও এখন পর্যন্ত তাদের অভিষেকই করতে পারেনি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকরি কোনো পদক্ষেপই নিতে পারেনি কেন্দ্রীয় সংসদ।

এগুলোই তাদের সমন্বয়হীনতা এবং ডাকসুর নিষ্ক্রিয়তার বড় দৃষ্টান্ত। এ পরিস্থিতির দায় একে অপরের কাঁধে চাপিয়ে দিচ্ছেন শীর্ষ নেতারা। 

চলতি বছরের ১১ মার্চ নির্বাচনের পর ২৩ মার্চ ডাকসুর প্রথম কার্যকরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর অর্ধেক মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও সমন্বয়হীনতায় আর কোনো সভা হয়নি। ফলে, ডাকসুর প্রতি প্রত্যাশা ও চাহিদা ছিল, তা নূন্যতম পূরণ করতে পারেনি সাংসদ। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নেতাদের মধ্যে শুরু থেকেই সমন্বয়হীনতার কারণেই ডাকসু শিক্ষার্থীদের স্বার্থে তেমন কর্মসূচি নিতে পারেনি। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া, গবেষণা এবং হলে-ক্যাম্পাসে সুষ্ঠুভাবে বসবাসের ক্ষেত্রে কাঙ্খিত ভূমিকা রাখতে পারেনি।

এ অবস্থার মধ্যেই নৈতিক স্খলনের দায়ে ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানীর নিজ সংগঠন থেকে পদত্যাগে বাধ্য হওয়ার ঘটনাটি নতুন বিতর্ক নিয়ে এসেছে।

তাহলে, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী আসলেই কি ডাকসুর জিএস পদ হারাচ্ছেন ছাত্রলীগ থেকে অব্যহতি পাওয়া রাব্বানী! 

এ ব্যাপারে অবশ্য সুস্পষ্ট কিছু বলেননি ডাকসুর সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেছেন, রাব্বানীর বিরুদ্ধে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ থাকলেও, ডাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হবে।

উপাচার্য বলেন, ডাকসু নির্বাচন থেকে শুরু করে, কে কোন পদে থাকতে পারবেন, কিভাবে বিবেচিত হবে কিংবা বহিষ্কার হবে তার সামাগ্রিক রুপ রেখা ডাকসুর গঠনতন্ত্রে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং, গঠনতন্ত্রে যে বিধান আছে, সেভাবেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

ডাকসুর ইতিহাসে এমন পরিস্থিতি আগে কখনো তৈরি হয়নি। ফলে, গঠনতন্ত্রে  এ ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। তবে, দলীয় ফোরামে আলোচনা সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। 
ডাকসুর ১১ পৃষ্ঠার সংবিধান ঘেঁটে দেখা গেছে, নৈতিক স্খলনের দায়ে কোনো নেতাকে অপসারণ বা সরিয়ে দেয়ার কোনো বিধান নেই। তবে এর সর্বশেষ (১৮ নম্বর) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো বিষয় সম্পর্কে এই সংবিধানে উল্লেখ না থাকলে সে বিষয়ে ডাকসুর সভাপতির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

ওই সংবিধানের ৫(এ) নম্বর ধারা অনুযায়ী ভিসি ডাকসুর সভাপতি। এই ধারায় সভাপতির দায়িত্বের একটি অংশে বলা হয়েছে, ডাকসুর বৃহত্তর স্বার্থে কার্যকরি কমিটির যেকোনো সদস্যকে বরখাস্ত করতে পারবেন। এই ধারায় বৃহত্তর স্বার্থে সভাপতিকে ডাকসু ভেঙে দেয়ার ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে। 

তাই বলা যায়, সাবেক এ ছাত্রলীগ নেতা জিএস পদে থাকতে পারবেন কি-না, তা নির্ভর করছে ডাকসুর সভাপতি তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির উপর। সে অনুযায়ী ভিসির হাতে ঝুলছে রাব্বানীর জিএস পদে থাকা-না-থাকা। তিনি যদি মনে করেন, নৈতিক স্খলনের ফলে রাব্বানীর জিএস পদে থাকার কোনো সুযোগ নেই, তাহলে কারো কোনো ক্ষমতা নেই তাকে স্বপদে রাখার। এখন দেখার বিষয়,ডাকসু সভাপতি কি সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন।

আই/এসি