ঢাকা, শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১ ১৪৩১

শার্শায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৩৬ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৮:৩৭ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার

বাঙালি সনাতন ধর্মবিশ্বাসীদের সবচেয়ে বড় সার্বজনীন ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আশ্বিনের মাঝামাঝিতে শরৎ শুভ্রতায় চারিদিকে শুধু সাজ সাজ রবে উৎসবের আমেজ। শরতের নীল-সাদা আকাশ, ভোরের আবছা কুয়াশা, শোভা পাচ্ছে কাশফুল আর বাতাসে শেফালী ফুলের ঘ্রাণ। 

প্রকৃতির এই রূপের মোহনীয় মুহূর্তে জানান, দিচ্ছে অশুভনাশিনী আনন্দময়ী দেবী দূর্গার আগমনী বার্তা। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্যে দিয়ে ঢাক-ঢোল আর কাঁসার বাদ্যে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। দেবীর আগমনকে ঘিরে তাই ব্যস্ত যশোরের বেনাপোল ও শার্শার প্রতিমা কারিগরেরা। প্রতিমা তৈরি দেখতে মন্দির ও মন্ডপেও আসছে অনেকেই।

বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে,নানা ধর্মীয় মাঙ্গলিক আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আগামী ৩ অক্টোবর বিকেল ৫টায় পঞ্চমীতে দেবীর বোধন, ৪ অক্টোবর ষষ্টাদিকল্পারম্ভে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস, ৫ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ৬ অক্টোবর মহাস্টমী, ৭ অক্টোবর মহানবমী, ৮ অক্টোবর দশমী পূজা সমাপন ও বিসর্জন। শাস্ত্র মতে, এবছর দেবী দূর্গা পিত্রালয়ে আসছেন ঘোটক বা ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে আর বিদায় নেবেন একইভাবে।

যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানা ও শার্শা উপজেলায় এ বছর ২৯টি মন্দির ও মন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।শারদীয় দুর্গোৎসব আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। এর মধ্যে বেশির ভাগ মন্ডপে দূর্গা প্রতিমা তৈরির কাজও প্রায় সমাপ্ত। প্রতীমায় রঙ তুলির আঁচড়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন ভাস্কর শিল্পীরা। অনেক জায়গায় ডেকারেটরের কাজও চলছে।শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে মত বিনিময় সভাও করছেন উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটি।সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।পূজার বাজারে কেনাকাটার ধুম পড়েছে। শার্শায় ১৯টি ও বেনাপোল পোর্ট থানায় ১০টি দৃষ্টি নন্দন পূজামন্ডপে হিন্দু ধর্মের বড় ধর্মীয় পূজা অনুষ্ঠিত হবে।পূজামন্ডপে যাতে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে লক্ষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক পূজামন্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সাদা পোষাকধারী পুলিশসহ টহল পুলিশ,আনসার ও গ্রাম্য পুলিশ মোতায়নের পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ নিরাপত্তা দল দায়িত্ব পালন করবেন। অশুভ শক্তি ও অসুর শক্তির বিনাশ হবে। পৃথিবীর সুন্দর ও স্বাশত সুন্দরের জয় হবে এমনটায় আশা করছেন সনাতন ধর্মালম্বিরা। 

যশোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শার্শা উপজেলার সভাপতি শ্রী বৈদ্যনাথ দাস বলেন, বেনাপোল পৌরসভায় ৪টি মন্ডপসহ এবছর শার্শা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ২৯টি মন্ডপে সাড়ম্বরপূর্ণ পূজা উদযাপন হবে। প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে অনেক মন্ডপে এবং রঙ তুলির আঁচড় শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে। সুন্দরভাবে পূজা অনুষ্ঠানের লক্ষে আমরা প্রশাসনসহ সকলের সাথে মতবিনিময় করেছি। মন্ডপগুলোতে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী কাজ করবে।তিনি জানান, দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি ভালো থাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে কোন ধরনের শঙ্কা নেই।

বেনাপোলের পুটখালি মন্দিরের সভাপতি দেবব্রত হালদার জানান, এ বছর যশোর জেলার মধ্যে সব থেকে বেশি প্রতিমা তৈরী করেছি আমরা। আমাদের মন্ডপে সর্বোচ্চ ২১০টি প্রতিমা বসানো হয়েছে। গত বছর একই মন্দিরে ১০১টি দূর্গা প্রতিমা তৈরী করে জেলার মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলাম আমরা। তার ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য এবার ২১০টি প্রতিমা বানিয়েছি পূজা উদযাপন কমিটি।

বেনাপোল নামাচার্য শ্রী শ্রী ব্রহ্ম হরিদাস ঠাকুর পাটবাড়ি আশ্রমে পূজা মন্দিরের ভাস্কর শিল্পী সাতক্ষীরার কালিগজ্ঞ থানার কুমারখালি গ্রামের কানাই লাল সরকার জানান, এবছর বেনাপোলসহ বড় ৪টি মন্দিরে প্রতীমা তৈরির অর্ডার পেয়েছি। ৮ জন কর্মচারীর সহযোগিতায় প্রতীমা তৈরির কাজ পুরোদমে চলছে। কাঁদা মাটির কাজ শেষে এখন চলছে রঙ তুলির কাজ। সময় মত আয়োজকদের হাতে প্রতীমা তুলে দিতে দিনরাত পরিশ্রম করছি।

শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আতাউর রহমান ও বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন খান জানান, শার্শা ও বেনাপোল পোর্ট থানার কোন মন্দিরই ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তারপরেও সব মন্দিরগুলোকে আমরা নিরাপত্তার বেষ্টনী করে রাখব। ষষ্ঠী থেকে বিসর্জন পর্যন্ত মন্দিরের ভিতর বা আশেপাশে কোনো ব্যাগ বা অবৈধ জিনিসপত্র নিয়ে কেউ ঢুকতে না পারে তার জন্য দেহ তল্লাশির ব্যবস্থা থাকবে। পূজা চলাকালীন মন্ডপগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে। শারদীয় দুর্গা পুজা উদযাপনে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। যাতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে জন্য কঠোর অবস্থানে থাকবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুলক কুমার মন্ডল জানান,শার্শা উপজেলা ও বেনাপোল পোর্ট থানায় এবার ২৯টি মন্ডপে সার্বজনীন দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।মন্ডপগুলোতে ৩ স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ বিভাগ সার্বক্ষণিক তৎপর আছে। সাথে সাথে আনসার, ভিডিপি ও গ্রাম পুলিশ দায়িত্বে থাকবে। টহল পুলিশ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। শান্তিপূর্ণ ভাবে পূজা উদযাপনের লক্ষে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পূজা উৎসবের আগে কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ এ নিয়ে আমরা কাজ করছি বলে জানালেন তিনি।
কেআই/