দেশে ৩ কোটি ২৪ লাখ পরিবারের নিজস্ব বাড়ি আছে: বিবিএস
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:১১ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সোমবার
সারাদেশে নিজের বাড়ি আছে ৩ কোটি ২৪ লাখ ৬৯ হাজার পরিবারের। ভাড়া বাড়িতে থাকেন ৪৬ লাখ ২০ হাজার, ভাড়া ছাড়াই বাড়িতে বসবাস করেন সাড়ে ৬ লাখ পরিবার। সম্প্রতি এমন তথ্যই উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁও পরিসংখ্যান ভবনে ‘সার্ভে অন ওকুপেইড রেসিডেন্সিয়াল হাউজেজ এন্ড রিয়েল এস্টেট সারভাইস ২০১৮’ এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বিকাশ কুমার দাস এবং সাইফুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক কৃষ্ণা গায়েন।
জরিপ থেকে তৈরি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের মোট বাড়ির মধ্যে ৮৫ দশমিক ৮২ শতাংশ পরিবারের নিজের বাড়ি আছে। ভাড়া বাড়িতে থাকেন ১২ দশমিক ২১ শতাংশ পরিবার ও ভাড়া ছাড়াই বাড়িতে থাকেন ১ দশমিক ৭১ শতাংশ। এছাড়া অন্যান্যভাবে বাড়িতে থাকেন এক লাখ পরিবার। সব মিলিয়ে জিডিপিতে আবাসন খাতের অবদান এখন ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বহুতল ভবনের সংখ্যা ১৮ লাখ ৫০ হাজার (পাচ তলার উপরে)। পাঁচ তলার নিচে ৩৭ লাখ ৯০ হাজার। সেমি পাকা এক কোটি ১৮ লাখ ৬০ হাজার। কাঁচা ২ কোটি ৯ হাজার এবং ঝুপরি ২ লাখ ৫০ হাজার। বসবাসের ঘরের গড় আয়তন ৪২৫ বর্গফুট।
আবাসন খাতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভাড়া বাবদ আয় ছিল ৮১ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। যা পরের অর্থবছর বেড়ে দাঁড়ায় ৮৯ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এক বছরে এক হাতে মূল্য সংযোজন ৭০ হাজার ২০৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। এই হিসাবে বাজার মূল্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ২১ শতাংশ।
আবাসন খাতে ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৪১৫ জন কাজে নিয়োজিত আছেন। শ্রমিকদের ৩১৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা বেতন হিসাবে ও ৫৩৪ কোটি টাকা অন্যান্য পাওনা বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে। দেশে মোট ৫৩ লাখ ২০ হাজার বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে, এসব ভবনে ৩১ দশমিক ২১ ভাগ মালিক নিজেই ব্যবহার করে থাকেন। পজিশন বিক্রি ২ দশমিক ১২ শতাংশ ভবনে। আর ভাড়া দেওয়া হয়ে থাকে ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ ভবন।
অনাবাসিক ভবনে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪৮ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা ভাড়া বাবদ আয় হয়েছে যা পরের বছর দাঁড়ায় ৫৪ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। সংস্কার ব্যয় বাদে এক হাতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪৪ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা মূল্য সংযোজন হয়েছে। ১১ দশমিক ২০ শতাংশ বেড়ে পরের অর্থবছরে এর আকার দাঁড়ায় ৪৯ হাজার ৯৮১ কোটি টাকায়।
এদিকে দেশে নির্মাণ খাতে ৩ হাজার ১৩২ প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিএস। যার ৩৪ দশমিক ২৯ শতাংশ রিহ্যাব ও ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের (বিএলডিএ) সদস্য। নির্মাণ খাতে মোট এক লাখ ৭২ হাজার ৩৯২ শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। একহাতে মোট উৎপাদন ২০১৫ -১৬ অর্থবছরে ছিল ১৬ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা, যা পরের বছর দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা।
একই সময়ে মূল্যসংযোজন ১৪ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা থেকে ১০ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেড়ে দাড়িয়েছে ১৫ হাজার ৬২৩ কোটি টাকায়।
আবাসিক, বাণিজ্যিক ও নির্মাণ মিলিয়ে ৩ উপখাতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক লাখ ৪১ হাজার ৫৭৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা মূল্য সংযোজন হয়েছে। আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল এক লাখ ২৯ হাজার ৩১১ কোটি ১০ লাখ টাকা। এক বছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, রাষ্ট্রের উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার পরিসংখ্যান ব্যুরো। সরকারের নীতি নির্ধারণে সঠিক তথ্য এবং উপাত্ত উপস্থাপনার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে বিবিএসের কর্মীরা।
বিকাশ কিশোর দাস বলেন, এ প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে বাসার আকার যত বড় ভাড়া তুলনামূলক ততো কম। এছাড়া ছোট বাসার ভাড়া গুণতে হচ্ছে বেশি। সেই সঙ্গে বস্তিতে যারা থাকছেন তাদের আবাসিক সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও ভাড়া দিতে হচ্ছে বেশি। যে পরিবেশে বাস করুক না কেন মানুষের আয়ের ৫০ ভাগই যাচ্ছে বাড়ি ভাড়া দিতেই। অন্যদিকে যারা বাড়ির মালিক তারা যে পরিমাণ বিনিয়োগ করেন সে পরিমাণ লাভ পাচ্ছেন না।
বিবিএসের মহাপরিচালক ড. কৃষ্ণা গায়েন বলেন, আমাদের জরিপে উঠে এসেছে ছোট বাসায় ভাড়া বেশি। অন্যদিকে বড় বাড়িতে তুলনামূলক ভাড়া কম। এছাড়া এখনও ভাড়া বাসার চেয়ে নিজের বসত বাড়ির সংখ্যাই বেশি। ফুটপাতে যারা থাকে তাদেরকে বসতবাড়ির আওতায় আনতে হবে। সামনের দিনে এ ধরণের জরিপ নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এমনটি আশা করেন মহাপরিচালক।
আরকে//