ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

ইতালিতে বাংলাদেশি এক যুবকের সততা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:১২ এএম, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার

রোমের রাস্তায় দুই হাজার ইউরোসহ একটি মানিব্যাগ কুঁড়িয়ে পেয়েছিলেন  বাংলাদেশি তরুণ মুসান রাসেল। সেটি মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়ায় পুরস্কারের প্রস্তাবও সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেন মুসান। এরপর ইতালির গণমাধ্যমে মুসানকে নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা।

এরই মধ্যে ইটালির লা রিপাবলিকা পত্রিকায় মুসানের সাক্ষাৎকার আর ছবি ছাপা হয়েছে। সেখানে তিনি কিভাবে মানিব্যাগ পেলেন এবং ফেরত দেওয়ার পর তার অনুভূতি সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন।

মুসান রাসেল সাত বছর আগে বাংলাদেশ থেকে পাড়ি জমান ইতালীর রোমে। এই রোম শহরের একটি রাস্তায় তিনি একটি লেদার সামগ্রীর একটি দোকান চালান।

গত শুক্রবার তিনি রাস্তায় একটি ওয়ালেট (মানিব্যাগ) পড়ে থাকতে দেখেন। এটি হাতে নিয়ে দেখতে পান ভেতরে অনেকগুলো নোট, ক্রেডিট কার্ড এবং অন্যান্য মূল্যবান কাগজপত্র। এরপর আর কিছু না ভেবেই ওয়ালেটটি নিয়ে তিনি চলে যান নিকটবর্তী পুলিশ স্টেশনে।

এরপর পুলিশ ওয়ালেটের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তার কাছে ওয়ালেটটি ফিরিয়ে দেয়। মুসান রাসেলের সততার দৃষ্টান্তে অভিভূত হয়ে ওয়ালেট মালিক পুরস্কার দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি সবিনয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর এই ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ে ইতালীর গণমাধ্যমে।

লা রিপাবলিকা পত্রিকা তার কাছে জানতে চেয়েছিল, প্রথম যখন তিনি ওয়ালেটটি খুঁজে পান, তখন তিনি কি ভেবেছিলেন।

মুসান বলেন, ওয়ালেটের ভেতরটা দেখে তার মনে হয়েছিল, যিনি এগুলো হারিয়েছেন তিনি নিশ্চয়ই খুবই সমস্যায় আছেন। কেননা এর ভেতরে ছিল কয়েকটি ক্রেডিট কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং আরও কিছু কাগজপত্র। আর টাকা তো ছিলই। কত টাকা বলতে পারবো না, কারণ আমি গুণে দেখিনি। খুব তাড়াতাড়ি এগুলো নিয়ে পুলিশ স্টেশনে গেলাম।

মুসান রাসেল ভালোভাবে ইতালিয়ান ভাষায় কথা বলতে পারেন না। তারপরও তার বক্তব্য পুলিশকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন। ওয়ালেটের মধ্যে অনেকগুলো নোট দেখে পুলিশ অবাকও হয়েছিল। পুলিশের মাধ্যমেই জানতে পারলেন এর ভেতরে দুই হাজার ইউরো ছিল।

ওয়ালেটটি জমা দেয়ার জন্য পুলিশ তাকে ধন্যবাদ জানালো। জবাবে মুসান বললেন, ওয়ালেটটি ঘটনাচক্রে খুঁজে পেয়েছি। কিন্তু এর মালিকের কাছে পৌঁছানোটা আমার কর্তব্য। লেদার ব্যবসা করে সে ভালো আছেন, একথাও জানালেন মুসান।

ওয়ালেটটি যার, তার সঙ্গে যখন দেখা হলো, তখন কী ঘটলো? মুসানের কাছে জানতে চেয়েছিল লা রিপাবলিকা।

মুসান জানান, ওয়ালেটটি পুলিশের কাছে দিয়ে তিনি কাজে ফিরে আসেন। কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশ তাকে ফোন করে। এ সময় পুলিশ জানায়, ওয়ালেটের মালিক একজন ব্যবসায়ী। তিনি মুসানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান।

মুসান বলেন, প্রথমে আমি যেতে চাইনি। কারণ সবাই আমার দিকে মনোযোগ দিক, সেটা আমি চাইনি। তবে শেষপর্যন্ত আমি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। ওই ভদ্রলোক আমার দেখা পেয়ে আসলেই খুশি হয়েছিলেন। আমাকে ধন্যবাদও জানান। 

মুসান আরও বলেন, আমি তাকে বলেছি, এর কোন দরকার ছিল না কারণ জিনিসগুলো প্রকৃত মালিকের কাছে পৌঁছে দেওয়াটা আমার কর্তব্য ছিল। এরপরও তিনি আমাকে পুরস্কার দিতে চেয়েছিলেন, আমি যে পুরস্কার চাই, সেটাই দিতে চেয়েছিলেন।

কেন তিনি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করলেন- জানতে চাইলে মুসান বলেন, এটা কোন সন্মানের ব্যাপার হতো না। আমি বরং তাকে আমার স্টলে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমি খুশি হবো যদি উনি আমার দোকানের কাস্টমার হন।

এএইচ/