ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

যেমন চলছে মফস্বল সাংবাদিকতা

বেলায়েত বাবলু

প্রকাশিত : ০৮:২১ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৮:২৭ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার

মফস্বলে যারা সাংবাদিকতা করেন তারা একেকজন অনেক প্রতিভাবান এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ তাদের সব বিষয়ের উপর সংবাদ তৈরী করে ঢাকায় পাঠাতে হয়।

প্রতিভাবান এসকল সংবাদ কর্মীদের জীবন যাপনের চিত্র যদি ঢাকার কর্তা ব্যক্তিরা দেখতে পেতেন তাহলে তারা মফস্বলের ব্যাপারে আরো উদার হতেন বলে মনে করি। এখন বাজারে আসা নতুন পত্রিকার প্রতিনিধি হতে গেলে অথবা ভালো মানের একটি দৈনিকের প্রতিনিধি হতে গেলে কতো বেশী বিজ্ঞাপন  দিতে পারবে তার উপর নির্ভর করে মফস্বলের এক সংবাদ কর্মীর ভাগ্য। 

যোগ্যতার মানদন্ডে সংবাদ লেখার অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য না দিয়ে প্রাধান্য দেয়া হয় বিজ্ঞাপন পাঠানোর বিষয়টিকে। অনেক পত্রিকা কর্তৃপক্ষ আবেদনপত্র হাতে পেয়েই জানিয়ে দেন পারলে ঢাকায় আসেন আর না আসলেও সমস্যা নাই, আপনি এখন থেকে আমাদের ব্যুরো প্রধান অথবা জেলা কিংবা উপজেলা প্রতিনিধি। বিজ্ঞাপন পাঠাতে শুরু করেন, আইডি কার্ড পাঠিয়ে দেবো।  

এখন কোন কোন পত্রিকা থেকে ফোন করে বলা হয় ওমুক প্রতিষ্ঠানের একটা বড় বিজ্ঞাপন অমুক পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বিজ্ঞাপন চান, প্রয়োজনে সম্পাদক সাহেবকে মোবাইল ফোনে ধরিয়ে দেবেন। এসকল অনেক প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে একটা গ্যারান্টি দিতে পারি তারা এক জেলায় দশজনকে আইডি কার্ড দিলেও কোন দিন নিয়োগ পত্র দিবেন না কাউকে। 

জাতীয় পর্যায়ে স্বনামধন্য অনেক পত্রিকাও নিয়োগ পত্র দেন মাত্র ছয় মাসের জন্য। যাতে ওই ছয় মাসটাকে ধরা হয় শিক্ষানবীশ কাল হিসেবে। ওই অস্থায়ী নিয়োগপত্রে এও উল্লেখ করা হয় শিক্ষানবীশ কাল ভালোভাবে অতিক্রান্ত হলে স্থায়ী নিয়োগ পত্র দেয়া হবে। স্থায়ী এ পত্র কতোজন মফস্বল সংবাদকর্মীর ভাগ্যে জুটেছে তা আমার জানা নেই। 

জাতীয় অনেক পত্রিকা আছে যারা নিউজের ব্যাপারে কখনো কোন তাগিদ না দিলেও প্রতিনিয়ত বিজ্ঞাপনের জন্য তাগিদ দিয়ে থাকেন। কোন বেতন না দেয়া অনেক পত্রিকা আছে যারা বিজ্ঞাপনের চেক হাতে পেলে তাদের প্রতিনিধিকে ৩০ থেকে ৫০ ভাগ পর্যন্ত কমিশন পাঠান, এটা সত্য। তবে মফস্বলে থেকে মাসে কতগুলো বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করা সম্ভব তার খোঁজ কেউ রাখেনা বা রাখতে চাননা। বলতে দ্বিধা নেই আজকে সাংবাদিকতার নীতি নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ মফস্বলের নামধারী সংবাদ কর্মীরাই দিয়েছেন। কারন বিজ্ঞাপন সংগ্রহে থাকা এসকল কর্মীরা খবরের ব্যাপারে কোন সচেতনই না। এদের অনেকেই আছেন যারা অন্যের কাছ থেকে ধার করা নিউজ পাঠিয়ে নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে সবর্ত্র জাহির করে। 

সবচেয়ে করুন অবস্থা ইংরেজী পত্রিকার। বাংলায় ভালভাবে লিখতে না পারা অনেককেই দেখা যায় ইংরেজী পত্রিকার প্রতিনিধি। তারা ভালভাবে ইংরেজীর উচ্চারণ করতে না পারলেও  নিজেকে ওমুক ডেইলির প্রতিনিধি পরিচয় দেন। মূলত এরা প্রতিনিধি ঠিকই তবে সাংবাদিক নামের আড়ালে বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি। মফস্বলে যারা সাংবাদিকতা করেন তারা একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিনিধির নামের আড়ালে বিজ্ঞাপন প্রতিনিধির কাজ করেন। অনেক ইংরেজি পত্রিকা দেশে পাঠক তৈরী করতে পারলেও তারা ইংরেজীতে কাজ করতে পারে সেইরকম সাংবাদিক সৃষ্টি করতে পারেননি। 

মফস্বলে যারা নিজেদের ইংরেজী দৈনিকের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেন তাদের বেশীরভাগই অন্যের কাছ থেকে ধার করা বাংলাতে তৈরী খবর ঢাকায় পাঠিয়ে থাকেন। পরে সেগুলো ইংরেজীতে তৈরীর পর প্রকাশ করা হয়। আসলে সারাদেশের মফস্বল এলাকার সাংবাদিকতার চিত্র প্রায় এক। এখানকার সময়ে অনেক চ্যানেল ও পত্রিকার মালিকেরা মফস্বল এলাকার সংবাদকর্মীদের বেতন দেন কিনা অথবা তাদের আদৌ সংবাদকর্মী হিসেবে মূল্যায়িত করেন কিনা তা তারাই ভালো জানেন। 

সাংবাদিকতা বিশেষ করে মফস্বল এলাকার সাংবাদিকতা এখন কি পর্যায়ে আছে তা বোধ করি কম বেশী সবাই ভালো জানেন। সরকার সাংবাদিকদের জীবন মান উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করলেও তা কোন কাজে আসবেনা যদি যথাযথ দায়িত্বশীলদের বোধোদয় না হয়। এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে একসময় সাংবাদিকদের যেমন মান সন্মান নিয়ে চলা দায় হবে আর দুঃস্থ সাংবাদিকদের খাতায় নাম লিখিয়ে শেষ বয়সে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে চলতে চলতে পরিবারের সদস্যদের অথৈ সাগরে ভাসিয়ে এক সময় পরপারে পাড়ি জমাতে হবে।

এসি