চিকিৎসক সংকটে অপারেশন হচ্ছে না মরিয়মের
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:৩৪ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৩:৩৫ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার
যে বয়সে অন্য মেয়েদের সঙ্গে হেসে খেলে স্কুলে যাওয়ার কথা, সে বয়সে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে মরিয়ম। মরিয়ম (১৫) গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ বিএম উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা মোমিন একজন হতদরিদ্র কৃষক। এই মেধাবী ছাত্রী দুই বছর বয়সে অগ্নিদগ্ধ হয়। ওই সময় আগুনে তার শরীরের ৫৫ ভাগ পুড়ে যায়।
প্রাথমিক চিকিৎসায় সুস্থ হলেও মাঝে মাঝে নানা সমস্যা দেখা দেয় মরিয়মের শরীরে। আগুনে পুড়ে যাওয়ায় তার দুটি হাত শরীরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ফলে হাত দুটি আলাদা করার জন্য দুইবার তার শরীরে অস্ত্রপচার করা হয়। ডাক্তার বলেছেন আরও চারবার তার শরীরে অস্ত্রোপচার করতে হবে।
গতকাল সোমবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বেডে শুয়ে আহাজারি করছে অসহায় মরিয়ম।
মরিয়ম জানায়, আমার সামনে এসএসসি পরীক্ষা। অসুস্থ থাকায় নবম শ্রেণির প্রথম সাময়িক পরীক্ষা দিতে পারিনি। সারাক্ষণ হাসাপাতালের বেডে শুয়ে থাকতে আর ভালো লাগে না। খুব কষ্ট হয় আমার।
আবেগতাড়িত হয়ে মরিয়ম বলে, আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আমি সুস্থ জীবন ফিরে পেতে চাই। মন দিয়ে পড়াশোনা করতে চাই। বন্ধুদের সঙ্গে হাসিখুশিভাবে মিশতে চাই। পড়াশুনা শেষে ভাল চাকরি নিয়ে মানুষের সেবা করতে চাই। তবে দুঃখের বিষয় হলো গত চার মাস ধরে হাসপাতালের বেডে পড়ে আসি। ডাক্তার বার বার অপারেশনের তারিখ দেয়। সেই তারিখে অপারেশনের খোঁজ নিতে গেলে এ্যানেসথেসিয়া বা চিকিৎসক সংকটের কথা বলে ডাক্তার।
এ বিষয়ে মরিয়মের মা মুরশেদা জানান, মেয়ের বয়স যখন দুই বছর, তখন হারিকেন থেকে আগুন লেগে দগ্ধ হয় সে। অভাবের সংসারে ভালোভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি। প্রাথমিক চিকিৎসায় মরিয়ম সুস্থ হলেও স্থায়ীভাবে ভাল ছিল না। ফলে স্থানীয় ডাক্তারের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। এদিকে অভাবের সংসারে যেখানে ঠিক মতো খাবার জোটে না, সেখানে কিভাবে তারা ঢাকায় মেয়ের চিকিৎসা করাবে এ চিন্তায় দিশেহারা মরিয়মের পরিবার।
শুধু মরিয়ম নয়, ঢাকার বাইরে থেকে মরিয়মের মতো অপারেশনের জন্য ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে প্রতিদিনই শত শত রোগী ভর্তি হয়। আর প্রতিদিন অপারেশন হয় মাত্র ৪ থেকে ৫ জনের। এ অন্যতম কারণ এ্যানেসথেসিয়া ও চিকিৎসক সংকট। যা কোনভাবেই সমাধান হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক (প্লাষ্টিক সার্জারী) ডা. কৌশিক মল্লিক একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, বহির্বিভাগে রোগী কোনো কোনো দিন ৪০০ থেকে ৫০০ জন হয়। এতে রোগী দেখতেই হিমশিম খেতে হয়। যে চিকিৎসক রয়েছে তা দিয়ে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ জনকে অপারেশন করা হলেও প্রতিদিন সারাদেশ অপারেশনের জন্য ১৫০ থেকে ২০০ রোগী ভর্তি হয়। যে কারণে নির্ধারিত তারিখে অপারেশন করা যাচ্ছে না। এছাড়াও এ্যানেসথেসিয়ার সংকট তো রয়েছেই।
ডা. কৌশিক মল্লিক বলেন, নতুন চিকিৎসক দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। তবে তেমন কোনো লাভ হয়নি। দুই থেকে তিনদিন অপারেশন করতে বাইরে থেকে কিছু চিকিৎসক নিয়ে আনা হয়। এখন আসা বন্ধ হয়ে গেছে। যে কারণে নতুন সংকট তৈরি হয়েছে। আমরা বার বার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেও কোনো সমাধান মিলছে না। এসব রোগী নিয়ে বিপদে আছি। তবে আমাদের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। আমরা সাধ্যমতো রোগীদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
মরিয়মের বাবা মোমিন বলেন, এ পর্যন্ত মেয়ের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা ব্যয় করেছি। খেয়ে না খেয়ে মেয়ের চিকিৎসা করেছি। এখন ঢাকায় চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য আমার নেই।
মা মুরশেদা বলেন, আমরা গরিব মানুষ, তাই মেয়েটার চিকিৎসা করাতে পারছি না। নিয়মিত ওষুধ লাগে। এসব ওষুধ কিনতে যে টাকা লাগে সেটার যোগান দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।
এ সময় অসুস্থ মরিয়মের জন্য তার মা বিত্তবানদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। মরিয়ম বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল বার্ন ইউনিটে ৬ তলায় শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে। তার একটাই আকুতি সে সুস্থ হয়ে অন্যদের মতো স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করতে চায়।
টিআর/