ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

যে সব নামাজিদের জন্য ধ্বংস অনিবার্য

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:২২ এএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ শুক্রবার

আল্লাহ তায়ালা বলেন,‘তারপর সে নামাজিদের জন্য ধ্বংস। যারা নিজেদের নামাজের ব্যাপারে গাফিলতি করে।’ (সূরা মাউন : ৪-৫) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় একজন প্রসিদ্ধ মুফাসিসর বলেন, আয়াতের শুরুতে ‘ফা’ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে ‘ফা’ ব্যবহার করার তাৎপর্য হচ্ছে প্রকাশ্যে যারা আখিরাত অস্বীকার করে তাদের অবস্থা তুমি এখনই শুনলে আর এখন যারা নামাজ পড়ে অর্থাৎ মুসলমানদের সাথে শামিল মুনাফিকদের অবস্থাটা একবার দেখো।

তারা বাহ্যত মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও আখিরাতকে মিথ্যা মনে করে, তাই দেখো তারা নিজেদের জন্য কেমন ধ্বংসের সরঞ্জাম তৈরি করছে।

ধ্বংসের কাতারে আছে সেই মুসল্লি কারা? এখানে ‘ফি সালাতিহিম’বলা হয়নি। যদি ‘ফি সালাতিহিম’বলা হতো, তাহলে এর মানে হতো, নিজের নামাজে ভুলে যায়। কিন্তু নামাজ পড়তে পড়তে ভুলে যাওয়া ইসলামী শরিয়তে নিফাক তো দূরের কথা, গোনাহের পর্যায়েও পড়ে না। বরং এটা আদতে কোনো দোষ বা পাকড়াওযোগ্য কোনো অপরাধও নয়। বরং এখানে ‘আন সালাতিহিম’ বলা হয়েছে। এর মানে হচ্ছে তারা নিজেদের নামাজ থেকে গাফেল এবং এরাই ধ্বংসকাতরতার দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে।
এই মুসল্লিরা হলো

যাদের কাছে নামাজ পড়া ও না পড়া উভয়টিরই গুরুত্ব এক ও অভিন্ন। কখনো তারা নামাজ পড়ে আবার কখনো পড়ে না। যখন নামাজ পড়ে, নামাজের আসল সময় থেকে পিছিয়ে যায় এবং সময় যখন একেবারে শেষ হয়ে আসে, তখন উঠে গিয়ে চারটি ঠোকর দিয়ে আসে।

নামাজের জন্য ওঠে ঠিকই কিন্তু একবারে যেন উঠতে মন চায় না এমনভাবে ওঠে এবং নামাজ পড়ে নেয় কিন্তু মনের দিক থেকে কোনো সাড়া পায় না। যেন কোনো আপদ তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। নামাজের চেয়ে কাজের গুরুত্ব বেশি দেয়া। নামাজের সময় চলে যাচ্ছে তিনি কাজে নিমজ্জিত আছেন।

নামাজে দাঁড়িয়ে কাপড় নিয়ে খেলা করে, হাই তুলে, আল্লাহর স্মরণ সামান্যতম তাদের মধ্যে থাকে না। পুরো নামাজের মধ্যে তাদের এ অনুভূতি থাকে না যে, তারা নামাজ পড়ছে। নামাজের মধ্যে পঠিত বাক্যগুলো তোতাপাখির মতো আওড়ে যায়। কখন কী পড়ছে সেদিকে তাদের কোনো খেয়াল থাকে না। ফলে নামাজ পড়তে থাকে কিন্তু মন চলে যায় দূরে, বহু দূরে। তাড়াহুড়া করে এমনভাবে নামাজ পড়ে নেয়, যাতে কিয়াম, রুকু ও সিজদা কোনোটাই ঠিক হয় না। কেননা, কোনো প্রকারে নামাজ পড়ার ভান করে দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করে।

কোনো জায়গায় আটকা পড়েছে, চলো এ ফাঁকে নামাজ সেরে নেই। কিন্তু তাদের জীবনে এ ইবাদতের কোনো মর্যাদা নেই।
নামাজের সময় এসে গেলে এটা যে নামাজের সময় এ অনুভূতিই তাদের মধ্যে থাকে না। মুয়াজ্জিনের আওয়াজ কানে এলে তিনি কিসের আহ্বান জানাচ্ছেন, কাকে এবং কেন জানাচ্ছেন এ কথাটা একবারো তারা চিন্তা করে না।

এগুলোই আখিরাতের প্রতি ঈমান না রাখার আলামত। কারণ ইসলামের এ তথাকথিত দাবিদাররা নামাজ পড়লে কোনো পুরস্কার পাবে বলে মনে করে না এবং না পড়লে তাদের কপালে শাস্তি ভোগ আছে এ কথা বিশ্বাস করে না। এ কারণে তারা এ কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করে। এ জন্য হজরত আনাস রা: ও হজরত আতা ইবনে দিনার বলেন ‘আল্লাহর শোকর তিনি ‘ফি সালাতিহিম’বলেননি, বরং বলেছেন ‘আন সালাতিহিম সাহুন।’অর্থাৎ আমরা নামাজে ভুল করি ঠিকই কিন্তু নামাজ থেকে গাফেল হই না। এ জন্য আমরা মুনাফিকদের অন্তর্ভূক্ত হবো না।

কুরআন মজিদে মুনাফিকদের এ অবস্থাটি এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে ‘তারা যখনই নামাজে আসে অবসাদগ্রস্তের মতো আসে এবং যখনই আল্লাহর পথে খরচ করে অনিচ্ছাকৃতভাবে করে।’(সূরা তাওবাহ : ৫৪)

রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন,‘এটা মুনাফিকের নামাজ, এটা মুনাফিকের নামাজ, এটা মুনাফিকের নামাজ। সে আসরের সময় বসে সূর্য দেখতে থাকে। এমনকি সেটা শয়তানের দু’টো শিংয়ের মাঝখানে পৌঁছে যায়। (অর্থাৎ সূর্যাস্তের সময় নিকটবর্তী হয়) তখন সে উঠে চারটে ঠোকর মেরে নেয়। তাতে আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করা হয়।’ (বুখারি, মুসলিম ও মুসনাদে আহমাদ)

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা যখন নামাজের জন্য ওঠে, আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে শৈথিল্য সহকারে নিছক লোকদেখানোর জন্য ওঠে এবং আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে।’(সূরা নিসা : ১৪২)

নবী সা:-এর জামানায় কোনো ব্যক্তি নিয়মিত নামাজ না পড়ে মুসলমানদের দলের অন্তর্ভুক্ত হতে পারত না। আর যদি সে অনবরত কয়েকবার জামায়াতে গরহাজির থাকত, তাহলে ধরে নেয়া হতো সে মুসলমান নয়। তাই বড় কট্টর মুনাফিকরাও সে যুগে পাঁচ ওয়াক্ত মসজিদে হাজিরা দিত। কারণ এ ছাড়া মুসলমানদের দলে অন্তর্ভুক্ত থাকার আর দ্বিতীয় কোনো পথ ছিল না। 

কিন্তু তাদের অবস্থা ছিল এ রকম যে, আজানের আওয়াজ তার কানে আসতেই মুনাফিকদের যেন জান বেরিয়ে যেত। মন চাইত না, তবু নেহাত দায়ে ঠেকে তারা উঠত। তাদের মসজিদে আসার ধরন দেখে পরিষ্কার বোঝা যেত যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তারা আসছে না, বরং অনিচ্ছায় নিজেদের টেনে টেনে আনছে।

জামায়াত শেষ হওয়ার পর এমনভাবে মসজিদ থেকে পালাত যেন মনে হতো কয়েদিরা বন্দিশালা থেকে মুক্তি পেয়েছে। তাদের ওঠাবসা, চলাফেরা তথা প্রতিটি পদক্ষেপ সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিত যে, আল্লাহর জিকিরের প্রতি তাদের বিন্দুমাও মানসিক টান ও আগ্রহ নেই। সুতরাং সালাতে আমাদের অবস্থাও যদি তাদের মতো হয়, তাহলে আমাদের ধ্বংস অনিবার্য হয়ে উঠে। পৃথিবীজুড়ে আমাদের দুরবস্থার প্রধান কারণ সালাত।


টিআর/